ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যোক্তা সম্মেলন
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী বিশ্ব উদ্যোক্তা সপ্তাহ ২০১৭ এর চতুর্থ দিনে আজ ১৮ নভেম্বর অনুষ্টিত হয় উদ্যোক্তা সম্মেলন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ মিলনায়তনে আয়োজিত এ উদ্যোক্তা সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক শিক্ষা সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম মাহাবুবুল হক মজুমদার, গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনারশিপ নেটওয়ার্কের কান্ট্রি হোস্ট সোহায়েল চৌধুরী, এন্ট্রাপ্রেনারশিপ বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ শিবলী শাহরিয়ার, ক্যারিয়ার ডেভলপমেন্ট সেন্টারের পরিচালক আবু তাহের খান প্রমুখ। এ মেলার সহযোগী ক্যারিয়ার ডেভেলাপমেন্ট সেন্টার এবং স্ট্র্যাটিজিক পার্টনার বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল লিমিটেড।
পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে বাংলাদেশে উদ্যোক্তা উন্নয়ন শীর্ষক আলোচনা সভা, দেশের প্রতিভাবান তরুণদের মাঝে ব্যবসা প্রস্তাবনা প্রতিযোগিতা, স্টার্ট আপ ফেয়ার, ডিজিটাল মার্কেটিং, বিপণণ কৌশল ও ধারনা বিষয়ক কর্মশালা, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল পলিসি এবং প্রসিডিউর বিষয়ক সেমিনার, মহিলা উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষক আলোচনা, বুট ক্যাম্প, উদ্যোক্তা সম্মেলনসহ নানা আয়োজন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর কর্মসংস্থান না পেয়ে আমাদের তরুণরা হতাশ হয়ে পড়ে। আমাদের দেশে এই হতাশাগ্রস্থ তরুণের সংখ্যা বাড়ছে। কারণ তাদের কর্মসংস্থান করার মতো পর্যাপ্ত কর্মক্ষেত্র বাংলাদেশে নেই। এর সমাধান একটাই, এবং সেটা হচ্ছে উদ্যোক্তা হওয়া। উদ্যোক্তারা নিজেদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আরও বিপুল সংখ্যক তরুণের কর্মসংস্থান করতে পারে। এসময় তিনি উদ্যোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, ঋণ সুবিধা ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরির করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
শিক্ষার্থী ও নবীন উদ্যোক্তাদের প্রতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ব্যবসা শুরু করার কোনো বয়স নেই। যেকোনো বয়সে যেকোনো সময়ে ব্যবসা শুরু করা যায়। তবে ব্যবসা শুরু করার আগে লক্ষ্য ঠিক করার পরামর্শ দেন ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি। তিনি বলেন, যেকোনো উদ্যোগ গ্রহণের আগে তিনটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত। এক. ১০০ টাকা আয় করলে ১০ টাকা সঞ্চয় করা, দুই. যেকোনো একটি ব্যবসার দিকে ফোকাস করা এবং তিন. প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করা। এসবের পাশাপাশি দেশপ্রেম থাকাটাও জরুরি বলে মনে করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় এই ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা। নিজের ব্যবসায়িক জীবনের উদাহরণ টেনে বলেন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর বিশ্বব্যাংকে চাকরির হাতছানি ছিল। কিন্তু যাইনি। কারণ, সদ্য স্বাধীন দেশটা তখন যুদ্ধবিধ্বস্ত। এই ধ্বংসপ্রায় দেশকে গড়ার জন্য দেশে ফিরে এলাম। সুতরাং যাই করো না কেন, মনের মধ্যে দেশপ্রেম রাখো।
সভাপতির বক্তব্যে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান বলেন, দেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ তরুণ উচ্চশিক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়, ঠিক সেই পরিমাণ কর্মসংস্থান নেই। তাই সবার জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে হলে বিপুল সংখ্যক উদ্যোক্তা তৈরি করা ছাড়া বিকল্প নেই। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি উদ্যোক্তা বিভাগ চালু করার পাশাপাশি উদ্যোক্তা উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে। তিনি বলেন, তরুণ শিক্ষার্থীদেরকে উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রাণিত করতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মধুমেলার আয়োজন করেছিল। বিশ্ব উদ্যোক্তা সপ্তাহ উৎযাপন, উদ্যোক্তা সম্মেলন ইত্যাদি কর্মকাণ্ড তরুণ শিক্ষার্থীদেরকে উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রাণিত করা প্রয়াস বলে জানান তিনি।
মো. সবুর খান আরও বলেন, প্রতিটি সমস্যা এক একটি সুযোগ। ঢাকা শহরের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ট্রাফিক জ্যাম। এই সমস্যা সমাধানের উপায় যিনি বের করতে পারবেন তার সামনে ব্যবসার দ্বার খুলে যাবে বলে মন্তব্য করেন মোঃ সবুর খান। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদেরকে সমস্যাকে ভয় না পাওয়ার আহ্বান জানান।
এছাড়া উদ্যোক্তা সম্মেলনে যোগ দিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন পাঁচজন নবীন উদ্যোক্তা। তারা হলেন, ব্রাইডাল ক্রিয়েশনের প্রধান নির্বাহী আবিদা সুলতানা, হানি বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এবাদুল্লাহ আফজাল, বিল্যান্সার ডটকমের প্রধান নির্বাহী মো. শফিউল আলম, বাই অ্যান্ড সেল এর প্রধান নির্বাহী আশিকুর রহমান খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক ও উদ্যোক্তা অধ্যাপক মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী।