জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করবেন কীভাবে?

জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করবেন কীভাবে?

  • আমিনুর রহমান

পড়াশোনার জন্য জার্মানিতে আবেদন করার স্বপ্ন থাকে অনেকেরই। কিন্তু কীভাবে আবেদন করতে হয়, নিজে করব নাকি এজেন্টের মাধ্যমে করব ইত্যাদি রকমের ভাবনা নিয়ে অনেকের দিন পার হয়ে যায়; যদিও আবেদন করা কঠিন কিছু নয়। খারাপ এজেন্টের খপ্পরে পড়লে এই সহজ কাজই দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে যায়।

এই আবেদনপ্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ সবকিছুকে একটি আর্টিকেলের মধ্যে আনার চেষ্টা করে দেখা যাক।

ধাপ ১: সেলফ অ্যাসেসমেন্ট ও রিকোয়ারমেন্ট অর্জন

যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার আগে দেখতে হবে, সেখানে কী কী চাওয়া হয়েছে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চাওয়া হচ্ছে প্রিভিয়াস একাডেমিক রেকর্ডস। সিজিপিএ। ব্যাচেলরের জন্য এইচএসসি সিজিপিএ। মাস্টার্সের জন্য ব্যাচেলরের সিজিপিএ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মাস্টার্স কোর্সের জন্য ব্যাচেলরে বাংলাদেশি স্কেলে সিজিপিএ ৩.০+ থাকলেই নিরাপদ ধরা হয়। সেই সঙ্গে ২.৫+ নিয়েও মোটামুটি মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশন ম্যানেজ করার অনেক উদাহরণ আছে।

পুরোপুরি ইংরেজি ভাষায় কোর্স করতে চাইলে আইইএলটিএস স্কোর অবশ্যই দরকারি। সাড়ে ৫ থেকে ৭ দশমিক ৫ এই সীমার মধ্যে স্কোর চাওয়া হতে পারে। মনে রাখা ভালো, বিজনেস রিলেটেড সাবজেক্টে কিছু বেশি আইইএলটিএস স্কোর তুলনামূলক বেশি চেয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে মিডিয়াম অব ইনস্ট্রাকশন দিয়ে অ্যাডমিশন কিছু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজ করা যেতে পারে। কিন্তু আটকে যাবে ভিসায়। ইংরেজি মাধ্যমে যেতে চাইলে অ্যাম্বাসিতে আইইএলটিএস স্কোর দেখাতে হবে।

আপনার কোর্স যদি জার্মান ভাষায় হয়, তাহলে জার্মান স্কেলে বি১ অথবা বি২ পর্যন্ত সার্টিফিকেট থাকতে হবে। ভিসার সময় জার্মান ভাষায় কিছু প্রশ্ন করা হবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

দরকারি আরও তথ্য

১. <gaabbd.com/types_of_university>

২. <gaabbd.com/when_and_how_to_apply>

৩. <gaabbd.com/german_grading_scale>

৪. <gaabbd.com/recognized_universities_in_germany>

৫. <gaabbd.com/before-coming-germany/>

বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজা

বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজার জন্য অনেকের কাছে অনেক কিছু প্রয়োরিটি পায়। সহজ কথায়, আপনার প্রোফাইল মানে সিজিপিএ/আইইএলটিএস যদি খুব ভালো হয়, তাহলে অনেক প্যারামিটার দেখে বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজতে পারেন। সিজিপিএ কম থাকলে অল্পের মধ্যেই সন্তুষ্ট থাকা ভালো।

বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজার জন্য প্রথমেই দেখা উচিত সাবজেক্ট কতটা ইন্ডাস্ট্রি ওরিয়েন্টেড। যেমন কিছু কোর্স আছে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং। নির্দিষ্ট কোনো ফোকাস নেই। কিছু আছে কম্পিউটার সায়েন্সের শুধু সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে। বোঝাই যাচ্ছে, সাইবার সিকিউরিটি একটি নির্দিষ্ট ফিল্ড। এখন ধরা যাক, দুজন পাস করে বের হলো। জব মার্কেটে একটি ইন্টারনেট সিকিউরিটিবিষয়ক পোস্ট আছে। এই দুজনের মধ্যে সবার আগে ডিমান্ড পাবে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে গ্র্যাজুয়েট।

যদি পার্টটাইম জব করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে শহর গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। সেই সঙ্গে খরচের ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে। বড় শহর মানে বেশি পার্টটাইম জব। আবার খরচাপাতি বেশি।

বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজার জন্য সবচেয়ে বিশ্বস্ত মাধ্যম হচ্ছে DAAD ওয়েবসাইট। এখানে আপনার প্রোফাইল ও প্যারামিটার সেট করে দিলে সম্পর্কিত সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্স লিংক চলে আসবে। আপনার কাজ হচ্ছে সেখান থেকে বেস্ট ম্যাচ খুঁজে নেওয়া।

দরকারি আরও তথ্য

১. <gaabbd.com/course_searching/>

২. <gaabbd.com/select_number_of_university/>

ধাপ ২: আবেদন ও রিকোয়ার্ড ডকুমেন্টস

জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন দুভাবে হতে পারে। ইউনি-অ্যাসিস্ট। সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট। কোথায় আবেদন করতে হবে, সে বিষয়টি আগে নিশ্চিত হয়ে সেভাবে এগোতে হবে।

জার্মান সব কোর্সে আবেদন এক রকম হয় না। কোথাও লেটার অব মোটিভেশন চাইতে পারে। কোথাও লেটার অব রেকমন্ডেশন। কোথাওবা ডকুমেন্ট অ্যাম্বাসি থেকে সার্টিফাই করতে বলবে। কোথাও নোটারি অথবা কোনো সার্টিফিকেশন চাইবে না। বোঝাই যাচ্ছে, কোর্স অনুযায়ী সব আলাদা। ওয়েবসাইট ঘেঁটে অথবা কোর্স কো–অর্ডিনেটরকে ই–মেইল করে এই ডকুমেন্টস তালিকা জেনে নিতে হবে।

কমপ্লিট আবেদন

ইউনি–অ্যাসিস্টে আবেদন করার জন্য সবার আগে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। সেখান থেকে দরকারি কোর্সের নাম ম্যাচ করে আবেদন করতে হয়। সেই সঙ্গে দরকারি সব ডকুমেন্টের সফট কপি আপলোড করতে হয়। পেমেন্ট দেওয়া ও হার্ড কপি ডকুমেন্টস পাঠানোর মাধ্যমে আপনার আবেদন নিশ্চিত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি আবেদনের সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সফট কপি দিয়ে বা আপলোড করে কাজ শেষ করা যায়। অনেক সময় পেমেন্ট দেওয়ার ঝামেলাও নেই।

হার্ড কপি পাঠানো

ইউনি–অ্যাসিস্টে আবেদনের জন্য ডকুমেন্টস হার্ড কপি হিসেবে পাঠানো বাধ্যতামূলক। সবার আগে ইউনি–অ্যাসিস্ট থেকে আবেদন কপি ডাউনলোড ও সাইন করতে হয়। সেই সঙ্গে সাপোর্টিং সব ডকুমেন্টস একসঙ্গে করে পাঠাতে হবে।

মনে রাখা ভালো, ডেডলাইনের অন্তত এক সপ্তাহ আগে ডকুমেন্টস পাঠানো উত্তম। পাঠানোর জন্য ডিএইচএল, ফেডেক্স অথবা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করতে পারেন।

দরকারি আরও তথ্য

১. <gaabbd.com/uni-assist_application_atoz/>

২. <gaabbd.com/documents_sending_for_uniassist/>

ধাপ ৩: ভর্তি ও অ্যাডমিশন লেটার

সাধারণত অ্যাডমিশন পাওয়ার পর ই–মেইলে জানানো হয়। অধিকাংশ সময় সেই ই–মেইলে অ্যাটাচমেন্ট হিসেবে সফট কপি/স্ক্যান কপি অফার লেটার পাঠানো হয়। সেই সঙ্গে এক কপি কুরিয়ার করেও পাঠানো হয়। এই কপি আপনার বাসার বেশির ভাগ সময় পৌঁছাবে না।

কাজেই এই কপি পাওয়া মাত্র পরের কাজগুলোয় ঝাঁপিয়ে পড়ুন। যদি ই–মেইলে কোনো স্ক্যান কপি না পাঠানো হয়, অনুরোধ জানান। সময় নষ্ট মানে আপনি পিছিয়ে পড়বেন।

প্রতীকী ছবি। সূত্র: ইন্টারনেট

অ্যাকোমডেশন

অ্যাডমিশন পাওয়ার পর প্রথম কাজই হচ্ছে অ্যাকোমডেশন খোঁজা। যত আগে খুঁজবেন, প্রেশার পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। দেরি করা মানেই সম্ভাবনা কমতে থাকা।

জার্মানিতে স্টুডেন্ট হোস্টেল ‘স্টুডেন্টভার্খ’ নামে পরিচিত। পাশাপাশি সব সিটিতেই প্রাইভেট হাউজিং ও শেয়ারড অ্যাপার্টমেন্ট বা ভিগে থাকে।

ব্লক অ্যাকাউন্ট

জার্মানিতে পুরো বছরের অ্যাকোমডেশন খরচ হিসেবে মাসে ৭২০ ইউরো হিসেবে প্রায় ৮ থেকে ৯ হাজার ইউরো নিয়ে ব্লক অ্যাকাউন্ট করতে হয়। ফিনটিবা অথবা ডয়েচ ব্যাংক—এই দুই মাধ্যমে ব্লক অ্যাকাউন্ট করা যায়। ফিনটিবায় অনেক দ্রুত হবে। ডয়েচ ব্যাংক ধীরগতির।

দরকারি আরও তথ্য

১. <gaabbd.com/todo_after_admission/>

২. <gaabbd.com/expenses_to_apply_in_germany/>

ধাপ ৪: ভিসা প্রসেসিং ও ভিসা ডেট বুকিং

অ্যাডমিশন লেটার পাওয়ার পরপরই ভিসার জন্য ডেট বুকিং দিতে হবে। চাইলে অ্যাডমিশন লেটার হাতে আসার আগেও দেওয়া যায়। অনেক সময় ভিসার ডেট নিয়ে কৃত্রিম সংকট হয়। যা থেকে বাঁচতে আগে বুকিং দেওয়ার বিকল্প নেই।

লিংক: <service2.diplo.de/rktermin/extern/choose_categoryList. do? locationCode=dhak&realmId= 420>

ভিসার জন্য দরকারি ডকুমেন্টস

ভিসা আবেদনের জন্য পাসপোর্ট, ছবি, ভিসা ফরম, ব্লক মানি ডিপোজিট, ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স, একাডেমিক ডকুমেন্টস থাকতে হবে। সেই সঙ্গে এসব ডকুমেন্টের দুই সেট ফটোকপি ভিসা সাক্ষাৎকারের দিন সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।

ভিসা প্রাপ্তির সময়     

স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসে সাধারণত ২০ থেকে ৩০ দিন সময় লাগে। কিছু ক্ষেত্রে আরও কম বা বেশি লাগতে পারে। ব্যাচেলর স্টুডেন্টের জন্য দুই-তিন গুণ বেশি সময় লাগতে পারে।

দরকারি আরও তথ্য

১. <gaabbd.com/required_documents_for_german_visa>

২. <gaabbd.com/questions-in-visa-interview/>

৩. <gaabbd.com/complexity-about-visa/>

সর্বোপরি ইউনিভার্সিটি সিলেকশন ও গাইডলাইনের জন্য সিনিয়র ভাইবোনদের থেকে অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করুন। সহযোগিতার জন্য: <facebook.com/groups/gaabbd/>

আমিনুর রহমান: শিক্ষার্থী, মার্টিন লুথার ইউনিভার্সিটি, জার্মানি।

সূত্র : প্রথম আলো

Sharing is caring!

Leave a Comment