ক্যাম্পাসের প্রথম দিন
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
স্কুল-কলেজে পড়ার সময় থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন শিক্ষার্থীদের মনে ডালপালা মেলতে শুরু করে। স্বপ্নের ক্যাম্পাসে ‘শিক্ষার্থী’ পরিচয়ে প্রথম দিন পা রাখার অনুভূতিটা কেমন? নানাজনের সঙ্গে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রথম দিনের গল্পে উঠে এসেছে অনেক কিছুই। আবেগটাই সেখানে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আলী হোসেন বলেন, গত বছরের মার্চে ছিল আমাদের নবীনবরণ। এই উপলক্ষে মা নতুন জামা কিনে দিলেন। প্রথম ক্লাসে যাবো। কী পরব, কী করব! এসব ভাবতে ভাবতেই রাত পেরোল। ঘুমহীন চোখে, চাপা রোমাঞ্চ নিয়ে সেদিন ক্যাম্পাসে পা রেখেছিলাম।
এখনো আলী হোসেনের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিনটার কথা ভাবলেই কেন যেন মনটা অজানা আনন্দে ভরে যায়। তিনি বলেন, শেরপুরের মতো মফস্বল শহরে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন দেখতাম। সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার দিন তো অবশ্যই বিশেষ কিছু।
প্রথম দিন আমি ছিলাম চাচীর বাসায়। চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেনে। সেই বাসা থেকেই সকালে বেরোলাম। এইটুকুন পথে পাঁচ মিনিটের সংক্ষিপ্ত যানজটে আটকা বালুছড়া। অন্য দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে কাটাই, অথচ সেদিন পাঁচ মিনিটের যানজটেও তর সইছিল না। অবশেষে ক্যাম্পাসে পৌঁছলাম। নিজের বুকের ধুকপুকানি টের পেয়ে নিজেরই হাসি পাচ্ছিল। হাত-পা ঘামছিল। ভাবছিলাম, স্বপ্ন পূরণের দিনটা বোধ হয় এমনই হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী রোশনী জাহান বলেন, এর আগেও ক্যাম্পাসে এসেছিলাম ভাইভা দেয়ার জন্য। কিন্তু ছাত্রী হিসেবে যাওয়ার অনুভূতিটা একেবারে অন্যরকম। ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে ক্লাসরুম খুঁজে বের করার সময়টাতে আনন্দ আর ভয়ের একটা অদ্ভুত মিশ্রণ টের পাচ্ছিলাম। ক্লাসে গিয়ে নতুন সহপাঠীদের সঙ্গে কথা হলো। বুঝলাম, তাদের অবস্থাও আমার মতো।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী সোনিয়া রহমান বলেন, ক্যাম্পাসে প্রথম দিন একে একে বিভাগের শিক্ষকরা নিজেদের পরিচয় দিলেন। নিয়মকানুন বললেন। প্রথম দিন ক্লাস শুরুই হলো একগাদা উপদেশ শুনে! তবে সত্যি বলতে, সেদিন কোনো কিছুই কান দিয়ে ঢুকছিল না
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ছাত্রী মৌমিতা চৌধুরী বলেন, ‘আমি আমার স্বপ্নের ক্লাসরুমে বসে আছি’-এটা বিশ্বাস করতেই তো পুরোটা সময় কেটে গেল! কী যে আনন্দ হচ্ছিল! লক্ষ্মী মেয়ের মতো চুপচাপ বসে ছিলাম ঠিক। তবে সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে একটু নেচে নিতাম!
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ। পা রেখেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় নামের জ্ঞানের ঘরে। আর এ দিনটিই ছিল বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন। ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেই বড় ভাইয়া এবং আপুদের ডাকা-ডাকি। তাদের সঙ্গে এক প্রকার স্নায়ুযুদ্ধ করে বিভাগের করিডোরে প্রবেশ। সবগুলো মুখই অপরিচিত। কাউকেই চিনি না। সবাই শুধু এক অপরের দিকে তাকাই। আমরা কেউ কোনো কথা বলি না। আজকে এই কথা স্মরণ হলে অবাক হই। এখন আমরা একে অপরের বন্ধু। তাদের ছাড়া এখন ক্যাম্পাসে দিন যেন কাটতেই চায় না।
মানুষ মাত্রই কথা না বলে থাকতে পারে না। তার পর ধীরে ধীরে আমরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলা শুরু করলাম। নাম, কোথায় থেকে এসেছি? আর এভাবেই আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধনের দিকে যাত্রা শুরু হয়েছিল। ক্যাম্পাসের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত সব জায়গায়ই আমাদের পদচারণা।
ক্যাম্পাসের কাঁঠাল তলা, লালন চত্বর, থিয়েটার কটেজ, শহীদ মিনার, শিক্ষক ডরমেটরির সিঁড়ি- এসব জায়গায় বসে বলা শুরু হয়েছিল একেক জনের জীবনের নানা অজানা গল্প। গল্পগুলো এতই ছোট ছিল যে তাই বলা যায় অনুগল্প। আর এগুলোই হয়ে ওঠেছে আমাদের ক্যাম্পাস জীবনের প্রথম দিনের অনুগল্প।