মেলায় ফরিদুল ইসলাম নির্জনের ‘স্কুল মাঠে ভূতের মেলা’

লেখক: ফরিদুল ইসলাম নির্জন
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ
প্রচ্ছদের আলোকচিত্র: গোলাম মুস্তাফা
গল্পের অলঙ্করণ: কাওছার মাহমুদ
প্রকশনায়: দেশ পাবলিকেসন্স
বিনিময়: ১৪৯
স্টল নম্বর: ৪০৭-৪০৮ 12721907_1101352186594725_850694711_n

লেখক পরিচয় : ফরিদুল ইসলাম নির্জন, জন্ম ১০ অক্টোবর ১৯৮৭, সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানায় । বাবা মো. আসমত আলী, মা মৃত ফাতেমা বেগম। দুই ভাই, এক বোনের ছোট পরিবার। হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করলেও শৈশব থেকেই ব্যক্তিগত অনুরাগের বিষয় সাহিত্য। পড়তে পড়তেই লেখার সূচনা। সেই সূত্রে আসা গ্রাম থেকে নগরে। লিখছেন নিয়মিত। নগরবাসী হলেও লেখকের হূদয় পুরোটাই পাললিক, গ্রামবাংলার সোঁদা গন্ধ মাখা। দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লিখে চলেছেন। বিচিত্র বিষয়ে ফিচার, নিবন্ধ লিখলেও হৃদয় মহলে আগ্রহের জায়গা গল্প, কবিতা। পাশাপাশি রয়েছে মানুষের সঙ্গে মেশার আশ্চর্য ক্ষমতা। এই ক্ষমতা রূপ নেয় সংগঠনিক তৎপরতায়। যেখানে সে উন্মুখ সমাজের জন্য অর্থবহ কিছু করার।

বই পরিচিত : স্কুল মাঠে ভূতের মেলা লেখকের প্রথম বই। বইটি মূলত শিশু কিশোর জন্য উপযোগী গল্পগ্রন্থ। এগারটি ভিন্ন স্বাদের গল্প নিয়ে স্কুল মাঠে ভূতের মেলা। প্রতিটি গল্পেই পাঠককে কাছে। ভয়ঙ্কর ভূত, মজায় ভরপুর আর সাহসীকতা নিয়ে স্বুল মাঠে ভূতের মেলা।
সেলফি একবিংশ শতাব্দীর একটি আলোচিত নাম। সবার মাঝে খুব প্রিয়ও বটে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব মানুষের কাছে বহুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সেলফি। আর এই সেলফি যদি হয় ভূতের সঙ্গে তাহলেতো কোন কথায় নেই। বইটির প্রথম গল্পের নাম ‘ভূতের সঙে সেলফি। শিশু-কিশোরদের সরস রম্য ঢেলে দিতে রয়েছে মজার কাহিনী এই গল্পে। কিভাবে ভূতের সঙে সেলফি তোলা যায়, কোথায় ভূতের সঙে সেলফি তোলা যায় এই নিয়ে রয়েছে মজার মজার ঘটনা। গল্পের শুরুটা এমন,

আম্মু আমি ভূতের সঙ্গে সেলফি তোলব। বলেই আরিয়া কান্না করতে লাগল। সে কি কান্না। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগল। ব্যাপারটা ভয়নক হতে লাগল। আরিয়ার আম্মু কি করবে কিছুতেই বুঝতে পারছে না। আরে বাবা আবদারের তো একটা সীমা আছে। ভূতের সঙ্গে কি আর সেলফি তোলা যায়। কুকুর সঙ্গে সেলফি তুলতে চাইলে প্রয়োজনে কাটা বন থেকে কুকুর কিনে আনা যাবে। বানরের সাথে সেলফি তুলতে চাইলে ব্যবস্থা করানো যাবে। সেলফি। ভূতের সঙ্গে ! এটা কোন কথা হল। এই আবদার কি মেনে নেবার মত।
আরিয়ার মা একজন ডাক্তার। এমবিবিএস কমপ্লিট করার পর বিদেশ থেকেও ডিগ্রী নিয়ে এসেছে। পিএচডি করেছে। তার বেশির ভাগ সময় কাটে ব্যস্ততার মাঝে। আর ভূত বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই। এ কথা কত জনকে সে নিজে বলেছে। অনেক রোগীকে এর ব্যাখাও দিয়েছে। আর আজ নিজের মেয়েকে কোন ব্যাখা দিতে পারছে না। ভাবতেই আরিয়ার মায়ের মন ভীষণ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’
গ্রামের অনেক মানুষ আছে যারা শিশু কিশোরদের জন্য নানান উদ্যোগ নিয়ে থাকেন। উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য মরিয়া হয়ে থাকে। যার ফলে তারা শিশু-কিশোরদের খুব প্রিয় হয়ে ঊঠে। সমাজে কিছু অসৎ মানুষের জন্য আটকে যায় তাদের স্বপ্ন। তবুও থেমে থাকে না তাদের উদ্যোগ। এমনি রোমাঞ্চকর এক কাহিনী নিয়ে গল্প গুরু ভাই। সাধারণ একজন গ্রাম্য ডাক্তার। কিন’ শিশু-কিশোরদের নিয়ে রয়েছে অনেক স্বপ্ন। যার মূল্য তার কাছে পরিমাপ করা কঠিন। গুরু ভাই গল্পটি অন্য ধারার গল্প। যা পরে বাচ্চারা ভাল পড়াশোনর পাশাপাশি অন্য সৃজনশীল কাজে ভূমিকা রাখবে।
আমাদের মার্তৃভাষা বাংলা। প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে রয়েছে বাংলা ভাষার দখল। কিন’ বাংলা ভাষার অশুদ্ব উচ্চারণে ভাষাকে অপমান করা হচ্ছে। কেউ বাংলাকে তুচ্ছ মনে করে পড়তেই চায় না। এমনি একটি গল্প ‘নীলু আর ডাবল জিরো পায় না’। বাংলা ভাষাকে অবজ্ঞা, তুচ্ছ করে দেখে নীলু। যার ফলে পরীক্ষার হলে খাতায় কিছুই লিখতে পারে না। একসময় একটা কাল্পনিক ক্ষমতা তাকে ফিরিয়ে আনে। সে ভুল বুঝতে পারে। ভাল করে বাংলায়। ছোট বেলায় সবাই একটু আধটু বেশী দুষ্টামি করে বেড়ায়। তেমনি একটি গল্প দাওয়াত। ছেলে বাবার সাথে দাওয়াত খেতে কেমন করে। দাওয়াতে গিয়ে কি হাল করে । তা নিয়ে রয়েছে মজার কাহিনী।
বাল্য বিবাহ একটি ভয়ঙ্কর ব্যাপার। একজন মেধাবী ছাত্রীর বাল্য বিবাহের হাত থেকে কিভাবে রেহায় পায়। তার বন্ধুরা মিলে কিভাবে তার পাশে দাঁড়ায়। তার স্কুলে যাওয়া অব্যহত রাখে । তেমনি একটি গল্প ‘আজ নিশার বিয়ে।
অনেকেই হয়ত পরীর গল্প শুনেছেন। কিন’ কখনো পরীর স্থানে যাওয়া হয়নি। আর তাদের জন্য সুখকর বিষয় হলো পরীর সঙে পরীস্থানে গল্পটি পড়লে মনে হবে পরীর দেশে ঘুরে এসেছি। পরীর সঙে পরীস্থানে গল্পের শুরুটা হয়েছে এমন, মামী তোমাকে একটা কথা বলব মামাকে বলবে নাতো আবির বলল।
আচ্ছা বলব না বল।
মামা ছোট বেলায় চোর ছিল।
কি সাংঘাতিক কথা ! তুমি জানলে কেমন করে ।
মামনি বলছে আমাকে। মামা ছোট বেলায় মামনির থালা থেকে মাছের মাথা চুরি করে খেত।
তাই নাকি। আর কি ছিল তোমার মামা।
আর মামা মাঝে মধ্যে আমারও থালা থেকে মাছের মাথা চুরি করে খায়।
তাই।
হ্যা, মামী তুমি সাবধান থেকো । তোমার প্লেট থেকে কিন’ মামা মাছ চুরি করে খেতে পারে।
শৈশব প্রতিটি মানুষের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। যা কখনো ভূলে থাকা যায় না। আর শৈশবের একটি মধূরতম সময় হলো সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাওয়া। আর সেই সাইকেল যদি হয় লাল বাই সাইকেল তাহলেতো কথায় নেই। তেমনি একটি গল্প, একটি লাল বাই সাইকেল। যে গল্পে উঠে এসেছে একজন কৈশরের সাইকেল চালানোর স্বপ্ন, তারপর লাল সাইকেল কেনার স্বপ্ন। অত:পর সেই সাইকেল দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে যায় তার সকল আশা আকাঙ্খা। অসাধারণ এই গল্পটি প্রতিটি কৈশরকে সামনে দিকে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা দিবে।
বইটির অন্য গল্পগুলো, হলো জুতা চুরি, কবুতর, দাওয়াত, আমপরী, স্কুল মাঠে ভূতের মেলা। বইটি উৎসর্গ করেছেন লেখক তার মাকে ।
লেখকের কথা: শৈশব থেকেই আমি লেখালেখি করি। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখলেও গল্প লিখতে আমার বেশ ভাল লাগে। বিশেষ করে শিশু সাহিত্যর প্রতি রয়েছে হৃদয়ে আলাদা যায়গা। আর এই আলাদা যায়গা থেকেই স্কুল মাঠে ভূতের মেলা লেখা হয়েছে। চেষ্টা করেছি শিশু সাহিত্যর নতুনত্ব আনার। আর সেই চেষ্টার ফলফল এখন পাঠকদের হাতে।

গ্রন্থনা: রবিউল কমল। favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment