‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় ভূমিকা রাখছে ড্যাফোডিল’
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রসংশনীয় ভূমিকা পালন করছে বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।তিনি বলেন, শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি করা বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য এবং আদর্শ জাতি গঠনে নৈতিক শিক্ষা খুবই জরুরী যা অর্জনে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা প্রশংসনীয়। আজ বুধবার (১০ জানুয়ারি) ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) ৭ম সমাবর্তনে ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতিত্বকালে তিনি এসব কথা বলেন্।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রকল্প কৃষিভিত্তিক প্রসেসড ফুডসের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতেও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অবদান রাখছে। এসময় তিনি বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসর এসোসিয়েশনের সাথে এমওইউ স্বাক্ষর করায় ড্যাফোডিল কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তাদের শিক্ষকদের গবেষণায় অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি চুক্তির মাধ্যমে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে যেতে পারছেন। শিক্ষার মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে এরকম পদক্ষেপ সত্যিই আশাব্যঞ্জক।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, আমরা সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকারী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না। তবে যে সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া তারা আর কোন পথ খোলা নেই। এসময় তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ব্যবসা ও মুনাফার চিন্তা ত্যাগ করে জনকল্যাণে, সেবার মনোভাব ও শিক্ষার জন্য অবদান রাখার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
ঢাকার আশুলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা মিলনায়তনে আয়োজিত সমাবর্তনে আরো বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, সমাবর্তন বক্তা ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্টস এর সভাপতি এবং জর্জিয়ার ককেসাস ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ড. কাখা শিঙ্গেলিয়া, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর
ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম এবং ইউনিভার্সিটির ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান ও বিভিন্ন অনুষদের ডিনগন।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা কাখা সিঙ্গেলিয়ার বলেন, ভবিষ্যৎ পৃথিবীর উন্নয়ন নির্ভর করছে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর; আর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সেই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির কাজই করছে। এজন্য এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আমাদের আরও বেশি বেশি প্রয়োজন। আমাদের মানবসম্পদকে আরও বেশি বেশি দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা দরকার। আমি বিশ্বাস করি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গ্রাজুয়েটরা অত্যন্ত দক্ষ। তারা তাদের মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতার মাধ্যমে দেশ ও জাতির সেবা করবে এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধি করবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কাখা সিঙ্গেলিয়া বলেন, তোমরা এখন জীবনযুদ্ধে প্রবেশ করতে যাচ্ছ। এই যুদ্ধে সফল হতে হলে তোমাদেরকে কিছু স্বতন্ত্র কৌশল অবলম্বন করতে হবে। প্রথমত: তোমার জীবনের একটি সুচিন্তিত লক্ষ্য থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত: একজন স্বশাসিত শিক্ষার্থীর মতো তোমাকে সারাজীবন ধরে জ্ঞান আহরণ করতে হবে। তৃতীয়ত: সততার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং চতুর্থত: জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য অধ্যবসায়ী হতে হবে। এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কাঙ্খিত সাফল্য পেতে হলে বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে পরিশ্রম করে যেতে হবে। লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিজের আইডিয়া ও কাজকর্ম প্রতিনিয়ত মূল্যায়ন করতে হবে।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা অনেকটা জ্যামিতিক হারে বেড়েছে। পাঠদান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রাথমিক কাজ। তবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উপনীত হতে গেলে তাকে গবেষণা কার্যক্রমে গুরুত্ব প্রদান করতে হয়। গবেষণা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মূলত সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত হয় যা আমাদের কাম্য নয়। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে একটি মানসম্পন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও এর পরিচিতি রয়েছে। এজন্য আমি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি পরিবারকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
সমাবর্তনে ৩ হাজার ৪৯৮ জন নবীন গ্র্যাজুয়েট শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে সনদ গ্রহণ করেন। এবারের সমাবর্তনে পঁচ জন গ্র্যাজুয়েটকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। এরা হলেন পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্টের সাদিয়া আফরোজ, পঙ্কজ কুমার সাহা, তামাতুন ইসলাম তানহা, ইটিই বিভাগের মোহাম্মদ জাকারিয়া ভূইয়া, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ইপসা আনিকা ও সিএসই ডিপার্টমেন্টের মো. রিয়াজুর রহমান।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনকারী ১৫ জন গ্র্যাজুয়েটকে স্বর্ণপদক প্রদান করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে মন্ত্রী সমাবর্তন শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন। উল্লেখ্য, ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ডিআইইউ ১৭ টি বিভাগে ২৫ হাজার শিক্ষার্থীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করেছে।