চীনে বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ

চীনে বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ

  • মো. ফরিদ উদ্দিন মেহেদী

বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯-এর কারণে অনেকে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছেন। যার মূল একটি কারণ হচ্ছে পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা। তবে আশার বাণী হচ্ছে, বেশ কয়েকটা দেশে স্কলারশিপ কমার সম্ভাবনা অনেক কম যেমন চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ইত্যাদি। আমি যেহেতু দীর্য ৫ বছর ধরে চীনে আছি তাই আজ আমি আপনাদের সঙ্গে চীনে স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগগুলো আলোচনা করব।

চীন নামটা শুনলে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে একটা বিরূপ মনোভাব লক্ষ করা যায় কিন্তু চীনেই আমাদের জন্য রয়েছে ভালো স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ। প্রথমেই আমি চীনে পড়াশোনার কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা উল্লেখ করব।

সুবিধাসমূহ:

১.

চীনের স্কলারশিপগুলোর ফান্ড সরকার থেকে আসে সুতরাং আপনি একবার স্কলারশিপ পেলে মোটামুটি ৩-৪ বছর নিশ্চিন্ত।

২.

চীনের অধ্যাপকেরা অধিকাংশ খুবই ভালো। তাঁরা সর্বোচ্চটা চেষ্টা করেন তাঁর শিক্ষার্থীদের ঠিক সময় ডিগ্রি দেওয়ার জন্য।

৩.

প্রত্যেক অধ্যাপকের নিজস্ব প্রজেক্টের ফান্ড থাকে। অনেকেই সেই ফান্ড থেকে তাঁর ছাত্রদের মাসিক বা বার্ষিকভাবে টাকা দিয়ে থাকেন। যার ফলে স্কলারশিপের পাশাপাশি আর্থিকভাবে ছাত্ররা আরও বেশ কিছুটা লাভবান হন।

৪.

অধিকাংশ ইউনিভার্সিটিতে IELTS, GRE বা TOFEL চায় না।

৫.

চীনে মাস্টার্সের স্কলারশিপ পাওয়া বাকি দেশগুলোর তুলনায় অনেক সহজ। চীনে ফান্ডের অভাব নেই, মাস্টার্স এরপর পিএইচডি অথবা পিএইচডির পর postdoc–এর ভালো সুযোগ আছে।

৬.

আমাদের দেশের Social Science, Management, Arts School–এর শিক্ষার্থীদের জন্য বাইরের দেশে ফান্ডিং ম্যানেজ করা অনেক কঠিন হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে চীনে এসব বিষয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনার ভালো সুযোগ রয়েছে।

৭.

প্রতিটি ইউনিভার্সিটিতে ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের জন্য নিজস্ব আবাসিক এবং খাওয়াদাওয়ার জন্য মুসলিম ক্যানটিনের ব্যবস্থা আছে।

অসুবিধাসমূহ

ভাষাগত সমস্যাটা শুধু চীনে নয় আপনি ইংলিশ ভাষাভাষী দেশ বাদে যেকোনো দেশে যান না কেন এই সমস্যাটা কিছুটা হলেও আপনাকে সম্মুখীন হতে হবে। তবে চীনে আপনি যখন ইউনিভার্সিটিতে প্রথম সেমিস্টারে ক্লাস শুরু করবেন তখন থেকে আপনাকে ৬ মাস বা ১ বছর (স্কলারশিপের ক্যাটাগরির ওপর নির্ভর করে) একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি আপনাকে চীনা ভাষা শেখাবে। এই ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্সগুলো আপনাকে দৈনন্দিন জীবনে যে শব্দগুলো লাগে তা শেখাবে। যা আপনার অনেক কাজে দেবে। তবে ল্যাব মিটিংগুলোতে আপনি কিছুই বুঝতে পারবেন না, এমনকি ল্যাবে কাজের সময় আপনার ল্যাবের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কমিউনিকেশনে একটু সমস্যা হবে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে একাডেমিক–সম্পর্কিত কিছু চাইনিজ শিখে নিতে হবে। তাহলে আশা করা যায় আপনি এই সমস্যাটা অনেকটাই উত্তরণ করতে পারবেন।

স্কলারশিপের আবেদনের ধাপসমূহ:

১.

প্রথমে আপনাকে ইউনিভার্সিটির র‍্যাঙ্কিং বের করতে হবে, কারণ প্রথম সারির ইউনিভার্সিটিগুলোতে বেশি শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে আপনি গুগলে গিয়ে Chinese university ranking লিখে সার্চ দিয়ে যেকোনো ওয়েবসাইট থেকে রাঙ্কিংটা দেখে নিতে পারেন। প্রথম ২০-৩০টা ভার্সিটি আপনি টার্গেট করতে পারেন।

২.

এরপরের ধাপে আপনার রিসার্চ ইন্টারেস্ট অনুযায়ী আপনাকে প্রফেসর খুঁজে বের করতে হবে। ইউনিভার্সিটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ঘাঁটলে আপনি আপনার research interest অনুযায়ী সুপারভাইজার খুঁজে পাবেন। এ রকম কয়েকজন সম্ভাব্য সুপারভাইজারের তালিকা প্রস্তুত করুন।

৩.

এরপর তাঁদের ই–মেইল করেন। প্রতিবছর সেপ্টেম্বরে শিক্ষার্থী এনরোল হয় এবং আবেদনের শেষ সময় থাকে মার্চ ১৫-এপ্রিল ৩০–এর মধ্যে (ভার্সিটির ওপর নির্ভর করে)। সে ক্ষেত্রে প্রফেসরকে অক্টোবর থেকে ই–মেইল করা শুরু করে ভালো। সবচেয়ে ভালো হয় ই–মেইলের একটা template তৈরি করে নিলে। কোনো জায়গা থেকে করার দরকার নেই। সাজেশন পেতে পারেন বড় ভাই-আপুদের কাছ থেকে, বা গুগল ঘেঁটে।

৪.

কোনো প্রফেসর আপনাকে তার রিসার্চ গ্রুপে নিতে আগ্রহী হলে তার কাছ থেকে একটি acceptance letter নিয়ে নিন (লেটারের ফরম্যাট ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে দেওয়া থাকে। সেখান থাকে ডাউনলোড করতে পারবেন)। এই acceptance letter আপনার আবেদনের সময় জমা দিতে হবে।

৫.

এবার ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে গিয়ে স্কলারশিপ আবেদনের জন্য কী কী কাগজপত্র জমা দিতে হবে, সেটি দেখে সেগুলো প্রস্তুত করুন এবং জমা দিয়ে দিন।

৬.

সাধারণত জুন থেকে শুরু করে জুলাই বা আগস্ট এই সময়ের মধ্যে স্কলারশিপের রেজাল্ট চলে আসে। ভিসা প্রসেসিং করতে ১ সপ্তাহ লাগবে এবং স্পেটেম্বরর মাঝামাঝি আপনার সেমিস্টার শুরু হয়ে যাবে।

পরিশেষে বলতে চাই, ওয়ার্ল্ড র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ১০০ ইউনিভার্সিটির মধ্যে বর্তমানে ৬টি ইউনিভার্সিটি আছে চীনের এবং বর্তমান সময় অনেক ভালো ভালো রিসার্চ কিন্তু চীনে হচ্ছে। এখানে পড়াশোনা শেষ করে অনেকেই এখন ইউরোপ আমেরিকাসহ পুরো বিশ্বের বিভিন্ন জায়গাতে ভালো ভালো কাজ করছেন। তাই সময় নষ্ট না করে চীনকেও আপনি আপনার উচ্চশিক্ষার একটা গন্তব্যস্থান বানাতে পারেন।

*  মো. ফরিদ উদ্দিন মেহেদী : পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অব চায়না।

সূত্র: প্রথম আলো

Sharing is caring!

Leave a Comment