স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দুই শিল্পী পেলেন সংবর্ধনা
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও মুক্ত আসর-এর আয়োজনে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বলছি’ শীর্ষক এক আলোচনা, সম্মাননা প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আজ সোমবার (৪ ডিসেম্বর) ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৭১ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী শাহীন সামাদ ও তপন মাহমুদকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেন।। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মাননা অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার হামিদুল হক খান, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ এম এম হামিদুর রহমান, ক্যারিয়ার ডেভলপমেন্ট সেন্টারের পরিচালক আবু তাহের খান, মুক্ত আসরের উপদেষ্টা তারা রহমান, মুক্ত আসরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবু সাঈদ প্রমুখ। পরে ড্যারেফাডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কালচারাল ক্লাবের সদস্যদের অংশগ্রহণে মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় একাই অর্ধেক যুদ্ধ করেছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলীরা আর বাকি অর্ধেক যুদ্ধ করেছে সমরাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা। আমরা সেদিন অস্ত্র হাতে মাঠে ময়দানে যে পরিমাণ যুদ্ধ করেছি ঠিক একই পরিমাণ যুদ্ধ করেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা। তারা সেদিন কণ্ঠ দিয়ে যুদ্ধ না করলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ করা এতটা সহজ হতো না।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি ছিল না উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই শিল্পীদের কোনো স্বীকৃতি ছিল না। আমি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের স্বীকৃতির ব্যবস্থা করেছি। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেননি কিন্তু বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন, সেবা করেছেন এবং সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন তাদের সবাইকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এসময় মন্ত্রী বলেন, আমার জীবনে অহংকার করার মতো মাত্র দুটি ঘটনা রয়েছে। একটি হচ্ছে ৭১ সালে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আরও বলেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অবদানের কথা তৃণমূল পর্যায়ে সর্বসাধারণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। এজন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। এসময় তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও মুক্ত আসরকে ধন্যবাদ জানান এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য।
সম্মাননা অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে শিল্পী শাহীন সামাদ বলেন, একটা দেশের জন্মের লড়াইয়ের সঙ্গে নিজের কণ্ঠ দিয়ে যুক্ত থাকতে পেরেছিলাম বলে নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করি। এখনকার তরুণ প্রজন্মও নিজেদেরকে সেই সৌভাগ্যের অংশীদার করতে পারবে যদি তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ গড়ার কাজে অংশ নিতে পারে। এসময় তিনি তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা তোমাদেরকে একটি স্বাধীন দেশ দিয়েছি, এখন তোমাদের দায়িত্ব সেই দেশটাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে গড়ে তোলা।
অনুষ্ঠানে শাহীন সামাদ খালি কণ্ঠে ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই’ গানটি গেয়ে শোনান।
অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অপর শিল্পী তপন মাহমুদ বলেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের জন্য ছোট্ট দুইটা ঘর ছিল। একটাতে ছেলে শিল্পীরা থাকতেন আর একটাতে মেয়ে শিল্পীরা। ঘর দুটোয় গাদাগাদি করে আমরা থাকতাম, শোবার মতো বিছানা ছিল না, খবরের কাগজ বিছিয়ে ঘুমাতাম, তিনবেলা খাবার পেতাম না, অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হতো। বড় কিছু অর্জন করতে হলে এ রকম ছোট ছোট ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছে, এই দেশকে শোষণ-বঞ্চনা ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত ভাবে গড়ে তুলতে হলে এরকম অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আশা করি লক্ষ প্রাণের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা তোমরা নস্বাৎ হতে দেবে না।
অনুষ্ঠানে তপন মাহমুদ ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’ গানটি গেয়ে শোনান।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সব সময় বদ্ধ পরিকর। এজন্য ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় মাঝে মাঝেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। আজ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দুজন গুণী শিল্পী ও কণ্ঠযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিতে পেরে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় গর্ব বোধ করছে বলে জানান অধ্যাপক ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম। ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।