তাঁরা জাবির উদীয়মান লেখক
আসাদুজ্জামান, সাভার : লেখালেখি কারও কাছে স্বপ্নের মতো সুন্দর। কারও কাছে দুর্গম গিরির মতো কঠিন। এই ‘সুন্দর-কঠিন’ প্রত্যয়কে বুকে ধারণ করে বেরিয়ে আসছে তরুণ প্রজন্মের কাণ্ডারীরা। এ বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্ততত ১০ জন শিক্ষার্থী বের করেছেন তাদের লেখা বই, যা বই মেলায় বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। বিক্রির তালিকায় অর্জন করেছেন ব্যবসায়িক সাফল্য।
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি
পড়ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রথম বর্ষে (৪৫তম ব্যাচ)। স্বাধীনচেতা লেখিকা হিসবে বেশ পরিচিতি তাঁর। সবেমাত্র প্রবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। পার করেছেন জীবনের মাত্র ১৯টি বসন্ত। এরই মধ্যে তার বই বের হয়েছে বেশ কয়েকটি। এ বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘উনিশ বসন্ত’। তার এই আত্মজীবনীর বিভিন্ন পর্ব কলকাতার অন্যদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে বইটি প্রকাশ করেছেন শব্দশৈলী প্রকাশনী। যার প্রথম মুদ্রণ শেষ, চলছে দ্বিতীয় মুদ্রণ। মেলায় ‘এইসব উড়ে আসা দিন’ ও ‘পেন্সিলে আঁকা গল্প’নামক বের হয়েছে তাঁর আরও দুটি বই। শিশুদের জন্য তাঁর প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গ্রন্থ বের হয় ‘বাংলাদেশ নামটি যেভাবে হলো’ নামে। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি কাজ করছেন বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, সিআরআই (ইয়ং বাংলা) হিসেবে। লেখালেখি করে অনেক মানুষের মনে স্বপ্নের প্রদীপ জ্বালাতে চান যে প্রীতি, তার স্বপ্নের কথা জানতেই চাইতেই স্মিত হেসে জানান- ‘আমি অবশ্যই একজন ভালো লেখক হতে চাই, আর পেশাগত জীবনে কাজ করতে চাই চিত্রশিল্পী হিসেবে।’
.
সানাউল্লাহ মাহী
বিশ্ববিদ্যালয়ের উদীয়মান লেখকদের মধ্যে একজন সানাউল্লাহ মাহী। তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রদায়ক হিসেবে লেখালেখি করেন। এবারের বইমেলায় ‘ডালপুরি’ নামে একটি ছড়ার বই বের হয়েছে তাঁর। এটি তাঁর দ্বিতীয় বই। এর আগে ‘উত্তরসূরী’ নামে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ বের হয়। এ বছরের ছড়ার বইটি তিনি শিল্পী সায়ানকে উৎসর্গ করেন। বর্তমানে তিনি সরকার ও রাজনীতি বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যায়নরত। একই সাথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি এবং দৈনিক সংবাদ পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন।
.
মাসুম মুনওয়ার
একাধারে কবি, সংগঠক, সম্পাদক এবং প্রকাশক তিনি। বিশ্ববিদ্যলয়ের একমাত্র সাহিত্য সংগঠন ‘চিরকুট’তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা লাভ করে। লেখালেখি তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। এ বছর বইমেলায় মাসুম মুনওয়ারের ‘সূর্যকুসুম’ নামে প্রথম কাব্য গ্রন্থ বের হয়েছে। তাঁর সম্পাদনায় ও প্রকাশনায় বের হয়েছে আরও কয়েকটি বই। মাসুম মুনওয়ার মনে করেন-‘ঘুনে ধরা সমাজকে পরিবর্তন করতে ইতিবাচক সাহিত্য চর্চার কোনো বিকল্প নেই। এতে সমাজের উল্টো স্রোতে নিরন্তন হাঁটতেও তাঁর দ্বিধা নেই।’ তিনি আরও বলেন-‘আমি স্বপ্ন দেখি ঘুনে ধরা এ সমাজ বিনির্মাণের, প্রথাগত ভালোবাসা কিংবা প্রতিবাদের বিপরীতে নতুন করে জেগে উঠতে।’
.
.
নাজিয়া ফেরদৌস
এবারের বই মেলায় এসেছে নাজিয়া ফেরদৌসের ছড়ার বই ‘বেলা গড়ায় মজার ছড়ায়’। মোট ৩০টি ভিন্ন ধাঁচের মজার ছড়া নিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। কখনো বাস্তব কখনো কল্পনার স্বপ্নিল জগতে বিচরণ করেছে বলে ছড়াগুলো শিশুদের জন্য বেশ সুখপাঠ্য। শিশুদের আনন্দদানে ছড়াকার এই বইটিতে ছন্দবৈচিত্রের প্রকাশ ঘটিয়েছেন চমৎকারভাবে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন রুবেল রেজা ও অলংকরণ করেছেন নাফিস ফুয়াদ সাফি। বইটির লেখিকা বর্তমানে বাংলা বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত। এর আগে তার আরও দুটি ছড়ার বই বের হয়েছে। লেখালেখির পাশাপাশি ভালো অভিনয় শিল্পী ও আবৃত্তিকার হিসেবে বেশ সুনাম রয়েছে তাঁর।
.
.
আহমেদ সজল
পড়ছেন নাটক ও নাট্যতত্ত¡ বিভাগে। থাকেন সৃষ্টির নেশায় মত্ত। নিজেকে আড়াল করে রাখা এ লেখকের লেখালেখি যেন ভালবাসার প্রিয় বস্তু। ‘অবিরত জোছনার গান’ এটি তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিডিনিউজটোয়ন্টিফোর.কম এর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। তার লেখা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ব্লগেও লেখালেখি করেন।
.
.
.
শিবলী নোমান
বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যলযের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যায়ন বিভাগে পড়ছেন। এ বছর বই মেলায় তাঁর ভ্রমনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘টোকিওর টাওয়ার থেকে’ নামে একটি ভ্রমণ কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ২০০৪ সাল থেকে যুক্ত ছিলেন যুব রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের সাথে। ২০১০ সালে লেখক বাংলাদেশ ডেলিগেশনের সদস্য হিসেবে সুযোগ পান জাপানিজ রেডক্রস আয়োজিত ১৫ দিনব্যাপী ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম ২০১০’ ও ‘জেআরসি/আরসিওয়াই ইন্টারন্যাশনাল মিটিং- মাউন্ট ফুজি ২০১০’-এ অংশগ্রহণের। জাপানে আয়োজিত ১৫ দিনব্যাপী এই দু’টি প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য ঘটনাগুলোই উদ্ধৃত হয়েছে বইটিতে।
.
মাসউদী হাসান মামুন
এবার বই মেলায় শিশুদের জন্য ‘খেক শিয়ালের বিয়ে’ নামক প্রথম কাব্যগ্রন্থ বের হয়েছে। মামুন পড়ছেন বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষে। বিজ্ঞানের বিষয়ে পড়াশুনা করলেও বাংলা সাহিত্যের টানে কাজ করছেন সাহিত্য নিয়ে। লিখছেন বিভিন্ন ধরণের গল্প, কবিতা।
.
.
.
.
সাঈদ অভি
‘নিহত দৃশ্যের মতো’ একটি কবিতার বই। যেখানে আছে কিছু সাধারণ দৃশ্য আর কিছু সাধারণ সংলাপ। এ বিষয়ে তিনি বলেন ‘মাঝে মাঝে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা হতো আর জমতে থাকতো। জমতে থাকা সেসব লেখার মধ্যে যেগুলো নানাসময়ে বিভিন্ন দৈনিকে এবং সাহিত্য পত্রিকায় ছাপা হতে থাকে, সেসব নিয়েই এবারের বইমেলায় আসে আমার প্রথম এই বই।’ এছাড়া তিনি একটি তৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘চারকোল’এর সম্পাদক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যায়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যায়ন বিভাগে অধ্যায়নরত আছেন।
.
রণক জামান
এবার বই মেলায় তাঁর ‘ঘামগুলো সব শিশিরফোঁটা’ নামে একটি কবিতার বই বের হয়েছে। এছাড়া ‘ললিতা’ নামে তার অনুদিত একটি উপন্যাসও বের হয়েছে। বর্তমানে তিনি রসায়ন বিভাগে পড়ছেন।
.
.
.
মিজান টিটু
‘শূণ্য শব্দঘর ’ নামে এবার বই মেলায় তাঁর একটি কবিতার বই বের হয়েছে। বর্তমানে তিনি বাংলা বিভাগে অধ্যায়নরত আছেন। লেখালিখির পাশাপাশি তিনি সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাজে জড়িত আছেন।