বাংলাদেশের পতাকা হাতে সুইজারল্যান্ডে

বাংলাদেশের পতাকা হাতে সুইজারল্যান্ডে

  • রাফসান সাবাব খান, সুইজারল্যান্ড থেকে ফিরে

অনুষ্ঠানের নামওপেন মাইক নাইট বিশ্বের একেক প্রান্ত থেকে সুইজারল্যান্ডের হার্জবার্গ রিসোর্টে জড়ো হওয়া তরুণতরুণীরা ইচ্ছেমতো পরিবেশন করছিলেন নাচগান পিয়ানো আর বিট বক্সিংও বাদ পড়েনি এরই মধ্যে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে গেয়ে ফেললাম, ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী…!’ আমার সঙ্গে ইংরেজিতে গাইলেন এক বিদেশিনী, যুক্তরাজ্যের এলা ডেন্টন আর গিটার বাজালেন সুইস তরুণ নিকোলা এমন সব রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা আর বন্ধুত্বের গল্পে মুখর ছিলসুইজারল্যান্ড গ্লোবাল চেঞ্জ মেকারস ইয়ুথ সামিট, ২০১৬’-এর দিনগুলো বিশ্বজুড়ে চার হাজার আবেদনকারীর মধ্য থেকে ৬০ জনকে এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায় আন্তর্জাতিক সংগঠনগ্লোবাল চেঞ্জ মেকারস ব্রিটিশ কাউন্সিলের হাত ধরে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়েছিল।

বাংলাদেশের পতাকা হাতে রকম একটি মঞ্চে উপস্থিত হতে পারাটা ছিল অনেকটা ছোটবেলার স্বপ্নের মতো। সঙ্গে বোনাস হিসেবে ছিল স্বপ্নের গন্তব্যসুইস আল্পস’-এর টিকিট। আমি ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে এবারের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রিভা শমী

২৪ থেকে ৩০ জুলাই, সাত দিনের জন্য আমাদের ঠিকানা ছিল ছোট্ট শহর আরাউয়ের এক পাহাড়চূড়ায়হার্জবার্গ রিসোর্টে। এই সুবাদে রুম থেকে বেরোলেই দেখতে পেতাম মনোরম সব দৃশ্য। অত উঁচু থেকে রাতের বেলা পুরো শহরটা দেখা যেত। খোলা আকাশের নিচেই চলত আড্ডাবাজি, এমনকি পড়াশোনাও। এখানে শেখার ব্যাপারটা ছিল একটু অন্য রকম। বাঁধাধরা কোনো ক্লাসরুম ছিল না বললেই চলে। দুএকটা যা ছিল, সেখানেও শেখার ধাঁচটা গতানুগতিক ক্লাসরুমের মতন না। চেয়ারের পাশাপাশি রাখা থাকত ইয়োগা ম্যাট। আর বিষয়বস্তুগুলোও ছিল বিভিন্ন রঙে রাঙা। সুদূর ব্রাসেলস থেকে মিস কিরা ভান এসেছিলেনব্যর্থতাবিষয়ে একটা ক্লাস নিতে। সেখানেই শিখলাম, ব্যর্থতাকে সহজভাবে মেনে নেওয়া যায়। বিশ্বখ্যাত নারী উদ্যোক্তা ম্যাডি শর্মার বয়স পঞ্চাশের বেশি। অথচ কথা শুরুর আগে হেডস্ট্যান্ড (মাথা নিচে, পা ওপরে তুলে দিয়ে করা একধরনের যোগব্যায়াম) করে দেখালেন!

ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে চলত গবেষণা। আমি ছিলাম সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ বিভাগে। অন্যান্য বিভাগে ছিল শিক্ষা, মানবাধিকার, স্বাস্থ্য ইত্যাদি। প্রতিটি সেশন শুরু হওয়ার আগে থাকতএনারজাইজারপর্ব। এই পর্বে দেখা যেত কোনো না কোনোভাবে সবাইকে চাঙা করে তোলার অভিনব সব উপায়

এসব রুটিনমাফিক কাজের বাইরেও ছিল অফুরন্ত সময়। উদ্দেশ্যসবাইকে চেনাজানার একটা সুযোগ করে দেওয়া। খোলা আকাশের নিচে বসে চলত অবিরাম আড্ডা। একদিন বিকেলে একটা ফুটবল ম্যাচও হয়ে গেল। এতগুলো দেশের প্রতিনিধিদের দুই দলে ভাগ করাও ছিল কঠিন। সব শেষে পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড আর ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিরা একজোট হলেন। অন্যদিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেলাম বাংলাদেশ, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া আর ভারতের শিক্ষার্থীরা। দারুণ খেলা হলো! ঘানার দুর্দান্ত নারী স্ট্রাইকারের কাছে হিমশিম খেল আমাদের রক্ষণভাগ। তবু শেষ পর্যন্ত আমরা জিতে গেলাম আফগান বন্ধু ওমাইদের গোলে। যদিও উদ্যাপনটা দুই দল একসঙ্গেই করেছিল

ঘোরাঘুরিও কম হয়নি। সবচেয়ে উপভোগ্য ছিল জুরিখ ঘুরে দেখা। নৌকায় পুরো শহরটা একবার দেখা হয়ে যায়। ছাড়া আমরা হেঁটে বেরিয়েছি শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। পুরো সাত দিনে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত থেকে শুরু করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছে

আবিষ্কার করলাম, বাংলাদেশকে নিয়ে সবার মধ্যে অনেক আশা। দেখে নতুন করে অনুপ্রেরণা পেলাম। কিন্তু এই সম্মেলনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তিদেশের সীমানা ছাড়িয়ে খুঁজে পাওয়া বন্ধুত্ব। সবার চোখেই ছিল একটা স্বপ্নসুন্দর, শান্তিপূর্ণ পৃথিবী। এই স্বপ্ন বুকে বেঁধে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশা নিয়েই শেষ হয় এই দারুণ যাত্রা

গ্লোবাল চেঞ্জ মেকারস প্রতি বছরই এমন সম্মেলন আয়োজন করে। আগ্রহীরা বিস্তারিত জানতে এই ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারতে পারেন: www.global-changemakers.net

লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র

সূত্র: প্রথম আলোfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment