তুরস্কে বৃত্তি নিয়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ
- লাবিব ফয়সাল
বিশ্ব রাজনীতি আর ভৌগোলিক অবস্থানের ভিন্নতার কারণে তুরস্ক বরাবরই আলোচিত। আর দেশকে খুব দ্রুত উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিতে পারার যোগ্যতা বেশ চমকপ্রদ। তবে রাষ্ট্রটির মূলে রয়েছে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা। তুরস্কের শিক্ষা ব্যবস্থা পুরো ইউরোপের দেশগুলোর মাঝে সেরা দশে আছে। তুরস্কে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ের প্রথম সারির দিকে। তুরস্কের শিক্ষা ব্যবস্থায় মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরগুলোই বেশ উন্নত।
ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তাশীল যে কেউ আজকাল বিদেশে উচ্চশিক্ষার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তাই উন্নত দেশগুলোর দেওয়া শিক্ষাবৃত্তিতে আবেদনের হার প্রতিবছরই বেড়ে চলেছে। দুই দশক থেকে নানা কারণে আলোচনার শীর্ষে থাকা দেশ তুরস্কও সব প্রয়োজনীয় সুযোগ–সুবিধা দিয়ে প্রতিবছরের মতো এ বছরও তাদের সরকারি শিক্ষাবৃত্তির ঘোষণা দিয়েছে। পৃথিবীর প্রায় ১৮০টি দেশ থেকে এই শিক্ষাবৃত্তির জন্য আবেদন করে থাকেন শিক্ষার্থীরা। বৃত্তিপ্রাপ্তরা তুরস্কের ৫৫টি শহরে প্রতিষ্ঠিত শতাধিক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকেন।
বৃত্তিতে কী কী সুযোগ শিক্ষার্থীদের
* বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও টিউশন ফি
* এক বছরের ভাষা কোর্স
* আবাসন ও খাবার
* স্বাস্থ্যবিমা
* মাসিক সম্মানী ভাতা (স্নাতক ৮০০ লিরা, স্নাতকোত্তর ১,১০০ লিরা ও পিএইচডিতে ১,৬০০ লিরা দেওয়া হয়)। ১ লিরা সমান ১১ টাকার বেশি।
* প্রথমবার যাওয়া ও পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফেরার বিমান টিকিট।
আবেদনকারীর যোগ্যতা
স্কলারশিপে আবেদন করতে হলে স্নাতকের জন্য এসএসসি বা সমমান ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ এবং স্নাতকোত্তর-পিএইচডির জন্য স্নাতক-স্নাতকোত্তরে ৭৫ শতাংশ নম্বর থাকতে হয়। তবে মেডিকেলে ভর্তি হতে চাইলে ৯০ শতাংশ নম্বর লাগবে। তুরস্কে পড়াশোনার ভাষা তুর্কি হলেও কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজিতে পড়ার সুযোগ দেয়। এ ক্ষেত্রে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী টোফেল বা জিআরই স্কোর থাকতে হয়। আইইএলটিএস (IELTS) স্কোর তুরস্কে গ্রহণযোগ্য নয়।
বি. দ্র. অনার্সের জন্য এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ মার্ক সমান বাংলাদেশের জিপিএ-৩.৪০। মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য: এসএসসি ও এইচএসসিতে ৭৫ শতাংশ মার্ক সমান বাংলাদেশের জিপিএ-৩.৬৭ এবং অনার্সে সিজিপিএ-২.৯৩ (মাস্টার্সের জন্যও প্রযোজ্য)। তবে মেডিকেলের জন্য দুটোতেই গোল্ডেন ৫ থাকা চাই।
বয়সসীমা
* স্নাতকের জন্য আবেদন করতে বয়স হতে হবে ২১ বছরের নিচে।
* স্নাতকোত্তরে আবেদনের বয়স ৩০ বছরের নিচে।
* পিএইচডি ৩৫ বছরের নিচে।
* আর রিসার্চ প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে বয়স হতে হবে ৪৫ বছরের নিচে।
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
* সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
* পাসপোর্ট অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্মসনদের স্ক্যান কপি। (ইংরেজি কপি হতে হবে)
* এসএসসি বা দাখিল এবং এইচএসসি বা আলিমের মূল সার্টিফিকেট ও মার্কশিটের স্ক্যানকপি। (কোথাও থেকে সত্যায়িত করতে হবে না।)
* সব পরীক্ষার সার্টিফিকেট।
* সব পরীক্ষার মার্কশিট।
* জন্মনিবন্ধন (ইংরেজিতে), জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্টের স্ক্যান কপি।
* টোফেল ও জিআরই ইত্যাদির সার্টিফিকেট (যদি থাকে)।
* দুটি রেফারেন্স লেটার (বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের হলে ভালো হয়)।
* যত ধরনের এক্সট্রা কারিকুলার সার্টিফিকেট আছে (রচনা প্রতিযোগিতা, স্কাউট, বিএনসিসি, জিপিএ–৫ সংবর্ধনা, কোনো এনজিও বা অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করা ইত্যাদি)।
আবেদনের সময়
নতুন সেশনে আবেদন ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। আবেদন শেষ হবে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি, শনিবার। আগ্রহীরা এ সময়ের মধ্য আবেদন সম্পন্ন করবেন।
আবেদনের ঠিকানা
তুরস্কের শিক্ষাবৃত্তির জন্য আবেদন অনলাইনে করতে হয়। আর পুরো প্রক্রিয়াই হয় বিনা মূল্যে। আগ্রহীরা আবেদন করতে পারবেন https://turkiyeburslari.gov.tr/ ওয়েবসাইট থেকে।
চাইলে নতুন আবেদনকারী শিক্ষার্থীরা তুরস্কে পড়াশোনা করা বাংলাদেশিদের ফেসবুক গ্রুপেও প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য যোগাযোগের সুযোগ আছে। https://www.facebook.com/groups/TurkeyScholarshipBD
* লেখক: লাবিব ফয়সাল, সাংবাদিকতা বিভাগ, সেলজুক বিশ্ববিদ্যালয়, কনিয়া, তুরস্ক