নির্দেশ না মানলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষামন্ত্রী
- ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, যে সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সফল হতে পারেনি, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার পরিবেশ ও নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যারা মুনাফার লক্ষ্য নিয়ে চলতে চান, যারা নিজস্ব ক্যাম্পাসে এখনো যাননি এবং যারা একাধিক ক্যাম্পাসে পাঠদান পরিচালনা করছেন তারা আইন অনুসারে সঠিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে না পারলে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ তাদের বিরুদ্ধে অন্য আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। মন্ত্রী আজ বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) ৬ষ্ঠ সমাবর্তনে ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতিত্বকালে এ কথা বলেন।
ঢাকার সাভারে আশুলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে আয়োজিত সমাবর্তনে আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, সমাবর্তন বক্তা ভারতের ভিআইটি ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও চ্যান্সেলর এবং এডুকেশন প্রমোশন সোসাইটি ফর ইন্ডিয়ার সভাপতি ড. জি বিশ্বনাথান, ডিআইইউ-এর উপাচার্য প্রফেসর ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম এবং ইউনিভার্সিটির ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান।
শিক্ষামন্ত্রী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সম্ভাবনাময় উচ্চশিক্ষাখাত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সংখ্যা অনেক বেশি, শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশি। বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯৫ টি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪০ টি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ১ হাজার ৬৩২ বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ণ করছে। আমাদের কাজ ও সাফল্যের উপর নির্ভর করছে এই সম্ভাবনাকে আরও অগ্রসর করা।
তিনি আরো বলেন, আমরা সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকারী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না। তারা সকলেই আমাদের সন্তান এবং জাতির ভবিষ্যত। তাদের সকলের জন্যই আমরা মানসম্মত শিক্ষা এবং সকল সুযোগ নিশ্চিত করতে চাই। কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও তাদের নূন্যতম শর্ত পূরণ করতে পারেনি। এভাবে তারা বেশীদিন চলতে পারবেন না।
নিজস্ব জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করে পূর্ণদ্যোমে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করায় এবং আইসিটি ভিত্তিক তাদের একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করায় শিক্ষামন্ত্রী ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। তাছাড়া, বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রকল্প কৃষিভিত্তিক প্রসেসড ফুডস্ এর জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস এসোসিয়েশন (বাপা) এর সাথে এমওইউ স্বাক্ষর করায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান এবং আশা প্রকাশ করেন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ অব্যাহত রাখবে।
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের শিক্ষার মূল লক্ষ্য, আমাদের নতুন প্রজন্মকে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে প্রস্তুত করা। প্রচলিত গতানুগতিক শিক্ষায় তা সম্ভব নয়। বর্তমান যুগের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ আধুনিক বিশ্বমানের শিক্ষা ও জ্ঞান প্রযুক্তিতে দক্ষ, নৈতিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এক পরিপূর্ণ মানুষ তৈরি করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। তারা আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবে এবং ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেন, উন্নয়নের পূর্ব শর্তই হচ্ছে শিক্ষা আর শিক্ষা হচ্ছে একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া। প্রতিনিয়ত গবেষণার মাধ্যমে নতুন থেকে নতুনতর উদ্ভাবন পদ্ধতি আবিস্কৃত হচ্ছে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা নিয়মিতভাবে গবেষণা কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে এবং নতুন উদ্যোক্তা তৈরী করছে যা বৃহত্তর উন্নয়নের দিগন্ত উম্মাচন করবে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশের আইসিটি খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখে চলেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি উদ্যোক্তা সৃষ্টির এ ধারা অব্যাহত রাখবে যাতে করে শিক্ষার্থীরা চাকরি খোঁজার পরিবর্তে চাকরি দিবে। তিনি আরো বলেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বিশ্বের অনেক নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বিনিময় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে এবং নিয়মিতভাবে শিক্ষার্থী বিনিময় করে আসছে । তিনি আশা প্রকাশ করেন, ড্যাফোডিলের এ উদ্যোগ শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে এবং শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের জন্যই বহির্বিশ্বের দ্বার উম্মোচনে সহায়ক হবে।
সমাবর্তনে ৩৪৭৩ জন নবীন গ্র্যাজুয়েট শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে সনদ গ্রহণ করেন। এবারের সমাবর্তনে চারজন গ্র্যাজুয়েটকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। এরা হলেন ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের পারমিতা রহমান আইভি ও নূসরাত জাহান হ্যাপী, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সিরাজুম মুনিরা ও পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্টের মো. ইমদাদুল হক। এছাড়াও অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনকারী ১৩ জন গ্র্যাজুয়েটকে স্বর্ণপদক প্রদান করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে মন্ত্রী সমাবর্তন শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেন। উল্লেখ্য, ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ডিআইইউ ১৭ টি বিভাগে ১৬০০০ শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েশন প্রদান করে।