চবিতে তারুণ্য উৎসব
- জোবায়ের চৌধুরী, চট্টগ্রাম
সাজ সাজ রব ছিল ফ্যাকালটিজুড়ে। নিচতলায় রঙিন সজ্জায় বসেছিল অনেকগুলো স্টল। চারদিকে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। নিচ তলায় অডিটোরিয়ামে চলছিল স্বনামধন্য বক্তাদের লেকচার সিরিজ। পাঁচ তলা ভবনটি ছিল শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত। আর পুরো ভবন থেকে ভেসে আসছিল মুহুমুহু করতালির শব্দ।
বলছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের কথা, যেখানে গত ২২ মার্চ বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের আয়োজনে (বিবিএফ) ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্টিজের (ডিসিসিআই) সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ ফেস্ট, চট্টগ্রাম রাউন্ড’। তরুণদের নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে প্রাণবন্ত এ অনুষ্ঠানটি।
অনুষ্ঠানটিকে ঘিরে দিনটিতে চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২২ কি.মি. দূরে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নেমে এসেছিল তারুণ্যের জোয়ারে। প্রায় দু’হাজারেরও বেশি তরুণ অংশগ্রহণ করেছিল দিনব্যাপী এ উৎসবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও তরুণদের এ উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। উৎসবকে ঘিরে ২২ মার্চ সকাল ৯টা থেকেই ভিড় জমাতে থাকে শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংবাদপত্র ‘দৈনিক আজাদী’র পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক ও চবির ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মার্কেটিং বিভাগের ডিন প্রফেসর ড. তৈয়ব চৌধুরী, প্রফেসর ড. শামুদ্দোহা, প্রফেসর ড. জাবেদ হোসেন, প্রফেসর সজীব ঘোষ, ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মীর সোহেল, দ্বীপান্বীতা ভট্টাচার্য, শান্ত বনিক, কামরুল হাসান, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ শাহনেওয়াজ মাহমুদ সোহেল প্রমুখ।
অনুষ্ঠান উদ্বোধনের পরই শুরু হয় ‘লেকচার সিরিজ’ পর্ব। উৎসবের এ অংশটি ছিল তরুণ শিক্ষার্থীদের আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দু। কারণ এ অংশে ছিল স্ব স্ব স্থানে প্রতিষ্ঠিত ও দেশের প্রখ্যাত কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের আলোচনা। এ অংশে স্বনামধন্য ১৫ ব্যাক্তি তাঁদের জীবনযুদ্ধের নানাদিকসহ খোলামেলা কথা বলেন শিক্ষার্থীদের সাথে। বক্তারা তরুণদের অনুপ্রেরণা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরণের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন শিক্ষার্থীদের দিকে। আর তখনই মুহুমহু করতালির কম্পন সৃষ্টি হয় ব্যবসায় অনুষদ ভবনটিতে।
বক্তাদের মধ্যে ছিলেন চট্টগ্রাম শহরের বর্তমান ক্রেজ ‘বারকোড ক্যাফে’র প্রতিষ্ঠাতা মঞ্জুরুল হক, ‘গ্রামীণফোনে’র ডিরেক্টর সৈয়দ তানভীর হোসাইন, ‘মাস্টার কার্ডে’র কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, ‘আমরা স্মার্ট সল্যুশনসে’ এর হেড অব বিজনেস সোলাইমান সুখান, ‘সানসাইন গ্রামার স্কুল’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ সাফিয়া গাজী রহমান, প্রফেশনাল ট্রেইনার ও মোটিভেশন স্পীকার মাশাহেদ হাসান সীমান্ত, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র ‘দৈনিক আজাদী’র পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, ‘মেরিকো বাংলাদেশ’ এর সিএফও ইকবাল চৌধুরী, ‘ইউনিলিভার বাংলাদেশ’ এর কাস্টমার ডেভলপমেন্ট ডিরেক্টর কে এস এম মিনহাজ, বিএসআরএম গ্রুপের ডিরেক্টর তাহসিন জোহাইর তাহেরালী, জিএসকে এর মার্কেটিং ডিরেক্টর আতিকা হক, সাংস্কৃতিক জগতের পরিচিতমুখ জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী শাফিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষার্থী ও ‘টেন মিনিট স্কুল’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী আয়মান সাদিক, এবং ‘সিনেফেক্ট এন্টারটেইনমেন্ট’ এর প্রধান নির্বাহী অভিনয় শিল্পী সালমান মুক্তাদির।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান মাহফুজ বলেন, বক্তারা জীবনযুদ্ধে কী কী সমস্যায় পড়েছেন? সমস্যাগুলো মোকাবেলা কীভাবে করেছেন? কীভাবে সফল হয়েছেন? এসব জানার মাধ্যমে আমাদের আত্নবিশ্বাস আরও মজবুত হচ্ছে। বক্তাদের সফল হওয়ার গল্পে অনুপ্রেরণা ঝড়েছে, যা আমাদের গতিশীলতা সঞ্চারে ভূমিকা রাখবে।
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে আগত শিক্ষার্থী আশরাফ এলাহি আবীর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, অনুষ্ঠানটি তরুণদের হতাশা কাটতে ভূমিকা রাখবে।
প্রায় সকল বক্তাদের বক্তব্যে ছিল একই সুর। বক্তারা তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রত্যেক মানুষেরই কিছু বিশেষত্ব থাকে। যারা নিজের বিশেষত্বকে চিনতে পেরে কাজে লাগায় তারাই সফলতায় অধিষ্ঠিত হন।
উৎসবে লেকচার সিরিজ ছাড়াও ছিল আইডিয়া কম্পিটিশন। এ প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। তরুণরা এ অংশে তাদের আইডিয়াগুলোর কার্যকারিতা প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে বিচারক মণ্ডলীর কাছে তুলে ধরেছেন। বিচারকমণ্ডলীর দায়িত্ব পালন করেছেন হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলী এরশাদ চৌধুরী, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীপান্বীতা ভট্টাচার্য, সহকারী অধ্যাপক শান্ত বনিক, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সদীপ ভট্টাচার্য, ফলিত পদার্থবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবু জাহেদ চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক মো. দিদারুল আলম, এইচআরএম বিভাগের প্রভাষক আশারাফুল আলম এবং হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সাইফুর রহমান।
আইডিয়া কম্পিটিশনে সাতটি বিভাগের মোট ১০৭টি আইডিয়া ৭টিকে চূড়ান্ত করা হয় জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য। দিনব্যাপী এ উৎসবের শেষাংশে বিভাগীয় বিজয়ী পর্যায়ে এ ৭টি টিমের প্রতিটিকে ২৫ হাজার টাকা করে প্রাইজমানি প্রদান করেন বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের (বিবিএফ) প্রতিষ্ঠাতা শরীফুল ইসলাম ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম।
এসময় শরীফুল ইসলাম এ উৎসবটিকে সফল করারচ লক্ষ্যে সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করায় ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম, ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামরুল হাসান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ মাহমুদ সোহেলসহ সকল স্বেচ্ছাসেবীকে ধন্যবাদ জানান।