বহিরাগতরা খেলেন ইবির খাবার, উপোস শিক্ষার্থীরা
- ইবি প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রীতিভোজের খাবার খেলেন বহিরাগত রাজনৈতিক কর্মী, দোকানী, স্কুল ছাত্রসহ নানা বয়সের মানুষ। প্রায় সাত শ বহিরাগত খেয়েছেন এবছরের প্রীতিভোজের খাবার। তবে যাদের জন্য মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে এ আয়োজন সেই শিক্ষার্থীরাই রয়েছেন উপোস। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের অতিমাত্রায় অন্যায় অতিথি পরায়ণতায় প্রায় দেড়শ ছাত্রের দুপুরের খাবার জোটেনি। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবস্ উপলক্ষ্যে আবাসিক হল গুলোতে উন্নত মানের খাবারের আয়োজন করা হয়। এতে খাবারের জন্য অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০ টা ও আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ২০ টাকা ফি নির্ধারণ করে স্ব স্ব হল কর্তৃপক্ষ। ফি প্রদানের পর ছাত্রদের একটি করে টোকেন দেওয়া হয়। পরে খাবার গ্রহণের সময় টোকেন প্রদর্শন করে খাবার নেয় শিক্ষার্থীরা।
তবে এবছর খাবার বিতরণের পর থেকেই দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। স্থানীয় বহিরাগত ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ থেকে আসা কলেজের ছাত্রদের হাতে দেখা মিলেছে হলের খাবার। এছাড়া স্থানীয় দোকানী, রাজনৈতিক কর্মীদের হাতেও দেখা গেছে একাধিক প্যাকেট। এমনকি ছাত্রনেতাদের এলাকার অনুসারীরাও ঝাঁক বেঁধে এসে খেয়েছেন হলের বিশেষ খাবার। বহিরাগতদের এমন দাপুটে হরিলুটে খাবার সংকট দেখা দেয়। এছাড়া খাবারের মানও নিম্মমানের হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে বিভিন্ন হলে খোঁজ নিয়ে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে আবাসিক ছাত্রের সংখ্যা সাড়ে চারশ বা পাঁচশ। তবে হল সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র সংখ্যা সাড়ে ৪ বা ৫ শ হলেও প্রায় সাড়ে সাতশোর বেশি টোকেন বিক্রি করা হয়েছে। হলের ছাত্রসংখ্যার চেয়ে বেশি টোকেন বিক্রি করায় বঙ্গবন্ধু হলে খাবারের ভয়াবহ সংকট দেখা দেয়। জানা গেছে, হলের প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্র কোনো খাবার না পেয়ে উপোস ছিলেন। হলের এক আবাসিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রভোস্ট স্যারকে বারবার বলেছি হলের ছাত্র বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের খাবার নিশ্চিত করে আপনি যা ইচ্ছা করেন। তিনি কোনো কথায় কর্ণপাত করেননি। আজ আমার ছাত্ররা অনাহারে স্বাধীনতার স্বাদ নিচ্ছেন।’
এব্যাপারে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট ড. আনোয়ারুল হক স্বপন বলেন-‘শতাধিক ছাত্র না খেয়ে থাকার খবরটি ভিত্তিহীন। প্রায় সাড়ে ৫শ টোকেন বিক্রি করা হয় এবং সে অনুযায়ী খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তবে ছাত্রনেতারা টাকা দিয়ে যদি টোকেন কিনে বাইরের লোকদের দিয়ে দেয় তাহলে আমার কি করার আছে। প্রীতিভোঁজে যে সাবসিডি দেয়া হয় তা ছাত্রদের জন্য, বহিরাগতদের জন্য নয়। এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।’
এমনকি তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন-‘এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক আচার-অনুষ্ঠান এখন বিলুপ্তির পথে। হয়তো কয়েকবছর পর এসব দিবসের প্রীতিভোজের রেওয়াজও বন্ধ হয়ে যাবে। আর এর জন্য ছাত্র নামধারী নেতাদের গোয়ার্তুমিই দায়ী থাকবে। ছাত্রনেতারা নিজেদের ও ছাত্রদের অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে অবগত না হওয়ায় তারা ছাত্রদের খাবার বাইরের মানুষের হাতে তুলে দেন। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক ব্যাপার।’
এছাড়া বেগম খালেদা জিয়া হল, বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের খাবার ছাত্রনেতাদের অনুসারীদের খেতে দেখা গেছে। এসব হল সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রনেতারা মোবাইলে ফোন করে হল প্রভোস্টদের কাছে খাবারের প্যাকেট দাবি করে। এতে নিরুপায় হয়ে তাদেরকে প্যাকেটর দিতে বাধ্য হয় হল কর্তৃপক্ষ। ছাত্রী হল থেকে সংগ্রহ করা খাবারের প্যাকেট অনেক বহিরাগত ও পার্শ্ববর্তী জেলা শহর থেকে আগতদের হাতেও দেখা মিলেছে। এব্যাপারে বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের প্রভোস্ট ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, ‘ছাত্রনেতারা ফোন করে খাবার দাবি করলে তো না করা যায় না। এব্যাপারে ছাত্রনেতাদেরই দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করা উচিত।’
এমনকি সাদ্দাম হোসেন হল, জিয়া হল থেকেও ফাও টোকেনে অনেক খাবার বাইরে চলে গেছে। এতে খাবারের মান অনেক নিম্ন মানের হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাদ্দাম হোসেন হলের ছাত্ররা অভিযোগ করে বলেন, ‘হলের উপ-রেজিষ্ট্রার আব্দুল খালেক ছাত্রদের টোকেন দিতে গড়িমসি করেন। কিন্তু তিনি ফোন দিয়ে বহিরাগত বিভিন্ন লোককে খাবারের জন্য প্রভোস্টের কাছে চাপ দেয়ার কৌশল শিখিয়ে দেন। এতে করে প্রতিবছর টার্গেটের বেশি খাবার বিতরণ করতে গিয়ে খাবারের মান খারাপ হয়ে যায়। এমনকি ছাত্ররাও খাবার থেকে বঞ্চিত হয়।’