শুধু লিখেই ৫ লাখ টাকা ত্রাণ তহবিলে দিলেন তরুণ লেখক
- শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক
পশ্চিমবঙ্গের তরুণ লেখক অভীক অর্জুন দত্ত। তিনি অভীক দত্ত নামেই লেখালেখি করেন। সম্প্রতি নিজের লেখা বই বিক্রি করে ত্রাণের জন্য ৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করে বিরল কীর্তি গড়েছেন এই লেখক।
ঘটনার সূত্রপাত ঘূর্নিঝড় আমফানের সময়। আমফানে প্রবল ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণবঙ্গ। ক্ষতিগ্রস্ত শহর কলকাতা। অসহায় মানুষের কাছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বেশ কিছু জায়গা থেকে ত্রাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে টাকা পৌঁছে দিচ্ছেন অনেকে। অভীক দত্ত সিদ্ধান্ত নেন, তিনিও ত্রাণ তহবিলে টাকা দিবেন। কিন্তু কীভাবে? তার সম্বল বলতে নিজের লেখা বই ছাড়া অন্যকিছু তো নেই। তাই ত্রাণের টাকা জোগাড়ের জন্য তিনি নিজের বইয়ের পিডিএফও বিক্রি করতে শুরু করেছেন। সেখান থেকেই উঠে এসেছে ৫ লক্ষাধিক টাকা!
‘নীল কাগজের ফুল’, ‘যখন এসেছিলে’, ‘মেঘ ছায়া’, ‘২০-২০’— আপাতত এই চারটি বইয়েরই পিডিএফ পাঠকদের মধ্যে সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অভীক দত্ত। যে টাকা উঠে আসবে, তার সবটাই দেওয়া হবে বিভিন্ন রিলিফ ফান্ডে। এমনটাই ছিল ভাবনা। আর এই ভাবনারই সঙ্গী হয়েছেন অগুনতি পাঠক। আর এই সবের মধ্যে যোগসূত্রের কাজ করেছে সোশ্যাল মিডিয়া।
কথাপ্রসঙ্গে অভীক দত্ত বলছিলেন, “এই পিডিএফ বিক্রি ছাড়াও আরও একটা ব্যাপার আছে। ফেসবুকে আমার একটা পেইড গ্রুপ আছে। দু’বছর আগে সেটা শুরু করেছিলাম। সেখানে সামান্য কিছু টাকার বিনিময় আমি আমার লেখা পাঠকদের পাঠাতে থাকি। দেখতে দেখতে আজ সেখানে সদস্য সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। গ্রুপের একটা সাবস্ক্রিপশন ফি আছে। এই বছর ত্রাণের জন্য রিনিউয়ালটা আগে করতে বলেছিলাম পাঠকদের। তাঁরা সাড়া দিয়েছিলেন। সেখান থেকে একটা টাকা আসে। বাকিটা আসে এই চারটে পিডিএফ বেচে। এখনও অবধি টাকার অঙ্কটা প্রায় ৫ লক্ষ। ইতিমধ্যে সেটা রাজ্য সরকার, বইপাড়া, কুমোরটুলি, ইউনিসেফ, কমিউনিটি কিচেন-সহ বহু জায়গায় দিয়েছি। যেটুকু মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়, সেই চেষ্টাই করছি।”
শুধু পিডিএফই নয়, নিজের ছোটো ছোটো লেখাও এই তালিকায় রেখেছেন অভীক দত্ত। বাংলা সাহিত্যে পাঠক নেই বলে অভিযোগ বহুদিনের। বই বিক্রি হয় না, বই পড়ে না কেউ— মত অনেকেরই। সেই সবেরই উল্টোপিঠে দাঁড়িয়ে অভীক দত্তের এমন উদ্যোগ। পাঠকরা সেই লেখা বারবার পড়তে চেয়েছেন। তাই এত পরিমাণ টাকা উঠে এল ত্রাণের কাজে। এখনও কলম থামাননি অভীক দত্ত। কাজ চলছে জোরকদমে।
তথ্যঋণ: প্রহর ও বঙ্গদর্শন