‘বাংলাদেশ হবে সিঙ্গাপুর তাইওয়ানের চেয়েও উন্নত’
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনাময় দেশ। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ খুব দ্রুতই সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও তাইওয়ানের চেয়ে উন্নত দেশে পরিণত হবে বলে মনে করেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল। এজন্য নিজের ইচ্ছাশক্তি, মেধা ও পরিশ্রমকে ব্যবহার করতে তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই সফল শিল্পোদ্যোক্তা। আজ সোমবার (৩০ জুলাই) ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৭১ মিলনায়তনে আয়োজিত “উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ক ডিআইইউ ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া বক্তৃতামালা” অনুষ্ঠানের ১৩তম পর্বের বক্তৃতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এসব কথা বলেন। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাষ্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নিযুক্ত কোরিয়া দূতাবাসের সেকন্ড সেক্রেটারি চো মিং ইয়ং, মেঘনা গ্রুপের পরিচালক ও মোস্তফা কামালের জ্যেষ্ঠ কন্যা তাহমিনা মোস্তফা, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইউসুফ এম ইসলাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ডেভেলাপমেন্ট সেন্টারের পরিচালক মো. আবু তাহের খান। এছাড়া অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মেঘনা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও মোস্তফা কামালের স্ত্রী বিউটি আক্তার, মেঘনা গ্রুপের পরিচালক ও মোস্তফা কামালের কনিষ্ট কন্যা তানজিনা মোস্তফা, মোস্তফা কামালের জামাতা তাইফ ইউসুফ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম মাহবুব উল হক মজুমদার, কোষাধ্যক্ষ মো. হামিদুল হক খান, রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম ফজলুল হক প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬০ ডিগ্রি এমপ্লবিলিটি কোর্সের সমন্বয়ক মো. সোহাগ মিয়া।
উদ্যোক্তা হওয়ার পথে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের গল্প বলতে গিয়ে মোস্তফা কামাল বলেন, মাত্র ১৭৫ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নেমেছিলাম। এখন মেঘনা গ্রুপের বার্ষিক টার্নওভার ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এই সফলতার পথ মোটেও মসৃন ছিল না। কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। দিনে ১৮ ঘণ্টারও বেশি কাজ করেছি। নিজেকে ‘কামলা’ পরিচয় দিয়ে এই সফল শিল্পোদ্যক্তা আরো বলেন, কাজ না করলে তার ভালো লাগে না। সারাদিন কাজের মধ্যে ডুবে থাকতেই পছন্দ করেন। যতটুকু অবসর পান, সেই সময়ে বই পড়েন। জেনারেল পারভেজ মোশাররফের লেখা বই ‘অন দ্যা ফায়ার’ এবং স্টিফেন মেয়ারের লেখা ‘মিডনাইট সান’ তাঁর জীবনদর্শন বদলে দিয়েছে বলে জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মোস্তফা কামাল বলেন, তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে হাতের নাগালেই সব পাওয়া যায়। ঘরে বসেই অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড, কেমব্রিজের বই পড়া যায়। অথচ আমাদের সময়ে ভালো বই ছিল দুর্লভ। বড় ভাইদের কাছ থেকে বই ধার নিয়ে পড়তে হত। পড়ালেখার জন্য পায়ে হেঁটে যেত হত সাত মাইল দূরের স্কুলে। এখন প্রযুক্তি তোমাদের হাতের মুধ্যে অনেক সুযোগ সুবিধা এনে দিয়েছে। এসব সুযোগকে কাজে লাগাও। তাহলে সফল হতে পারবে।
কাজ করার ইচ্ছাই প্রধান উল্লেখ করে দেশ বরেণ্য এই উদ্যোক্তা আরো বলেন, উদ্যোক্তা হতে হলে প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকতে হবে। ইচ্ছার ওপর ভর করে সাহসিকতার সঙ্গে ঝুঁকি নিতে হবে। ব্যর্থ হবার ভয়ে কাজ করা থেকে বিরত থাকলে কখনো সফল হওয়া যাবে না। নিজেই নিজের শিক্ষক হতে হবে এবং নিজেকে গাইড করতে হবে। এসময় তিনি উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদেরকে তিনটি পরামর্শ দিয়ে বলেন, কথা দিয়ে কথা রাখা, সততা এবং মানুষকে সম্মান করতে জানলে সফলতা আপনি আপনি চলে আসে। এ তিনটি জিনিসই তাঁকে ব্যবসায়ী হিসেবে সফল করেছে বলে মনে করেন মোস্তফা কামাল।
বাবার সম্পর্কে বলতে গিয়ে জ্যেষ্ঠ কন্যা ও মেঘনা গ্রুপের পরিচালক তাহমিনা মোস্তফা বলেন, বাবাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তিনি কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে আমাদেরকে বড় করেছেন। সেই ছোটবেলায় নিয়মগুলো অসহ্য মনে হলেও এখন বুঝতে পারি ওই নিয়মগুলো আমার জীবনে সফলতা এনে দিয়েছে।
তাহমিনা মোস্তফা আরো বলেন, বাবা যেকোনো পরিস্থিতে স্বাভাবিক থাকেন। কোনো কিছুতেই বিচলিত হন না। এই বিরল গুণ আয়ত্ত্ব করা খুবই কঠিন। বাবার এই বিরল গুণ তিনি আয়ত্ত্বে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানান।
স্বাগত বক্তৃতায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ দেশের সফল উদ্যোক্তাদের নানাভাবে সম্পৃক্ত রাখে। কিন্তু আমাদের এই সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় চেষ্টা করছে এই সংস্কৃতি গড়ে তোলার। কারণ হিসেবে ড. মো. সবুর খান বলেন, তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে আমাদের দেশের সফল উদ্যোক্তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া আমাদেরই দায়িত্ব। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তারা কীভাবে উদ্যোক্তা হলেন সেই গল্প শুনলে তরুণরা অনুপ্রাণিত হবে। এই উদ্দেশ্য থেকেই ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া লেকচার সিরিজ আয়োজন করে আসছে।
ড. মো. সবুর খান আরো বলেন, ইন্ড্রাস্ট্রি যে ধরনের লোকবল চায়, সে ধরনের লোকবল আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরবরাহ করতে পারছে না। কারণ ইন্ড্রাস্ট্রির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। এই সম্পর্ক তৈরি করতে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করছে।
উল্লেখ্য, ইন্ড্রাস্ট্রি একাডেমিয়া লেকচার সিরিজের বক্তৃতাগুলো নিয়ে পরবর্তী সময়ে একটি বই প্রকাশিত হবে, যা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ব্যবসা, অথনীতি ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য রেফারেন্স বই হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করবে। লেকচার সিরিজে আমন্ত্রিত উদ্যোক্তাদের ওপর ডিআইইউ থেকে প্রামাণ্যচিত্রও নির্মিত হবে। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় আশা করছে যে, এ লোকবক্তৃতামালা নতুন প্রজন্মের সৎ, শিক্ষিত ও মেধাবী উদ্যোক্তাদেরকে সাহস, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে সামনে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে। উদ্যোক্তা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার সম্ভাবনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ গতিতে এগিয়ে যেতে পারছে না বলে যে ধারনা চালু রয়েছে, এ লোকবক্তৃতামালা সে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে অনেকখানি সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়।