জানা অজানা জনজীবন
- তাজবিদুল সিহাব, সাভার
প্রতিবেশী দেশ ভারতের যে রাজ্যগুলো আমাদের ঘিরে রয়েছে তাদের সঙ্গে আমাদের ভাষা, মূল্যবোধ, ইতিহাস ও সংস্কৃতির অনেকটাই মিল রয়েছে। কিন্তু এই মিল কতটুকু তা আমাদের অনেকেরই অজানা। তাই অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে জনজীবন, ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক তিন-দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সম্মেলনটি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ ভবনে শেষ হয়। ভারতের বিহার, উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবাংলা, আসাম, মনিপুর, মেঘালয়, অরুণাচল, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে ৭০ জন শিক্ষাবিদ, কবি, সাহিত্যিক ও গবেষক যোগ দেন এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো বেসরকারি ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এমন আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। ‘প্রতিবেশীকে জানুন’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত এ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় দুই শতাধিক দর্শনার্থী এবং পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
২২ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি ছিল সম্মেলনের দিন। তাই ২০ তারিখেই বিদেশি অতিথিরা চলে আসেন বাংলাদেশে। ২১শে ফেব্রুয়ারি ভোরে তাঁরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা।
২২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯ টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মেসবাহউদ্দিন আহমেদ। সম্মেলনটির আহ্বায়ক ছিলেন বাংলা একাডেমির প্রাক্তন মহাপরিচালক প্রফেসর মনসুর মুসা।
সম্মেলনে বক্তারা আঞ্চলিক সাহিত্যের সাম্প্রতিক ধারা-প্রকৃতি, ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা, ভাষার বৈচিত্র্য, উচ্চশিক্ষা ও বিজ্ঞানে মাতৃভাষার ব্যাবহার, নারীর ক্ষমতায়ন প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করেন।
এমিরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তার মূল প্রবন্ধে বলেন, ‘এই সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিবেশী দু’দেশের রাজ্যসমূহের মধ্যে জানার পরিধি যেমন বাড়বে তেমনি আরও সুদৃঢ় হবে আমাদের বন্ধুত্ব।’ পরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য আনুষ্ঠানিক কৃতজ্ঞতা জানান।
কলকাতার রূপা বাসু ঠাকুর ‘বাংলা সাহিত্য এবং লিটল ম্যাগাজিন’ শীর্ষক সেমিনারে পশ্চিমবঙ্গের লিটল ম্যাগাজিনের অতীত ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় বলেন, ‘প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলা ভাষার সাহিত্য চর্চা পরিবর্তিত হয়ে আসছে। বর্তমানে বাংলা সাহিত্যে যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়, অথবা আধুনিক বাংলা সাহিত্য বলতে সাহিত্যের যে অংশগুলো বুঝানো হয়ে থাকে সেগুলোর সাথে কয়েক যুগ আগের সাহিত্য চর্চার বিষয়ের পার্থক্য রয়েছে। বাংলা সাহিত্য প্রাচীনকাল থেকে বিবর্তনের এই ধারা প্রভাবিত হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের কিছু শক্তিমান সাহিত্যিকদের মাধ্যমে।’
সম্মেলনে জনজীবন, ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক মোট ৯টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া লালন একাডেমির পরিবেশনায় লালন গীতি ও ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় স্পন্দন নিত্য গোষ্ঠী নিত্য নাটিকা উপস্থাপন করে।