আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা পাবে ‘শিক্ষার জন্য সহায়তা’
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
উচ্চশিক্ষা গ্রহণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও অদম্য মেধাবী অথচ আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল—এমন শিক্ষার্থীদেরকে ‘শিক্ষা সহায়তা’ দেবে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ কার্যক্রমে সহায়তা করবে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (বিডি ফাইন্যান্স)। এ উদ্দেশ্যে আজ ১০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ মিলনায়তনে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও বিডি ফাইন্যান্সের মধ্যে এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিক্ষাঋণের বিষয়টি বিস্তারিতভাবে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাষ্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (বিডি ফাইন্যান্স) এর চেয়ারম্যান ও আনোয়ার গ্রুপের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর মানোয়ার হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইউসুফ এম ইসলাম, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম মাহাবুব উল হক মজুমদার, ড্যাফোডিল পরিবারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান ও বিডি ফাইন্যান্সের উপদেষ্টা শফিকুর রহমান প্রমুখ । ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার হামিদুল হক খান ও বিডি ফাইন্যান্সের উপ-মহাব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমাযূন শোয়েব নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নতুন ভর্তি হওয়া স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষাসহায়তার আওতাভুক্ত হবেন। শিক্ষার্থীরা মাসিক কিস্তিতে পরিশোধের ভিত্তিতে বিডি ফাইন্যান্সের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করতে পারবে।
অনুষ্ঠানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান বলেন, অনেক শিক্ষার্থী আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না। আবার অনেক সময় দেখা যায় পড়ালেখার মাঝপথে পরিবারের প্রধান উপার্যনক্ষম ব্যক্তির হঠাৎ কোন দূর্ঘটনার শিকার অথবা আকস্মিক মৃত্যুর ফলে কোনো শিক্ষার্থীর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এসব শিক্ষার্থীদেরকে সহায়তা করার জন্যই এই শিক্ষাসহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সময় মো. সবুর খান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেন, এটি একটি নতুন প্রকল্প। সেজন্য স্বাভাবিকভাবেই অনেক সমস্যা দেখা দেবে। সমস্যাগুলোকে আন্তরিকভাবে মেকাবেলা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন মো. সবুর খান। তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অনৈতিক কাজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পওয়া যায়নি। অতএব, তারা অনেক দায়িত্বের সঙ্গে এই আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করবে—এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
ড. মো. সবুর খান আরও বলেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শুরু থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করার চেষ্টা করে আসছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি এ পর্যন্ত ১৯ হাজার শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে ল্যাপটপ প্রদান করেছে। আরও দুই হাজার ২০০টি ল্যাপটপ প্রদান করা হবে আগামীকাল। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যারা প্রতিটি শিক্ষার্থীকে জীবনবিমার আওতাভূক্ত করেছে। এছাড়া বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ই ব্যাংকের মাধ্যমে টিউশন ফি গ্রহণ শুরু করে, যা এখন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় অনুসরণ করছে। এর ধারাবাহিকতায় ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় আরো একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করল শিক্ষার্থীদেরকে ‘শিক্ষাসহায়তা’ প্রদান শুরু করার মাধ্যমে।
সংবাদ সম্মেলনে বিডি ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়, কিন্তু তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যেতে পারে না। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে না পারার অন্যতম কারণ হচ্ছে আর্থিক অস্বচ্ছলতা। এখন থেকে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে এই অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের সহায়তা করবে বিডি ফাইন্যান্স।
মনোয়ার হোসেন আরো জানান, এই আর্থিক সহায়তা প্রদানকে তিনি ঋণ হিসেবে দেখছেন না, এমনকি সিএসআর (কর্পোরেট সোস্যাল রেসপন্সিবিলিটি) হিসেবেও দেখছেন না। তিনি এটাকে দেখছেন তার দায়িত্ব হিসেবে। তিনি বলেন, আমার বাবা ( আনোয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আনোয়ার হোসেন) সারাজীবন চেষ্টা করেছেন শিক্ষাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে। সমাজের প্রতি বাবার এই দায়িত্ববোধ আমি এখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে মনোয়ার হোসেন বলেন, বাইরের দেশে বাংলাদেশ আর কত ড্রাইভার, শ্রমিক পাঠাবে? এখন সময় এসেছে বিশ্বের বুকে শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী, শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবীদ, শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তিবিদ পাঠানোর। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশ শিক্ষার মাধ্যমে পুরো বিশ্বকেই বদলে দেবে। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরি করেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অগ্রযাত্রায় বিডি ফাইন্যান্স যুক্ত হতে পেরে গর্ববোধ করছে বলে জানান মোনোয়ার হোসেন।