আপনি যদি একজন শেফ হয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান, তবে আপনার পরিকল্পনাটি অত্যন্ত প্রশংসাযোগ্য। কারণ শেফ একটি রোমাঞ্চকর পেশা। এই পেশার মাধ্যমে আপনি আপনাকে উপস্থাপন করতে পারবেন সারা বিশ্বের কাছে। আর এ পেশার মাধ্যমে খুব সহজেই গড়তে পারবেন আপনার উজ্জ্বল ক্যারিয়ার। ঢাকার গুলশানে অবস্থিত ফিরেস্তা রেস্টুরেন্টের এক্সিকিউটিভ শেফ সবুজ মোল্লা এ পেশার ক্যারিয়ারের সুযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রবল ইচ্ছা শক্তি আর একটু অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলে শেফ পেশায় নিজের ক্যারিয়ার গড়া খুব সহজ। একই রেস্টুরেন্টের জাপানিজ শেফ মো. মোক্তার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা যত বেশি এই পেশায় আসবে, ততবেশি এই পেশা উন্নতির শিখরে পৌঁছাবে। এই পেশায় আসার আগে নিজেকে প্রশিক্ষিত করে নিলে এ পেশায় সহজেই ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। তিনি আরও বলেন, এই পেশায় ভালো ইংরেজি ভাষা জানা থাকলে দেশের বাইরে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
কেন আসবেন এই পেশায়
বর্তমানে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেটে ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানের হোটেল-মোটেল, ফাস্ট ফুড অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট এবং তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দক্ষ শেফের চাহিদা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশী খাবার বিশ্বের উন্নত দেশে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই বাংলাদেশী কুক বা শেফদের চাহিদা রয়েছে বিশ্ব জুড়ে।
কাজের ক্ষেত্র
একজন শেফ তারকা হোটেল ছাড়াও চাকরি পেতে পারেন বিভিন্ন এয়ার লাইন্স কোম্পানির কুক বিভাগে, ট্যুর এবং ট্রাভেল এজেন্সির কুক বিভাগে। আর প্রশিক্ষণ নেয়ার পর দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ তো থাকছেই। যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড, সাইপ্রাস, দুবাই ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
এ পেশায় আয় কেমন
প্রতিষ্ঠান ও কাজভেদে বেতন কাঠামো ভিন্ন হয়। নতুন অবস্থায় একজন শেফ ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকে। তাছাড়া অভিজ্ঞদের বেতন ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। এছাড়া কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে লভ্যাংশের একটা অংশও কর্মচারীদের দেয়া হয়। আর দেশের বাইরে কাজের ধরন বুঝে পর্যাপ্ত বেতন-ভাতা দেয়া হয়।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
এইচএসসি পাস করার পর হোটেল ম্যানেজমেন্টের ওপর অনার্স শেষ করে এ পেশায় আসা যায়। তাছাড়া এসএসসি বা এইচএসসি পাস করার পরও ‘ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন’ ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করে এ পেশায় আসা যায়। তবে ইংরেজি ভাষা ভালো ও শুদ্ধভাবে জানা থাকলে এ পেশায় সহজেই সাফল্য বয়ে আনা সম্ভব।
প্রশিক্ষণ
শেফ বা কুক, হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্সের একটি অংশ। প্রশিক্ষিত শেফ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হলে ‘ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন’ কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। এ কোর্সের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হল বাংলাদেশী, চায়নিজ, ইটালিয়ান, ইউরোপিয়ান, ইন্ডিয়ান খাবার তৈরি প্রণালী, ডেকোরেশন, হাইজিন অ্যান্ড স্যানিটেশন। এসব বিষয়ে দুই মাসের কোর্স, ছয় মাসের এবং এক বছরের সার্টিফিকেট কোর্স করে নিজেকে তৈরি করে নেয়া যায়। তাছাড়া প্রফেশনাল শেফ কোর্স নামের একটি ডিপ্লোমা কোর্স আছে। চাকরির ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি কোর্সগুলো বেশি গ্রহণযোগ্য।
সম্ভাব্য খরচ
দুই মাসের কোর্স, ছয় মাসের এবং এক বছরের সার্টিফিকেট কোর্সের সম্ভাব্য খরচ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন কোর্স সম্পন্ন করতে পারবেন। আর ডিপ্লোমা ইন প্রোফেশনাল শেফ কোর্স সম্ভাব্য খরচ ১,১০,০০০ টাকা। ১ বছরের লং ডিপ্লোমা কোর্স করে আপনিও হতে পারেন একজন প্রশিক্ষিত শেফ।
প্রশিক্ষণ নেবেন কোথায়
* ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ পর্যটন । মহাখালী, ঢাকা।
* বাংলাদেশ হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, গ্রিনরোড, ঢাকা।
* ইন্সটিটিউট অব ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ধানমণ্ডি, ঢাকা।
* বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট, ধানমণ্ডি, ঢাকা।
বর্তমান যুগে তরুণ-তরুণীরা শিক্ষাজীবন থেকেই তাদের নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চায়। আর ক্যারিয়ার বিবেচনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল সেই পেশায় চাকরির নিশ্চয়তা। আর এর সঙ্গে যদি থাকে বিদেশে চাকরির সুযোগ, তাহলে সেই পেশাতেই আগ্রহটা খুব বেশি দেখা যায় তরুণ-তরুণীদের মাঝে। এসব দিক বিবেচনায় বর্তমানে শেফ পেশাটি চলে এসেছে মানুষের আলোচনার শীর্ষে। এ পেশায় তরুণরা পাচ্ছে সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার আর দেশ-বিদেশে চাকরির সুযোগ।
We use cookies to ensure that we give you the best experience on our website. If you continue to use this site we will assume that you are happy with it.OkPrivacy policy