পুরাণ ঢাকার ঐতিহ্য – বাকরখানি
- সানজিদা হোসেন
ভোজন রসিক মানুষেদের জন্য বাকরখানি একটি অনন্য নাম। পুরাণ ঢাকার জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে বাকরখানি একটি। বাকরখানিকে ‘শুকা’ বা রুটিও বলা হয়।
বাকরখানির উৎপত্তি স্থান আফগানিস্তানে হলেও রাশিয়া, তুর্কিস্তান, ভারত, পাকিস্তানেও পাওয়া যায় এই মুখোরোচক খাবারটি। মির্জা আগা বাকেরের হাত ধরেই ঢাকায় এর প্রচলন ঘটে। আজ থেকে প্রায় দুইশত থেকে আড়াইশত বছরের পুরনো খাবার এটি।
এর পেছনে লুকিয়ে আছে বাকের খান ও খনি বেগমের কিংবদন্তি প্রেমের ইতিহাস। মূলত তাদের প্রেমকাহিনীর উপর ভিত্তি করেই নামকরণ করা হয় বাকেরখনি রুটি। পরর্বতীতে এই নাম কিছুটা অপভ্রংশ হয়ে বাকরখানি নাম ধারণ করে। পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লার কাছে প্রথমে বাকরখানির দোকান গড়ে উঠে। সেখান থেকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন স্থানে বাকরখানির দোকানের প্রসার ঘটে। নবাবদের এই বাকরখানি খাবারটি তৈরি হতো মালাই-মাখন দিয়ে। অতীতে ময়দার সঙ্গে দুধের মালাই ও মাখন মিশিয়ে খামির তৈরি করে বাকরখানি বানানো হতো। সে সময় এটা ছিল নবাব আর আমিরদের প্রিয় খাবার।
এছাড়া পূর্বে শুধুমাত্র চিনিসহ এবং চিনিছাড়া বাকরখানি পাওয়া যেত। এখন চিনিসহ এবং চিনিছাড়া বাকরখানির সাথে নারিকেল, খাস্তা, পনির, ঘি, মাংসের ঝুরা, কাবাব, কিমা নানা ধরনের বাকরখানি পাওয়া যায়। মাংসের ঝুড়ার সংমিশ্রণে তৈরি করা বাকরখানি শুধুমাত্র ঈদের সময় বানানো হয়; যা অত্যন্ত সুস্বাদু। তাছাড়া ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য তৈরি করা হয় নোনতা বাকরখানি।
মালাই-মাখনের বাকরখানি এখন আর তৈরি হয় না। তবে ঢাকার অনেক পুরনো খানদানি পরিবার বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য আগাম অর্ডার দিলে মালাই-মাখনের বাকরখানি এখনো সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আগে ঢাকার বনেদি পরিবার নিজেদের বাড়িতেই বাকরখানি তৈরির আয়োজন করতেন।
বিভিন্ন স্বাদের বাকরখানি তৈরি হয়। নানা ধরণের বাকরখানির মধ্যে মিষ্টি ও নোনতা বাকরখানির চাহিদাটা একটু বেশি। সাধারণ বাকরখানির দাম প্রতিটি তিন টাকা এবং প্রতি কেজি একশত টাকা। এছাড়া স্বাদের ভিন্নতা অনুসারে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দাম।
বাকরখানি চায়ের সঙ্গে খাওয়ার প্রচলন পুরান ঢাকায় বেশি। এ ছাড়াও গরু, খাসি, মুরগির মাংসের সঙ্গেও বাকরখানির স্বাদ অতুলনীয়। বাকরখানি পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহি খাবার। ভিন্নস্থানের মানুষের সকাল ও বিকেলের প্রিয় নাস্তা বাকরখানি।
সময়ের বিবর্তনের কারনে হারিয়ে গিয়েছে পুরান ঢাকার অনেক ঐতিহ্য, কিন্তু তারই মধ্যে এখন ও টিকে আছে বাকরখানি।