উচ্চশিক্ষা : যেতে চাই যুক্তরাজ্যে
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে পড়তে যান। যুক্তরাজ্যে পড়ার স্বপ্ন দেখেন এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু অনেক তথ্য জানা নেই তাঁদের। যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য আগ্রহী শিক্ষার্থীদের নানা তথ্য জানিয়েছেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের হেড অব পারফরমেন্স, মার্কেটিং অ্যান্ড কমিউনিকেশনস রায়কা ওয়ালী খান।
যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার কেমন সুযোগ রয়েছে?
যুক্তরাজ্যে প্রায় তিন হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, যা উচ্চতর শিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচ লাখের বেশি কোর্স প্রদান করে থাকে।
যুক্তরাজ্যে পড়াশোনায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রটি কেমন?
আমাদের অনেক শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে গিয়ে ভালো করছেন। এসএসসি পাস করার পর একজন শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে গিয়ে এ লেভেল করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আবেদন করতে পারেন। আবার এইচএসসি দিয়ে যুক্তরাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার আগে একটি ফাউন্ডেশন কোর্স করে নিতে পারেন। আর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, পিএইচডিসহ বিভিন্ন ডিগ্রির জন্যও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারেন। ও লেভেল এবং এ লেভেল করেও আবেদন করার অনেক পথ খোলা আছে।
ফাউন্ডেশন কোর্সটি কী ধরনের কোর্স?
এ কোর্সটি এক বছর মেয়াদি, যা যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা শুরুর আগে বিদেশি শিক্ষার্থীদের করে নিতে হয়। এইচএসসি অথবা এ লেভেল করার পর ফাউন্ডেশন কোর্সটি করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়াশোনা শুরু করতে পারবেন। ফাউন্ডেশন কোর্স করার আগে তাঁদের অবশ্যই আইইএলটিএস (IELTS) করতে হয়। এর ন্যূনতম স্কোর দরকার হয় ৫.৫।
যুক্তরাজ্যে শিক্ষার্থীদের কী ধরনের ডিগ্রি দেওয়া হয়?
একজন শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে পড়তে চায়, সেটিকে ঘিরে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ডিগ্রি ও কোর্সের সুবিধা আছে। সাধারণ এক বছরের ফাউন্ডেশন কোর্সের পর আন্ডারগ্র্যাজুয়েট (ব্যাচেলর) ডিগ্রি শেষ করতে তিন বছর লেগে যায়। তারপর মাস্টার্স করতে এক থেকে দুই বছর লাগে। আরও আছে ডক্টরাল ডিগ্রি। এ ছাড়া শিক্ষার্থীসহ আগ্রহী ব্যক্তিরা বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স করতে পারেন। এমবিএ করার জন্যও যুক্তরাজ্যে নানা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
যুক্তরাজ্যে পড়ার জন্য একজন শিক্ষার্থী কীভাবে তাঁর প্রস্তুতি শুরু করবেন?
একজন শিক্ষার্থীর উচিত হবে ব্রিটিশ কাউন্সিলে এসে যোগাযোগ করা। যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ কাউন্সিল একটি তথ্যভান্ডার হিসেবে কাজ করে। ব্রিটিশ কাউন্সিল শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যের কোর্সসমূহ ও প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে থাকে। শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজার’ আছেন, যাঁরা বিনা মূল্যে কাউন্সেলিং করে থাকেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সব প্রশ্নের উত্তর প্রদান, আবেদনপত্র পূরণ, উপযুক্ত কোর্স ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেছে নেওয়াসহ স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন সম্পর্কে উপদেশ দেন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের তিনটি অফিস আছে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামে। এগুলো হচ্ছে: ব্রিটিশ কাউন্সিল ঢাকা, ৫ ফুলার রোড, ঢাকা, ফোন: ৮৬১৮৯০৫, ফ্যাক্স: ৮৬১৩৩৭৫, ৮৬১৩২৫৫। ব্রিটিশ কাউন্সিল সিলেট, আল-হামরা শপিং সিটি (সপ্তম তলা), জিন্দাবাজার, সিলেট-৩১০০, ফোন: ৮৮০ (৮২১) ৮১৪৯২৫, ফ্যাক্স: ৮৮০ (৮২১) ৮১৪৯২৪। ব্রিটিশ কাউন্সিল চট্টগ্রাম, ৭৭/এ উত্তর নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম, ফোন: ৮৮০ (০) ৩১ ৬৫৭৮৮৪-৬, ফ্যাক্স: ৮৮০ (০) ৩১ ৬৫৭৮৮১। ই-মেইলেও শিক্ষার্থীরা তাঁদের কাউন্সেলিং সুবিধা নিতে পারেন। ওয়েবসাইট: education@bd.britishcouncil.org
যাঁরা একেবারেই কিছু জানেন না তাঁরা কী করবেন?
এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। যাঁরা যুক্তরাজ্যে পড়তে যেতে চান অথচ কোনো তথ্যই জানেন না কিংবা ভাসা ভাসা জানেন, তাঁদের মা-বাবা নির্ভরযোগ্য কারও শরণাপন্ন হতে চান, তাঁরা PASS-র সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। PASS হলো Professional Advisory Service for Students। PASS সুবিধা গ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী ব্রিটিশ কাউন্সিলের কাছ থেকে যাবতীয় সুবিধা পেতে পারেন। তাঁদের পক্ষে যুক্তরাজ্যের নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যোগাযোগ করা, প্রয়োজনীয় আবেদন ফরম পূরণ করা ও ভিসা-প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার কাজটি করে দেবেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের অভিজ্ঞ পরামর্শকেরা। PASS-র সুবিধার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের ভিসা TIER-4 বন্ধ আছে। সে জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের PASS সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থাটিও আপাতত বন্ধ আছে। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। খুব শিগগির TIER-4-এর সঙ্গে সঙ্গে PASS সুবিধাটিও শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে যাবে। PASS-র জন্য শিক্ষার্থীদের সিভি, পড়াশোনার বর্তমান অবস্থা, মা-বাবার আয়ের উত্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে আনতে হবে। যাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আবেদনপত্র প্রস্তুত করা শেষ, তাঁরা ভিসাগত জটিলতাও PASS-র সুবিধা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সমাধান করতে পারেন।
একজন শিক্ষার্থী তাঁর পছন্দের বিষয়ে পড়ার জন্য যুক্তরাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা কোথায় পেতে পারেন?
আগেই বলেছি, যুক্তরাজ্যে পড়ার জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ করার কোনো বিকল্প নেই। এ ছাড়া www.educationuk.org এবং www.britishcouncil.org/bangladesh-এ দুটি ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম, কোর্সের তালিকা, স্কলারশিপ যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে।
পড়াশোনার খরচ কেমন?
যুক্তরাজ্যের ডিগ্রি কোর্সগুলো অপেক্ষাকৃত স্বল্পমেয়াদি। তাই সময় কম লেগে থাকে। ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্য সাধারণত ন্যূনতম নয় হাজার পাউন্ড দরকার হয়। তবে মেডিকেল ও ক্লিনিক্যাল সায়েন্সে পড়াশোনা ব্যয়বহুল। এতে ১২ থেকে ১৬ হাজার পাউন্ড লাগে। এমবিএ করতেও সর্বনিম্ন ১২ লাখ টাকা দরকার হয়। এখানে থাকা-খাওয়ার খরচ আলাদা বহন করতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্সের ধরন অনুযায়ী পড়াশোনার খরচ কমবেশি হয়ে থাকে।
স্কলারশিপের কোনো ব্যবস্থা আছে?
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ডিগ্রির জন্য যুক্তরাজ্যে তেমন কোনো স্কলারশিপের ব্যবস্থা নেই। তবে ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি হওয়ার পর সেখান থেকে ছাড় পেতে পারেন। এ জন্য নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজারের সুবিধা নিয়ে আবেদন করতে হবে। তবে পোস্ট গ্র্যাজুয়েটদের জন্য নানা স্কলারশিপের ব্যবস্থা আছে। এর তালিকা ওপরে বর্ণিত দুটি ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আবার ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্কলারশিপ সুবিধা দেয়। সে খবর পাওয়ার জন্যও নিয়মিত ওয়েবসাইটে ব্রাউজ করতে হবে। যুক্তরাজ্যে মাস্টার্স করতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য chevening scholarships, Commonwealth scholarshipsসহ বিভিন্ন funding ও scholarship schemes দেওয়া হয়।
পড়াশোনার পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে শিক্ষাকালীন চাকরি করার সুযোগ আছে কি?
আগে যুক্তরাজ্যে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ ছিল, বর্তমানে তা কমে সপ্তাহে ১০ ঘণ্টা হয়েছে। পড়াশোনার ফাঁকে কিংবা ছুটিতে তাঁরা চাকরি করতে পারেন। তা ছাড়া ছুটিতে তাঁরা পূর্ণ সময় কাজ করতে পারেন। যুক্তরাজ্যে ইস্টার, গ্রীষ্মকালীন ও ক্রিস্টমাসের ছুটিতে পূর্ণ সময় কাজ করার সুবিধা আছে।
যুক্তরাজ্যে কখন থেকে আবেদন-প্রক্রিয়া শুরু হয়?
যুক্তরাজ্যের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে শিক্ষার্থীদের ভর্তির কার্যক্রম শুরু করে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যারা জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে নেয়। তবে এর সংখ্যা অনেক কম। উপদেশ হলো, যাঁরা এ বছর যুক্তরাজ্যে ভর্তি হতে ইচ্ছুক, তাঁরা যেন এপ্রিল-মের মধ্যে আবেদন ফরম পূরণের প্রস্তুতি শেষ করেন। তারপর মে মাসের দিকে ভিসার জন্য দাঁড়িয়ে যান।
যুক্তরাজ্যে পড়ার আগে কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়?
শিক্ষার্থীদের অবশ্যই আইইএলটিএস করতে হবে। পড়াশোনা কিংবা কাজ যার জন্যই যাওয়া হোক না কেন, IELTS (The International English Language Testing System) দিতে হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছে কোর্স অনুযায়ী আইইএলটিএস স্কোর অর্জন করতে হয়। যেমন—আইন পড়ার জন্য আইইএলটিএস স্কোর দরকার হয় ৭। বিজ্ঞানের বিষয়গুলো পড়তে কিছুটা কম স্কোর হলেই চলে। ব্রিটিশ কাউন্সিলে আইইএলটিএসের যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট তারিখে দুই থেকে তিনবার পরীক্ষা দেওয়া যায়। নির্দিষ্ট ফির বিনিময়ে মকটেস্টও দেওয়া যায়।
ক্রেডিট ট্রান্সফারের কোনো সুযোগ আছে কি?
আছে। তবে এ জন্য শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগে সরাসরি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এর মধ্যে ব্রিটিশ কাউন্সিল চার-পাঁচজন শিক্ষার্থীর ক্রেডিট ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করেছে। তাঁরা প্রথমে গ্রেডশিট, পাঠ্য বিষয়বস্তু নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করেছে, তারপর ব্রিটিশ কাউন্সিল তাঁদের সহায়তা করেছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিল শিক্ষার্থীদের জন্য কী কী সুবিধা দিয়ে থাকে?
ব্রিটিশ কাউন্সিল যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা কিংবা কাজের জন্য যেতে চাওয়া আগ্রহীদের সব রকম তথ্য প্রদান ও সহযোগিতা করে থাকে। ফ্রি-কাউন্সেলিং, PASS, IELTS ছাড়াও প্রতি মাসে তারা একটি সেমিনার ও বছরে একটি ‘Uk Education fair’ আয়োজন করে। শিক্ষামেলায় যুক্তরাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নেয় ও তারা আগ্রহী শিক্ষার্থী, মা-বাবা, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলে। অনেকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সুবিধার কথা জানিয়ে On-Spot Admission-র ব্যবস্থাও করেন। এতে শিক্ষার্থীরা এক ছাদের নিচে অনেক তথ্য জানার সুযোগ পান। যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগে ব্রিটিশ কাউন্সিল যাত্রাপূর্ব ব্রিফিং প্রদান করে, যাতে তাঁরা সেখানে গিয়ে সমস্যায় না পড়েন। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে, প্রশ্নের উত্তর দেয় ও কাউন্সেলিং করে। এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা ব্রিটিশ কাউন্সিলে থাকবেন। শিক্ষার্থীরা নাম নিবন্ধন করে নির্দিষ্ট দিনগুলোয় তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারবেন।