‘কোচিংয়ের কোনো প্রয়োজন নেই’

‘কোচিংয়ের কোনো প্রয়োজন নেই’

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, উচ্চশিক্ষাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।


  • বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হচ্ছে ভর্তি প্রক্রিয়া। এই মুহৃর্তে ভর্তীচ্ছুদের করণীয় কী?

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এখন থেকেই জোর প্রস্তুতি নিতে হবে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচএসসি লেভেল থেকেই প্রশ্ন করা হয়। আমার পরামর্শ, ভর্তীচ্ছুরা যেন এইচএসসির সিলেবাসের আলোকে প্রস্তুতি নেয়।

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার ভর্তির সুযোগ নেই। তাদের প্রতি আপনার কী পরামর্শ?

প্রতিযোগিতায় যারা টিকবে না, তারা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে। আমাদের অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয়ও পড়াশোনার সুযোগ আছে। দেশে আরো অনেক পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সেগুলোয় সুযোগ পাবে। ভর্তি পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি থাকলে মেধাবী ছেলেমেয়েরা ভালো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাবে।

  • বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং কতটা প্রয়োজন?

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিংয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। এইচএসসির যে সিলেবাস, সেটার ওপর ভিত্তি করেই প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়। ছাত্রছাত্রীদের যদি এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি থাকে, সেই প্রস্তুতি দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারবে।

  • গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবছরই অনেক ভালো করে।

প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুল-কলেজে শিক্ষকের অভাব, গ্রন্থাগারের অভাব, গবেষণাগারের অভাব আছে। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা নিজ চেষ্টায় প্রস্তুতি নেয়। ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম সারিতে অবস্থান করে। এতে বোঝা যায়, অভাব বা দুর্বলতা থাকলেও যার মেধা ও প্রচেষ্টা আছে, সে সব সময়ই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকে।

  • বিষয় নির্বাচনে অনেকেই ভুল করে, পরে পস্তায়। চাকরির বাজারকে কতটা মাথায় রাখতে হবে?

এ সময় অভিজ্ঞতা কম থাকে, অনেকেই অভিভাবকদের আগ্রহে বিষয় পছন্দ করে, ভর্তির পরে অনেকে পড়ার বিষয়ে আগ্রহ খুঁজে পায় না। পছন্দের বিষয় নির্বাচন ছাত্রছাত্রীদের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। অভিভাবকরা এ ক্ষেত্রে শুধু পরামর্শ দিতে পারেন। বাজারে চাহিদা আছে, সরাসরি কাজের ক্ষেত্র আছে—এমন বিষয় বেছে নেওয়াই ভালো।

  • বিশ্ববিদ্যালয়, না বিষয়—কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

এ সিদ্ধান্ত ছাত্রছাত্রীর ওপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো। আমি মনে করি, আগ্রহের বিষয়ে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ভালো করা যায়। তবে এটাও ঠিক, বিশ্ববিদ্যালয়ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ৪৫ হাজার। অথচ প্রতিবছর এইচএসসি পাস করে প্রায় সাড়ে সাত লাখ। যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাবে না, তারা প্রাইভেটে ভর্তি হবে। তবে দেশের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আরো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা দরকার। বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব। উচ্চশিক্ষার স্বার্থে আরো বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করবে।

  • অনেক বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয়বার ভর্তি নিচ্ছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয়বার ভর্তি নিচ্ছে না। এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এ নিয়ম চালু করেছে। এটির পেছনে অনেক যুক্তি আছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কমিটি পাঁচ-সাত বছরের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করে কয়েক বছর ধরে আলোচনা ও বৈঠকের পরে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্বিতীয়বার সুযোগ থাকায় প্রথমবার ভর্তি প্রস্তুতিতে ছাত্রছাত্রীদের গাফিলতি দেখা যায়। এ দায়সারা মনোভাব তাদের পরবর্তী শিক্ষাজীবনেও প্রভাব ফেলে। সুযোগ একবারই আসে এবং তা কাজে লাগাতে না পারলে তার ফল নিজেকেই ভোগ করতে হবে। লক্ষ্যে পৌঁছানোর ট্রেন ধরতে ব্যর্থ হলে বাসে, নৌপথে অথবা ভিন্ন উপায়ে তাকে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে হবে। একটি বছর জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমার পরামর্শ, একটি বছর নষ্ট না করে তোমরা যে যেখানে সুযোগ পাবে ভর্তি হবে। হতাশ হওয়া যাবে না। হতাশ হলেই ব্যর্থতা চলে আসবে। সামনে অনেক সম্ভাবনা। একটি সম্ভাবনা ধরা দেয়নি, তাতে কী? সামনে দশটি সম্ভাবনার দ্বার তোমার সামনে খুলে যাবে।

সূত্র: কালের কণ্ঠfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment