তালহা শিক্ষাবৃত্তি চালুর ঘোষণা ও পরিবারের হাতে জীবনবীমার চেক হস্তান্তর
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
অন্যকে বাঁচাতে গিয়ে ছিনতাকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী খন্দকার আবু তালহার নামে শিক্ষা বৃত্তি চালু করল ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের ১৭ তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ বুধবার (১১ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে আয়োজিত এক সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জীবনবীমা বাবদ ৫ লক্ষ টাকার চেক নিহত শিক্ষার্থী আবু তালহা খন্দকারের বাবা আবু রিয়াজ মোঃ নুরুদ্দিন খন্দকারের হাতে তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইউসুফ এম ইসলাম, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম মাহাবুব-উল-হক মজুমদার, ট্রেজারার হামিদুল হক খান, রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ড. এ কে এম ফজলুল হক, পরিচালক (হিসাব ও অর্থ) মুমিনুল হক মজুমদার, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনিসুর রহমান মিয়া সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। উল্লেখ্য, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সকল শিক্ষার্থী জীবনবীমার আওতাভূক্ত।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান বলেন, তালহার সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকাকে আমরা স্মরণে রাখতে চাই। এজন্য তালহার নামে একটি শিক্ষাবৃত্তি প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ইতিমধ্যেই গৃহীত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তালহা তার জীবন উৎসর্গ করার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে যে শিক্ষা দিয়ে গেল, সেই শিক্ষা যদি আমরা আমাদের অন্তরে ধারণ করতে পারি এবং বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারি তবেই তালহার আত্মা শান্তি পাবে। এসময় তিনি তালহার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিতার কামনা করেন।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আকতার হোসেন বলেন, তালহা ছিল আমাদের সবার প্রিয় ছাত্র। সে ছিল একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। কতিপয় দুষ্কৃতকারী আমাদের এই নক্ষত্রকে কেড়ে নিয়ে নিয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এসব দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এখনই সময়। এসময় তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনিসুর রহমান মিয়া বলেন, তালহার পিতা যে সম্পদ হারিয়েছেন তার কোনো বিকল্প নেই। সারা পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ তার হাতে তুলে দিলেও এ ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব নয়। তবু একটি শোক সন্তপ্ত পরিবারের পাশে থাকতে পেরে প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স গর্ব বোধ করছে। এসময় তিনি বলেন, অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক এটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া। অপরাধীদের শাস্তি না হলে আমাদের সন্তানরা নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারবে না। তাই আমাদের সবাইকেই এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে।
তালহার পিতা আবু রিয়াজ মো. নুরুদ্দিন খন্দকার বলেন, আমার সন্তানের রক্তের বিনিময়ে হলেও যেন বাংলাদেশ থেকে সকল অন্যায় দূর হয়। আর কোনো পিতার বুক যেন এভাবে খালি না হয়। এ সময় তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদেরকে সারা বাংলাদেশে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
এদিকে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা আজ ধানমন্ডিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানক্যাম্পাস ও আশুলিয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে সহপাঠী তালহার হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে এক মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে।
উল্লেখ্য, গত ৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে রাজধানীর টিকাটুলির কে এম দাস লেনে সকাল সাড়ে ছয়টার চারজন ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতের শিকার হন ১৯ বছর বয়সী আবু তালহা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে সকাল আড়ে আটটায় তার মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্লাসের উদ্দেশ্যে সকাল সাড়ে ছয়টায় কে এম দাস লেনের বাসা থেকে বের হয়ে প্রায় ১০০ গজ দূরে চারজন ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন আবু তালহা। ছিনতাইকারীরা তার কাছ থেকে মোবাইল ও মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে যায় এবং একটু দূরে গিয়ে আরও একটি রিকশা আটকে যাত্রীদের কাছ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করতে থাকে। এসময় তালহা ছুটে গিয়ে ছিনকারীদের বাধা দিলে ছিনকারীরা এলোপাতারি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।