ব্যর্থতাই সাফল্যের অন্যতম সিঁড়ি

ব্যর্থতাই সাফল্যের অন্যতম সিঁড়ি

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক 

মো. নাবিল তাহমিদ রুশদ খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য ময়েশ্চার কনটেন্ট, তাপমাত্রা, পিএইচ ও পরিবেশের আর্দ্রতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। তবে খাদ্যের এই চারটি ফ্যাক্টর নির্ণয়ের জন্য করতে হয় পৃথক পৃথক পরীক্ষা। পরীক্ষাগুলো ল্যাবরেটরি ছাড়া করাও সম্ভব নয়। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে এবং খুব সহজেই খাদ্যের এই ফ্যাক্টরগুলো কীভাবে নির্ণয় করা যায় তাই নিয়ে ভাবতে থাকেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থী সাঈদ আল মাহমুদ বিজয়। এই সমস্যার সমাধান করতেই তিনি তৈরি করে ফেললেন কোয়ালিটি কন্ট্রোলার (কিউসি) প্রো। এই যন্ত্রের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে জানা যাবে খাদ্যের ওই চারটি ফ্যাক্টর।

এই অসাধারণ যন্ত্রটি উদ্ভাবনের জন্য বিশ্বব্যাংক এবং বেটার স্টোরিজের যৌথ উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান থেকে শীর্ষ ১০০ তরুণকে নিয়ে আয়োজিত ‘মেইক-আ-থন’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় বাকৃবির দুই শিক্ষার্থী সাঈদ আল মাহমুদ বিজয় ও শাকিল মণ্ডলের ‘কিউসি প্রো’। ‘মেইক-আ-থন’ বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে প্রকৌশল, কৃষি, ব্যবসা, ফ্যাশন টেকনোলজি ও ডিজাইনের বিভিন্ন আইডিয়াভিত্তিক একটি প্রতিযোগিতা। ‘মেইক-আ-থন’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথটা বিজয়ের জন্য সহজ সহজ ছিল না। তার পড়াশুনা ফুড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। আর তিনি চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তার রোবোটিক্স টেকনোলজিতে নতুন কিছু তৈরি করার জন্য। যা ছিল তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিপরীত।

কিন্তু রোবোটিক্স নিয়ে তার কাজ করার ইচ্ছে ছিল প্রখর। আর ইচ্ছাশক্তির কারণেই বিভিন্ন রোবোটিক্স কর্মশালায় গিয়েছেন। নিজে থেকে পড়াশুনা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর তৃতীয় বর্ষে এক রোবোটিক্স প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু তার রোবোটটি সেদিন কাজ করেনি। ফিরে আসতে হয়েছিল ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুনতে হয়েছিল নানা ধরনের কটূক্তি। তবুও তিনি ভেঙ্গে পড়েননি। তিনি শুধু চেয়েছিলেন তার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি যতটা খারাপ হয়েছে সেটা ফিরিয়ে আনতে হবে তাকেই। নতুন করে কাজ শুরু করলেন ‘কিউসি প্রো’ নিয়ে। কত রাত যে নির্ঘুম কেটেছে তার তা তিনি নিজেও জানেন না। ‘কিউসি প্রো’ বানাতে সবকিছু বাদ দিয়ে এই বিষয়ে তার পড়াশুনাই ছিল প্রায় ৩০০ ঘণ্টা। তার এই পরিশ্রম বৃথা যায়নি। চ্যাম্পিয়ন হয়েই ফিরেছেন নিজের ক্যাম্পাসে। একদিন যাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করেছিল আজ তাকে নিয়েই সবার মাতামাতি। কোনো বাঁধাই তাকে তার ইচ্ছেশক্তি থেকে টলাতে পারেনি।

নিজের তৈরি কিউসি প্রো সম্পর্কে বিজয় বলেন, আমার এ যন্ত্রে চারটি ভিন্ন ভিন্ন সেন্সর লাগানো আছে। সেন্সরগুলো খাদ্যের ভিতর প্রবেশ করালে যন্ত্রের ডিজিটাল মনিটরে ময়েশ্চার কনটেন্ট, তাপমাত্রা ও পিএইচ ফ্যাক্টরগুলোর নির্ভুল মান দেখা যাবে। তবে পরিবেশের আর্দ্রতা নির্ণয়ের জন্য সেন্সরটিকে খাদ্যে প্রবেশ করাতে হবে না। এই যন্ত্রে শুধু খাদ্যের মানই দেখাবে না তাৎক্ষণিকভাবে এক্সএল এ গ্রাফসহ মানও পাওয়া যাবে। যন্ত্রটি বহনযোগ্য, আকারে ছোট এবং হালকা। আর এ কারণেই খাদ্যের নমুনা পরীক্ষাগারে না পাঠিয়েই এই যন্ত্রের সাহায্যে যেকোনো স্থানে, যেকোনো সময় খাদ্যের মান নির্ণয়ের পরীক্ষা করা যাবে। এতে যেমন সময় বাঁচবে তেমনি খরচও কমে যাবে কয়েকগুণ। মেইক-আ-থনে সবার অংশগ্রহণ বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয়েছিল ‘মেকার ফেস্ট’। মূলপর্বে বাকৃবি থেকে গিয়েছিল ১৬ সদস্য বিশিষ্ট পাঁচটি টিম। ক্যাম্পাস প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন সৌমিক এবং ভলান্টিয়ার হিসেবে ছিলেন সৌরভ, নাফিজ, শাফায়েত।

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে বিজয় বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যাবেন আমেরিকার সিলিকন ভ্যালেতে। তার এ অসাধারণ সাফল্যে বিজয় ও তার দলকে অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর। বর্তমানে বিজয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ইউএনডিপির (ইউনাইটেড ন্যাশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) অর্থায়নে এ টু আই প্রকল্পে কাজ করছেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে বিজয় জানান, গবেষণা কাজের সাথে যুক্ত থাকা এবং ক্যাম্পাসে যারা উদ্ভাবনমূলক কাজ করে তাদের নিয়ে একটা ‘ইনোভেশন ক্যাফে’ খোলার ইচ্ছা আছে।

favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment