হলের স্মৃতি!

হলের স্মৃতি!

  • নিলয় মামুন

বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের আবাসিক থাকার ব্যবস্থা। ভর্তি হওয়ার পূর্বে বা পরে, সবারই থাকে এই নিয়ে কৌতুহল। কেমন হবে আমার হলের পরিবেশ ? আমি কি পারবো নতুন পরিবেশে এত অপরিচিত মানুষের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্বে কখনো ছাত্রাবাস বা হলে থাকার অভিজ্ঞতা না থাকে, ভর্তি হয়ে তাদের প্রথমে মানিয়ে নিতে পড়তে হয় কিছুটা বিরম্ভনায়। কারণ এত অপরিচিত মুখের ভিড়ে সে কার সাথে মিশবে। কিন্তু হলে উঠার পর যত সময় গড়ায় তত বন্ধু ও বড়দের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে আপন ঘরের মতই সবাই মিলে গড়ে উঠে একটি পরিবার। আর এভাবেই কেটে যায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ৫টি বছর। বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হলে থাকার ব্যবস্থা। এর মধ্যে একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এমনি মনোরম ও প্রাকৃতিকভাবে সৌন্দর্য মন্ডিত একটি হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল। আর এখানেই সবার কত স্মৃতি, কত আবেগ মিশে থাকে এই হলে কাটানোর সময়গুলোকে ঘিরে।

প্রথম বর্ষে যখন কোনো শিক্ষার্থী হলে উঠে, তখন তার কাছে এটি শুধু একটি হলই মনে হয়। কিন্তু যখন ধীরে ধীরে এই হলেই কাটতে থাকে তার বছরের পর বছর। তখন এটি সবার কাছে হয়ে উঠে একটি আবেগ, স্মৃতির আর ভালোবাসার নীড়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিক্ষার্থীর বসবাস বঙ্গবন্ধু হলে। অবকাঠামো ও নান্দনিক লাল ইটের এই হলটির সামনে রয়েছে সারি সারি ফুল গাছ। যেখানে সারা বছরই কোনো না কোনো ফুল ফুটে থাকতে দেখা যায়। যা হলের সৌন্দর্যকে আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই তো গেলো হলের সামনের সৌন্দর্যের কথা, এছাড়া হলের ভিতরেও রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন আবাসিক সুবিধা। শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য রয়েছে একটি ক্যান্টিন, একটি ডাইনিং ও মেস। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য রয়েছে দুটি কনফেকশনারী, একটি ফটোকপির দোকান, একটি সেলুন ও একটি লন্ডির দোকান। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজ ও ব্যবহারের জিনিস এখান থেকেই সংগ্রহ করতে পারে। আর তার সাথে শিক্ষার্থীদের বিনোদনের জন্য রয়েছে ক্যারাম, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলার সুযোগ।

সবসময় ছাত্র-ছাত্রীদের প্রযুক্তির সাথে থাকার জন্য রয়েছে ওয়াইফাই ব্যবস্থা, টেলিভিশন ও পত্রিকা রুম। আর পড়ার জন্য রয়েছে ছোট একটি লাইব্রেরিও। তবে সবার জন্য এই সুবিধা থাকলেও হলে পর্যাপ্ত সিটের অভাবে কিছুদিন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের কাটাতে হয় গণরুমে। তবে কিছুদিন পর সবাই ভিন্ন ভিন্ন সিটে থাকার সুযোগ পান। আর এভাবেই প্রথমে কিছু সামান্য কষ্ট আর আনন্দ ভালো লাগায় কাটে এখানকার শিক্ষার্থীদের হল জীবন। হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা গণরুমে থাকলেও তাদের গানের আওয়াজে হয়তো কেউ বুঝবেই না তারা গণরুমে একসাথে এত মানুষ অবস্থান করে। কারণ তাদের বন্ধুদের মধ্যে অল্প সময়ের মধ্যে গড়ে উঠে একটি অটুট বন্ধন। যার মাধ্যমে কেটে যায় গণরুমের সেই কষ্টের দিনগুলো। আর দিন দিন বাড়তে থাকে আবেগ আর স্মৃতি। হল জীবনের কাটানো চার বছর সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই হলের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী খালেদ হোসাইন বলেন, বাসা ছেড়ে বাবা-মা ছাড়া হলে এভাবে সকলের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবো কখনোই ভাবেনি। সত্যিই হলের আবাসিক ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের একটি অন্যতম ভালো লাগা।

লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment