মা বাবার পা ধুয়ে দিল শিক্ষার্থীরা
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবক এই ত্রিমাত্রিক সম্পর্ককে আরে বেশি শক্তিশালী ও দৃঢ় করার লক্ষ্যে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আজ শুক্রবার (৩১ মার্চ) ‘প্যারেন্টস ডে’ শীর্ষক কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস আশুলিয়ায় প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী নিজ হাতে তাদের মা বাবার পা ধুয়ে দেয়। এছাড়া মা বাবাকে বুকে জড়িয়ে ধরাসহ আরো নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী প্যারেন্টস ডে পালিত হয়।
সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে ‘প্যারেন্টস ডে’র কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা তাদের মা বাবার পা ধুয়ে দেয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তৃত সবুজ মাঠে এক অবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়। এমন অভূতপূর্ব সম্মান পেয়ে অনেক অভিভাবক অঝোরে কাঁদতে থাকেন। অনেক শিক্ষার্থীর চোখেও জল দেখা যায় এ সময়।
অভিভাবকদের পা ধুয়ে দেওয়ার পর মূল মঞ্চে শুরু হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান। সভাপতির বক্তব্যের আগে শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে তাদের মা বাবাকে পাঁচ মিনিট বুকে জড়িয়ে ধরে রাখে। তখনও অডিটরিয়ামজুড়ে এক আবেগঘন দৃশ্য তৈরি হয়। প্রিয় মা বাবাকে বুকে জড়িয়ে ধরে অনেক শিক্ষার্থীই অঝোরে কাঁদতে শুরু করে। কেঁদে ফেলেন অনেক অভিভাবকও।
এরপর সভাপতির বক্তব্যে মো. সবুর খান বলেন, আমাদের সমাজ থেকে মূল্যবোধ ক্রমশ উঠে যাচ্ছে। নানা ব্যস্ততায় সন্তান ভুলে যাচ্ছে মা বাবকে। ঠিকমতো খোঁজখবর নিতে পারে না বলে বৃদ্ধ মা বাবাকে পাঠাচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। এই সংস্কৃতির অবসান হওয়া দরকার। তাই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আর্ট অব লিভিং কোর্স রাখা হয়েছে। এই কোর্সে একজন শিক্ষার্থীকে মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মো. সবুর খান বলেন, মা বাবার আশির্বাদ ছাড়া জীবনে কখনো সফল হওয়া যায় না। তাই মা বাবাকে কখনো কষ্ট দেয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, মা বাবার ভালোবাসাই একমাত্র নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
বিশ্ববিদ্যালয়েল উপচার্য অধ্যাপক ড. ইউসুফ মাহবুবুল ইসলাম বলেন, মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেই মানুষ হওয়া যায় না। মানুষ হতে হলে মানবিক গুণাবণলী অর্জন করতে হয়। আর মানবিক গুণাবলী অর্জন করা সহজ নয়। এজন্য মা বাবার নির্দেশিত পথে চলতে হয়, তাদের কথা শুনতে হয়। তাদেরকে সব সময় শ্রদ্ধা করতে হয়।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল হক, ট্রেজারার হামিদুল হক খান, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ এম এম হামিদুর রহমান, পরিচালক (স্থায়ী ক্যাম্পাস) অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল, সহযোগী অধ্যাপক মাসুদ ইবনে রহমান, ক্রিড়াবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল পাশা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন এবং এ ধরনের আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূয়সী প্রসংশা করেন। এ ধরনের আয়োজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের পারষ্পরিক মিথস্ক্রিয়া বাড়াতে এবং একে অপরকে জানতে সহায়তা করে বলে মন্তব্য করেন যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অভিভাবকরা। এ আয়োজন যেন নিয়মিত হয়–বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এমন দাবি জানান তাঁরা।