রঙিন বিদায়
- জোবায়ের চৌধুরী, চট্টগ্রাম
‘যেতে নাহি দেব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়!’ বাস্তবতা যত কঠিনই হোক না কেন, তবুও মেনে নিতে হয়। তারপরও মানুষ প্রচেষ্টাইয় থাকে বিদায়বেলা যেন সুন্দর ও আনন্দময় হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে তেমনই এক বেদনাদায়ক বিদায়ের ঘন্টা বাজতে শুরু হয়েছে। তারপরও সেই আনন্দঘন বিদায়ের প্রচেষ্টায় র্যাগডে পালনের লক্ষ্যে সোমবার (৯ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ৬ষ্ঠ তলায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে সকাল থেকে শুরু হয় পূর্ব প্রস্তুতির। বিভাগের সর্ব জ্যৈষ্ঠ শিক্ষার্থীদের বিদায়ী অনুষ্ঠান উপলক্ষে সেদিনের জন্য অঘোষিতভাবে বাতিল হয়ে যায় সকল বর্ষের ক্লাস। জ্যৈষ্ঠদের সুন্দর বিদায়ে মিলন-মেলায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে কনিষ্ঠরা সকাল থেকেই ভিড় জমাতে শুরু করে বিভাগের বারান্দায়।
ঘড়ির কাটায় বেলা সাড়ে ১২টার ঘণ্টা কড়া নাড়ার সাথে সাথে বিভাগের সভাপতি ড. মুহাম্মদ কামাল উদ্দিনসহ অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে ফিতা কেটে র্যাগডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এসময় আরও উপস্থিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ ফয়সাল, মোহাম্মদ ফরিদুল আলম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও বিভাগের শিক্ষক নিয়াজ মোর্শেদ রিপন ও বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মতিউল হক মাসুদ।
কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দীর ‘পাখিরে তুই দূরে থাকলে কিছুই আমার ভালো লাগে না।’ গানটি স্মরণ করে উদ্বোধন পরবর্তী বক্তব্যে ড. মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, তোমরা শিক্ষাজীবন শেষ করে যদি সাফল্য নিয়ে আমাদের স্মরণ করে আসো সেটা হবে আমাদের আনন্দের শীর্ষচূড়া। আর যদি তা না হয় এ গানের মতই আমরা ‘একা একা রব নিরালয়’। এসময় তিনি বিদায়ী সকল শিক্ষার্থীর সাফল্য কামনাও করেন।
উদ্বোধন শেষে বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অনুষদের নিচে নেমে রঙিন আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে। আর মূহুর্তেই অনুষদ প্রাঙ্গণ তারুণ্যে রঙে রঙিন হয়ে যায়। জ্যৈষ্ঠ-কনিষ্ঠ ভেদাভেদ ভুলে তারা শুরু করে রঙের হলি খেলা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উচ্ছ্বাসিত এ হলি খেলায় অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও বিভাগের শিক্ষক নিয়াজ মোর্শেদ রিপন ও সহকারী অধ্যাপক মতিউল হক মাসুদ। শিক্ষার্থীদের সাথে তারুণ্যের এ রঙ ছোড়া-ছোড়ির জোয়ারে নিজেদের উজাড় করে দেন তরুণ এ দুই শিক্ষক। রঙিন এ স্মৃতিগুলো ফ্রেমে আটকে রাখার প্রচেষ্টায় শিক্ষার্থীরা সেলফি ও ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রঙিন আনন্দ শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্টেশন ঘুড়ে আবার অনুষদের সামনে এসে সমাপ্ত হয়।
বিকেলে অনুষদের ৬ষ্ঠ তলায় বিভাগের বারান্দায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জ্যৈষ্ঠ-কনিষ্ঠ সকল শিক্ষার্থীরা গানের তালে নাচতে থাকে। সন্ধ্যা নামতেই বিচ্ছেদ ব্যাথা বুকে নিয়ে সবাই ফিরে যায় আপন নীড়ে।