শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ

শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ

আজ হুমায়ূন আহমেদ এর জন্মদিন। তার লেখা পড়তে পড়তে অনেকে পাঠক হয়েছে, লেখক হবার স্বপ্ন দেখেছে। হুমায়ূন আহমেদ এর ছোট গল্প অত্যান্ত পাঠকপ্রিয়। তার বিখ্যাত বিখ্যাত গল্প থেকে প্রিয় কিছু অংশ:


  • ‘…আপনার মানুষ সংসারে থাকলেও আপনার, বাজারে থাকলেও আপনার। আপনার মানুষের কাছে কিছুক্ষণ বসলেও ভালো লাগে। মমতামাখা একজোড়া চোখের জন্য সে অপেক্ষা করে; যে চোখের দিকে তাকালে ভালো হয়ে যেতে ইচ্ছে করে।‘
    গল্পঃ চোখ

  • ‘…আমার জরীসোনা কথা শিখেছে নাকি, পরী?
    হু, মা বলতে পারে। আর পাখি দেখলে বলে ফা ফা।
    আমার জরী তোমার চেয়ে সুন্দর হবে। তাই না পরী?
    আমি আবার সুন্দর নাকি?
    না, তুমি ভীষণ বিশ্রী।‘
    গল্পঃ নিশীকাব্য

  • ‘…কত উড়ো খবর কানে আসে! কোথায় নাকি একশো মুক্তিবাহীনির ছেলে ধরা পড়েছে; কোথায় নাকি চারজন মুক্তিবাহিনীর ছেলেকে মিলিটারীরা পুড়িয়ে মেরেছে। সেই থেকে রহিমার রাতে ঘুম হয় না। জেগে জেগে রাত কাটে; সেই সময়ই অসুখটা হলো; হঠাত ঘুম ভাঙলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে; মনে হয় মৃত্যু বুঝি এসে বসেছে বুকের উপর।
    যুদ্ধ থেমে গেল।মজিদ ক্রাচে ভর দিয়ে হাসিমুখে একদিন দরজার সামনে এসে ডাকল, মা, আমি মরি নাই গো। দেখো বেঁচে আছি…।
    গল্পঃ শ্যামলছায়া

  • ‘…জরী, এখন গভীর রাত। আবার হয়তো কোনো এক পেইন্টিং এর সামনে দাঁড়িয়ে তোমার কথা মনে পড়বে। আবার এরকম লম্বা চিঠি লিখবো। কিন্তু সেসব চিঠি কখনো পাঠাবো না তোমাকে। যৌবনে হৃদয়ের যে উত্তাপ তোমাকে স্পর্শ করতে পারেনি, আজ কি আর তা পারবে?’
    গল্পঃ কল্যানীয়াসু

  • ‘…কথা ছিল পারুল ন’টার মধ্যে আসবে।
    কিন্তু এলো না; বারোটা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে রইলাম একা একা। চোখে জল আসবার মতো কষ্ট হতে লাগল আমার। মেয়েগুলো বড্ড খেয়ালী হয়। বাসায় এসে দেখি ছোট্ট চিরকুট লিখে ফেলে গেছে।
    সন্ধ্যায় ৬৯৭৬২১ নম্বরে ফোন করো।
    –পারুল
    পারুলকে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। যে জীবন আমার শুরু হয়েছে সেখানে প্রেম নিতান্তই তুচ্ছ ব্যাপার। কিন্তু সামান্য কয়েক ফোঁটা মূল্যহীন চোখের জলের মধ্যে পারুল নিজেকে আবার প্রতিষ্ঠিত করলো। সমস্ত দুঃখ ছাপিয়ে তাকে হারানোর দুঃখই নতুন করে অনুভব করলাম। আমার জন্য এই দুঃখটার বড় বেশি প্রয়োজন ছিল।‘
    গল্পঃ একজন ক্রীতদাস

  • ‘…এন্ড্রিন খেয়ে মরা আমার অভিমানী দাদা যে প্রগাঢ় ভালোবাসা পরী আপার জন্যে সঞ্চিত করে রেখেছিলেন তার সবটুকু দিয়ে বাবা আমার মাকে কাছে টানলেন। ঝুঁকে পড়ে চুমু খেলেন মা’র কুঞ্চিত কপালে। ফিসফিস করে বললেন, কাঁদে না, কাঁদে না।
    ভালোবাসার সেই অপূর্ব দৃশ্যে আমার চোখে জল আসলো। আকাশভরা জোতস্নার দিকে তাকিয়ে আমি মনে মনে বললুম, পরী আপা, আজ তোমাকে ক্ষমা করেছি।‘
    গল্পঃ শংখমালা

  • ‘…অসুস্থ শরীরে পরীও উঠে এসে তার বাবার গায়ে হেলান দিয়ে বসেছে। দীপু বসেছে বাবার কোলে। পরী বলল, আমিও কিন্তু তোমাদের সংগে ভাত খাব বাবা।
    আচ্ছা খাবি।
    দীপু বলল, আমরা আজ দু’বার করে খাব তাই না বাবা?
    হ্যাঁ।
    দু’বার করে কেন খাব বাবা?
    বড় মাছ এনেছি তো সেইজন্য…।‘
    গল্পঃ ফেরা

  • ‘…আজহার খাঁ ডাকলেন, লিলি! লিলি!
    জমে থাকা পানিতে ছপছপ শব্দ তুলে মা ও মেয়ে দু’জনেই দ্রুত আসছিল। তিনি ব্যস্ত হয়ে রিকশা থেকে নামতে গিয়ে উলটে পড়লেন। যে জায়গাটায় তিনি হুমড়ি খেয়ে পড়লেন, সেখানটায় অদ্ভুত মিস্টি সুবাস। তিনি ধরা গলায় বললেন, লিলি তোর শিশিটা ভেঙ্গে গেছে রে।
    লিলি ফোপাতে ফোপাতে বলল, আমার শিশি লাগবে না; তোমার কি হয়েছে বাবা?
    গভীর জ্বরে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে আছেন আজহার খাঁ। রঞ্জু অকাতরে ঘুমুচ্ছে, লিলি আর লিলির মা ভয় কাতর চোখে জেগে বসে আছেন; বাইরে বৃস্টিস্নাত গভীর রাত। ঘরের ভেতর হারিকেনের রহস্যময় আলো। জানালা গলে হিমেল হাওয়া আসছে।
    সেই হাওয়া সেন্টের ভাংগা শিশি থেকে কিছু অপরুপ সৌরভ উড়িয়ে আনল।‘
    গল্পঃ সৌরভ

গ্রন্থনা: শাখাওয়াৎ নয়ন favicon

Sharing is caring!

Leave a Comment