প্রকৌশলের কৌশল
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
এইচএসসি পরীক্ষা শেষ। একটু একটু করে এগিয়ে আসছে ভর্তিযুদ্ধ। অন্য যেকোনো ভর্তি পরীক্ষার তুলনায় বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় একটু বেশিই প্রতিযোগিতা হয়। ২০১২ সালের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী তিন মেধাবী নাফিস ইরতিজা, রজত চক্রবর্তী ও রিপন কুমার রায়েএ বছরের ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য দিয়েছেন কিছু পরামর্শ।
‘তোমরা এখন যে সময়টা পার করছ, সেই সময়টা তোমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়। এই সময়ের প্রতিটি মুহূর্তকে তাই গুরুত্বসহকারে অনুধাবন করো। প্রতিটি মুহূর্তের সঠিক ব্যবহার করো।’ কথা শুরু করলেন নাফিস। তাঁকে সঙ্গ দিতে কথার পিঠে কথা জুড়ে দিলেন রজত, ‘যতই বলি না কেন ভয় কোরো না, আসলে এই সময়টায় মনে একটু ভয় কাজ করেই। মনে হয়, যা পড়ছি, সব ভুলে যাচ্ছি।’ রজতকে সমর্থন দিয়ে কথা শুরু করেন রিপন, ‘বিশেষ করে রসায়ন দ্বিতীয় পত্র। এ বিষয়ের অনেক বিক্রিয়া ও সংকেত আছে, যা সহজে মনে থাকতে চায় না। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।’ রিপনকে থামিয়ে আবার তৃপ্ত শুরু করেন, ‘আমারও একই অবস্থা ছিল। আমি সে জন্য রসায়নের বিক্রিয়া ও সংকেতগুলো বারবার পড়তাম। পদার্থবিজ্ঞান আর গণিতও বেশি বেশি অনুশীলন করতাম। কারণ, এ দুটি বিষয়ের সূত্রগুলোও মনে থাকতে চাইত না।’ গল্প-কথা-আড্ডায় স্মৃতিচারণা চলছে তিন মেধাবীর। এই তো মাত্র কয়েক বছরের আগের কথা। বুয়েটে ভর্তির জন্য কী কঠোর অধ্যবসায়ই না করেছেন তাঁরা! অধ্যবসায় বিফলে যায়নি। নাফিস ও রিপন এখন পড়ছেন বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগে আর রজত পড়ছেন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস কৌশল বিভাগে।
কথায় কথায় এই তিন মেধাবীর কাছ থেকে জানা গেল, মোট ৬০০ নম্বর থাকে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায়। এই ৬০০ নম্বরের মধ্যে পদার্থ, রসায়ন ও গণিতের প্রতিটিতে ১৮০ নম্বর এবং ইংরেজিতে থাকে ৬০ নম্বর। তবে ইংরেজিতে কম নম্বর থাকলেও এ বিষয়কে অবহেলা করা মোটেও উচিত নয় বলে মনে করেন তাঁরা। কারণ, ইংরেজিতে ন্যূনতম পাস নম্বর না পেলে ভর্তি হওয়া একবারেই অসম্ভব। ইংরেজি সম্পর্কে নাফিসের এই সতর্কবার্তা মেনে নিয়ে রিপন আবার পরামর্শের খাতা খুললেন, ‘পরীক্ষার আগের এ সময়টা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তবে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভেবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সময়টাকে অন্য সব দিনের মতোই স্বাভাবিকভাবে দেখো। আর চেষ্টা কোরো নিয়মবদ্ধ জীবনযাপনের।’
রিপনের পর এবার রজত মনে করিয়ে দিলেন এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ‘পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত তিন ঘণ্টা ভাগ করা থাকে দুই ভাগে। এর মধ্যে দেড় ঘণ্টা এমসিকিউ আর বাকি দেড় ঘণ্টায় রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয়। তাই এখন থেকে এমসিকিউ প্রস্তুতির পাশাপাশি লেখার অনুশীলনটাও নিয়মিত করা উচিত।’
এরপর তিন বন্ধু একসঙ্গে যে বিষয়টি মনে রাখতে বললেন তা হলো উত্তর দেওয়ার সময় অবশ্যই প্রশ্নের নম্বর মিলিয়ে নিতে হবে। কারণ, পরীক্ষা ভালো দিলেও নম্বরে মিল না থাকলে সব পরিশ্রমই পণ্ড হয়ে যাবে। সাবধান থাকতে হবে এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ব্যাপারেও। কারণ, এমসিকিউ উত্তরের ক্ষেত্রে প্রতি চারটি ভুলের জন্য একটি সঠিক উত্তরের নম্বর কাটা যাবে। তাই অনুমাননির্ভর উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেন এই তিন মেধাবী। আর গণিতের ব্যাপারে তাঁদের মন্তব্য হচ্ছে, অঙ্কে একটু বেশি সময় লাগতেই পারে। তাই বলে অর্ধেক করে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। পুরোটা শেষ করেই অন্য প্রশ্নে যাওয়া উচিত।