শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকের মিলন মেলা
- ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
সকাল সাড়ে দশটা। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে পা দিতেই দেখা গেল সেখানে যেন এক মিলন মেলা। এ মিলনমেলা শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের মিলনমেলা। উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা হাসিমুখে কুশল বিনিময় করছেন অভিভাবকদের সঙ্গে। অভিভাবকরা খোঁজ খবর নিচ্ছেন সন্তানদের। আর শিক্ষকরা জানার চেষ্টা করছেন অভিভাবকদের পরামর্শ-কীভাবে আরও সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা যায় সন্তানদের। ফলে মিলনমেলাটি হয়ে উঠেছে সত্যিকার অর্থেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকের মুক্ত আলোচনার প্ল্যাটফর্ম।
এ ধরনের আয়োজনের একটি নাম থাকে-‘প্যারেন্টস ডে’। বিভিন্ন স্কুলে সাধারণত এমন আয়োজন দেখা যায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে? অনেক অভিভাবকই স্বীকার করলেন- না, এমন আয়োজন খুব একটা চোখে পড়ে না।তাহলে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কেন এমন আয়োজন?
এই প্রশ্নের উত্তর মিলল বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজুর বক্তব্যে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই মাইক্রোফোন হাতে মঞ্চে উঠে এলেন এই শিক্ষক। তারপর বললেন, ‘এটি আর দশটি গতানুগতিক প্যারেন্টস ডে নয়।এটি আমাদের শিক্ষার্থীদের একটি কোর্সের অংশও বটে। এই কোর্সের নাম ‘‘আর্ট অব লিভিং’’।’
জীবনকে শিল্পিত করে তুলতে হলে শুধু একাডেমিক পড়ালেখা করলেই চলে না, পাঠ্য বইয়ের বাইরে বরং ছড়িয়ে আছে শেখার সবচেয়ে বেশি উপকরণ। আর সেই সব উপকরণের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতেই ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় আর্ট অব লিভিং কোর্স চালু করেছে বলে জানান মিজানুর রহমান রাজু।
উপস্থিত অভিভাবকরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। রাহুল দেবনাথ নামের এক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘প্রতিটি মা-বাবাই চান তাদের সন্তান সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন, সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠুক। আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি সার্টিফিকেটই ধরিয়ে দেবে না, সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। ড্যাফোডিল সেই চেষ্টা করছে বলে কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।’
বাবার কথা শেষ হলে ছেলে রাহুলকে মঞ্চে আহ্বান জানানো হয়। রাহুল মঞ্চে এসে জানান, তিনি তার মা-বাবার কাছে কোনো কিছুই গোপন রাখেন না। তাদের কাছে কিছু গোপন করা মানে নিজের কাছেই গোপন করা।
নরসিংদী থেকে এসেছেন এক অভিভাবক। তাঁর মেয়ে ইশরাত জাহান কণিকা পড়েন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে। এই অভিভাবক বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা কোথায় পড়ছে, কার সঙ্গে পড়ছে তা জানার খুব একটা সুযোগ হয় না। কিন্তু আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই সুযোগ পেয়ে ভালো লাগছে।’ এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান তিনি।
সুদূর নাটোর থেকে এসেছেন এক অভিভাবক। তাঁর ছেলে সৈয়দ হাসিবুজ্জামান পড়ছেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে। এই বাবা জানান, শুরুতে তিনি চাননি, ছেলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুক। তিনি শুনেছেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার অনেক খরচ। এত খরচ কীভাবে জোগাবেন! তাঁর যে মধ্যবিত্ত পরিবার! তারপর এই অভিভাবক হাসিমুখে বললেন, ‘ছেলেকে পড়াতে এ পর্যন্ত কোনো টাকা খরচ করতে হয়নি।’
কীভাবে? সেই গল্প শোনা গেল ছেলে হাসিবের মুখে।‘আমি শতভাগ বৃত্তি নিয়ে ড্যাফোডিলে ভর্তি হই। এবং এখন পর্যন্ত সব সেমিস্টারে সর্বোচ্চ ফলাফল ধরে রেখেছি। ফলে আমি শতভাগ বৃত্তি পাচ্ছি।’
এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘প্রথম দিকে অনেকেই ভয় দেখাত এই বলে যে, প্রাইভেট ভার্সিটি কখনো শতভাগ বৃত্তি দেয় না। তোমাকে ভালো রেজাল্ট করতে দেবে না। ইত্যাদি। কিন্তু এ কথা সত্য নয়। আমি এখন পর্যন্ত শতভাগ বৃত্তি নিয়েই পড়ছি।’
এভাবেই শিক্ষার্থী-অভিভাবকের মুক্ত আলোচনায় এগিয়ে যেতে থাকে অনুষ্ঠান। সময় গড়াতে থাকে দুপুরের দিকে। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে মঞ্চে আসেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. সৈয়দ আখতার হোসেন। তিনি মা-বাবার পাশে থাকার জন্য সব শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানান। এছাড়া অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য মো. ইমরান হোসেন।
উল্লেখ্য, আর্ট অব লিভিং ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিয়মিত আয়োজন। প্রতি সেমিস্টারে একাধিক পর্বে এ আয়োজন করা হয়। আজ শুক্রবার (২৯ জুলাই) ছিল কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, বিবিএ এবং ইটিই বিভাগের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে আয়োজন। আগামী ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে ট্রিপল ই, এনএফই, ইংরেজি, বিবিএ এবং সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে আর্ট অব লিভিং।