ড্যাফোডিলে ‘এনএফই ক্যারিয়ার এক্সপো’ শুরু
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
বাংলাদেশে ঋতুভিত্তিক উৎপাদিত শাক-সবজি, ফল-মূল ও প্রাণিজ খাদ্যচক্রের কাঁচামাল সংরক্ষণের কার্যকর প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য প্রকৌশল বিভাগের গবেষকরা। সিরডাপের সাথে যৌথ গবেষণা চালিয়ে ‘মাল্টি কমিডিটি সোলার টানেল ড্রায়ার প্লান্ট’ শীর্ষক এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন মৌসুমে দেশে উৎপাদিত ফল-মূলসহ কৃষিজাত পণ্য সহজেই দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করা যাবে।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু আজ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফুড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (এনএফই) আয়োজিত ‘ডিআইইউ এনএফই ক্যারিয়ার এক্সপো-২০১৮’ এবং ‘মাল্টি কমোডিটি সোলার টানেল ড্রায়ার প্লান্ট’ শীর্ষক প্রযুক্তির উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন। সাভারের দত্তপাড়ায় ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে দু’দিন ব্যাপী এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসর্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি এএফএম ফখরুল ইসলাম মুনশি, আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ এ সারওয়ার, আইসিডিডিআর’বির পুষ্টি ও চিকিৎসাসেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মাহবুব উল হক মজুমদার। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন এলাইড হেলথ সায়েন্সস অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. আহমেদ ইসমাইল মোস্তফা, পুষ্টি ও খাদ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মোঃ বিল্লাল হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পুষ্টি ও খাদ্য প্রকৌশল বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ফৌজিয়া আকতার ও এডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি ড. আমির আহমেদ। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পুষ্টি ও খাদ্য প্রকৌশল বিভাগ (এনএফই) আয়োজিত দুই দিনের এই ক্যারিয়ার এক্সপোতে সহযোগিতা করছে বাপা এবং ক্যারিয়ার পার্টনার হিসেবে রয়েছে স্কিল ডট জবস। ক্যারিয়ার এক্সপো উদ্বোধনের পর শিল্পমন্ত্রী বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন এবং এরপর মাল্টি-কমোডিটি সোলার টানেল ডায়ার প্ল্যান্ট উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দেশের ক্রমবর্ধমান জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে আমরা খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬তে কৃষি/খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারী শিল্পকে উচ্চ অগ্রাধিকারখাতের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। একই সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যখাতের উন্নয়নে ইতোমধ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে সরকার রপ্তানির বিপরীতে ২০% ভর্তুকি দিয়ে আসছে। ফলে দেশে দ্রুত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পখাত বিকশিত হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করছে।
দেশে এখন ২শ’ ৪৬টি উন্নতমানের মাঝারি আকারের খাদ্য উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকলেও এগুলোতে দক্ষ কারিগরি জনবল এবং উন্নত প্রযুক্তির অভাব রয়েছে। অঅমাদেও গ্যাজুয়েটরা চাকরি খুঁজে না পেলেও দেশিয় শিল্প কারখানাগুলো বিদেশি কারিগরি জনবলের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে । এর ফলে প্রতি বছর প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চলে যাচ্ছে। এ প্রবনতা ঠেকাতে তিনি কার্যকর ইউনিভার্সিটি –ইন্ডাস্ট্রি লিংকেজ স্থাপনের পরামর্শ দেন। তিনি দেশের শিল্প কারখানায় যে ধরনের দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল প্রয়োজন, বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে সে ধরনের জনবল তৈরির উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং (এনএফই) বিভাগ, সিরডাপ এবং ফিলমেক এর প্রযুক্তিবিদরা যৌথভাবে এই মাল্টি-কমোডিটি সোলার টানেল ডায়ার প্ল্যান্ট উদ্ভাবন করেছে যার মাধ্যমে বিভিন্ন মৌসুমে বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের সংরক্ষণ অধিকতর সহজ হবে।
বিশ্বব্যাপী হালার খাদ্যেও চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে উল্লেখ করে আমির হোসেন আমু বলেন, ২০১৪ সালে বিশ্বে হালাল খাদ্যের পরিমাণ ছিল ৭৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯ সাল নাগাদ এর পরিমাণ হবে ৩.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। হালাল খাদ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বাংলাদেশের জন্য সুফল বয়ে এনেছে। অভ্যন্তরীন ও অঅন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে তিনি দেশেই আধূনিক প্রযুক্তির খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকররণ শিল্প গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।
উদ্বোধনের পর পরই এলাইড হেলথ সায়েন্সস অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. আহমেদ ইসমাইল মোস্তফার সঞ্চালনায় ‘বাংলাদেশেরপুষ্টি ও খাদ্য খাতের দক্ষ জনশক্তির শূন্যতা বিশ্লেষণ’ শীর্ষক একটি গোল টেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ডিআইইউ এনএফই ক্যারিয়ার এক্সপোতে ৪০টির ও বেশী কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন স্টলের মাধ্যমে তাদের পন্য ও সেবা প্রদর্শন করছে।