এই ফাগুনের ভালোবাসা
রবিউল কমল : প্রকৃতি রঙিন হয়ে উঠলো। মনও। ভালোবাসায়। এই অনুভূতি একটি দিনকে আলাদা করে দিয়েছে প্রেমময় মানুষের কাছে……
ঝরাপাতা মিশে যখন উর্বর হয়ে ওঠে মাটি, তখন আলতো পা ফেলে আসে বসন্ত। কোনো সবুজ বন থেকে ধেয়ে আসে কোকিল। বিছানায় পাশ ফেরা কিশোরীর জানালার পাশের শিমুলগাছটির ডালে বসে শুরু করে কুহুতান। কী এক আন্দোলনে তার মনের মাঝে দুলতে থাকে না ফোটা কিশলয়। একসময় চোখ মেলে তাকায় নতুন সূর্যেও আলো দেখবে বলে। দেখে তার মতো সব পাতারা ডানা মেলেছে। গাছগুলোও কেমন এক লাজ মেশানো সরল সবুজে ছেয়ে গেছে। পাতাবাহার, সোনালু কি কৃচূড়ার মতো কয়েকটি বোকা গাছ যেন খুশির আতিশয্যেই পাতাগুলো ফুল ভেবে ফুটিয়ে ফেলেছে। কিশোরীর মন ছুটে যায় জানালা পেরিয়ে, আলতা পরা পা পাড়ি দেয় চৌকাঠ। এক অচেনা সুখে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার মুখ, কিন্তু একটু পরেই শূণ্যতার অনুভবে ম্লান হয়ে যায়। কী যেন চাই! প্রকৃতি ছেয়েছে বসন্তে, এখন কিশোরীর মনে পৌষ-ফাগুনের পালা, কাচের চুড়িতে ফাল্গুনী সব রঙ। কিন্তু তা বুঝবে কে? যে আছে সে কি জানবে কেমন করে জেগেছে আকাশ তার, হলদে কমলা টিপটা কার জন্য, সেই বা কোথায়? এমন ফাগুন বেলায় ও কি আসবে না?
ঈয়লা ফাল্গুনের রঙগুলোই সম্ভবত এর জন্য দায়ী। যেন শূন্যতা পূরণের জন্য জেগে উঠেছে এগুলো। ফাল্গুনের হলদে, বাসন্তী, কমলা, শেওলা সবুজ রঙগুলো দেখলেই বারবার মনে পড়ে যায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা দিয়ে কথা না রাখা বোষ্টমীকে। সেই বোষ্টমীরা যারা গান গায় ঘুরে ঘুরে, ভালোবাসার মাহাত্ম্য জানায়, ওদের বেঁচে থাকার প্রেরণাই যে প্রেম। তাদের কাছ থেকেই যেন সব রঙ ধার করে সেই রঙে বসন্ত সাজায় নিজের প্রকৃতি। তাদের সুরেই তো অনুরণিত হয় ফাগুনের হাওয়া। কী এক অদ্ভুত আলোড়ন তুলে যায় ভেতরে, বাইরে। কী যেন চাওয়ার দিকে ধাবমান হতে থাকে মানবপ্রকৃতি। এই চাওয়া কার কাছে? মানুষের কাছে? মানুষ কি প্রকৃতির অংশ নয়? তবে কি এই চাওয়া প্রকৃতির কাছেই নয়?
প্রকৃতি কাউকে ফেরায় না। জন্ম এখানে, মৃত্যু তার কোলে, তবে ভালোবাসা কেন নয়! কেউ আসুক, কেউ এসে শূন্যতাকে পূর্ণ করে দিক। এই অনুভূতির নামই তো প্রেম। এই অনুভবেই তো ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। প্রেম প্রকৃতিরই একটি অংশ। বসন্ত যেমন জড়তা থেকে মুক্তি দেয় প্রকৃতিকে , প্রেমও তেমন মানুষকে বের করে আনে নিজের গন্ডি থেকে। প্রেম হাসতে শেখায়, ভালোবাসতে শেখায়, ভাগাভাগি করে জীবন কাটানোর অনুপ্রেরণায় ভরিয়ে তোলে। কে চায় একা একা ফাগুন দেখতে! তাই এই সময় মানুষ সঙ্গী বেছে নিতে চায়, বেঁচে উঠতে চায় নতুন করে। সামাজিক পরিচয়ের মাঝেই সে প্রেমিক হয়ে ওঠে, যে তুচ্ছ করতে পারে স্বয়ং সামাজিকতাকেই। বলতে দ্বিধা নেই, প্রেমের শিহরণময় পর্ব শুরু হয় এই সময়ে।