গবেষণা নির্ভর শিক্ষার প্রত্যয়
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
শ্রেষ্ঠ জ্ঞান তৈরির কারখানার অবস্থান নিয়ে বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় নতুন জ্ঞানকে বিশ্বসংসারে ছড়িয়ে দিচ্ছে সরবে ও নিরবে। জ্ঞানের স্বাদ কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহ ছাড়া আচ্ছাদন করা সম্ভব হয় কি? আর জ্ঞানকে কোনো সীমাবদ্ধতার লাগাম দিয়ে বাধা যায় কি? না যায় না। কেন না বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাকে প্রশ্রয় দিতে পারে না। বিশ্বব্যাপী সর্বময় বিদ্যাকে চর্চার লালনভূমির ভূমিকায় কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়। আর গবেষণা এ জ্ঞানকে বিস্তৃত করার এক বড় মাধ্যম। গবেষণাকে সাধারণত উন্মুক্ত করা হয় বিভিন্ন সম্মেলনে (কনফারেন্সে)। সম্প্রতি ভারতে এমনই একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অনেক গবেষণাকে বিশ্বব্যাপী প্রকাশ করা হয় যার অংশীদারিত্ব কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও অর্জন করে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী তাদের গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন এ সম্মেলনে।
নভেম্বর মাসের ৮ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত চলে ইন্ডিয়ান অ্যানথ্রোপলজিক্যাল সোসাইটির ৪৬তম বাৎসরিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন। ভারতের মনিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্পাল। পর্বতমালার কোলে এ রাজধানীতে অবস্থিত মনিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি শামীমা নাসরিন, সহকারী অধ্যাপক আইনুল হক, সহকারী অধ্যাপক এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক আবদুর রহমান ও প্রভাষক আসাদুজ্জামান আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাগের অ্যানথ্রোপলজি সোসাইটির সহ-সভাপতি সাইদুজ্জামান আসিফ ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে শাহরিয়ার, সোলাইমান, মোস্তফা হোসাইন, ইসরাত জাহান, সালাহউদ্দিনসহ মোট বার জন এ সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করেন।
মনিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঘেঁটে এবং মনিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায় মনিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার ধরন সম্পর্কে। ভারতের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত মনিপুর বিশ্ববিদ্যালয় মূলত গবেষণা ধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে কোনো বিভাগের স্নাতক ডিগ্রি নেই, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থেকে শুরু হয়ে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রির শিক্ষার্থীরা গবেষণায় অধ্যয়ন করেন।
কথা হয় সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে মনিপুর ঘুরে আসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে। মনিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কি দেখলেন তারা। ঐ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের সাথে রাশিয়া থেকে শুরু করে তানজানিয়ার গবেষকরাও অংশ গ্রহণ করছেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অ্যানথ্রোপলজিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে শাহরিয়ার যিনি এর আগেও কলকাতায় একটি সম্মেলনে নিজের গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ রকম সম্মেলনে অংশগ্রহণ করলে জ্ঞানের স্তর বোঝা যায়। দেশের বাইরের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান চর্চা আমাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, উন্নত চিন্তাধারা তাদের।’ মনিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানগত কাঠামো ও জ্ঞানচর্চার তুলনামূলক বিষয় তুলে ধরে অ্যানথ্রোপলজি সোসাইটির সহ-সভাপতি সাইদুজ্জামান আসিফ বলেন, ‘বাংলাদেশের সংস্কৃতি থেকে দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করা। মনিপুর বিশ্ববিদ্যালয় ফিজিক্যাল অ্যানথ্রোপলজির চর্চা করে আর আমরা কালচারাল অ্যানথ্রোপলজি চর্চা করি। ওদের গবেষণার চর্চা আমাদের থেকে অনেকটা আলাদা।’ সত্যিই যদি দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার কথা বলা হয় তাহলে অবশ্যই দেখা যায় আমাদের চর্চার সাথে বেশ তফাত্ রয়েছে। তেমনি মনিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণায় পার করে পুরোটা সময়। গবেষণার কারণেই তো তালিকার উপরে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। আর সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান গবেষণামূলক নয়।
রাষ্ট্রের ভিন্নতায় বাংলাদেশে এবং ভারতে বসবাসরত মনিপুরীদের নিয়ে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেছেন সহকারী অধ্যাপক এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী। ভারতের সম্মেলনের বিষয়ে ও মনিপুর বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি তিনটি বিষয় তুলে ধরেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অতিমাত্রা শুধুই সনদ প্রদান নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদেরকে গবেষক তৈরি করে। উপমহাদেশের ইতিহাস একটার সাথে আর একটা জড়িত সেখানে এ ধরনের সম্মেলনে জ্ঞানের পরিসর বৃদ্ধি করে ও আন্তঃসম্পর্ক বাড়ায়। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ধরন ও কাঠামো থেকে শিক্ষণীয় বিষয় আছে।’
পুরো সম্মেলন জুড়ে আয়োজকদের মধ্যে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণে আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মত। বাংলাদেশের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী গবেষকদের অংশ গ্রহণ যেন ভারতে ৪৬তম আন্তর্জাতিক নৃবৈজ্ঞানিক সম্মেলনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মনিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আতিথেয়তা যেন ইতিহাসের এক স্তর হয়ে রইবে।