জীবন থেকে ‘অজুহাত’ সরাও : নিয়াজ রহিম
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
জীবনের অভিধান থেকে ‘যদি’, ‘হয়ত’, ‘সম্ভবত’, ‘মোটামুটি’ ইত্যাদি নেতিবাচক শব্দকে বিসর্জন দিতে বলেছেন রহিম আফরোজ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের গ্রুপ ডিরেক্টর নিয়াজ রহিম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটি জাতীয় সমস্যার নাম ‘অজুহাত’। আমরা নানা অজুহাতে নিজের ভেতরের সক্ষমতাকে অবহেলা করি। এ জন্য জীবনে সফল হতে পারি না। এ সময় তিনি নবীন উদ্যোক্তাদেরকে নিজের ভেতরের সক্ষমতার ওপর বিশ্বাস রেখে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি আজ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভার্সিটির (ডিআইইউ) ক্যারিয়ার ডেভলপমেন্ট সেন্টার আয়োজিত ১২ পর্বের উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ক ‘ডিআইইউ ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া বক্তৃতা মালা’র নবম পর্বের প্রধান বক্তা হিসেবে এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভার্সিটির ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইউসুফ মাহাবুবুল ইসলাম, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম মাহাবুব-উল হক মজুমদার ও ইনোভেশন এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের পরিচালক মো. আবু তাহের খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডাইরেক্টর অব স্টুডেন্ট এফেয়ার্স সৈয়দ মিজানুর রহমান।
অনুষ্ঠানে নিয়াজ রহিম আরো বলেন, ব্যবসায়িকভাবে সফল হতে হলে কাস্টমার-বেইজড পলিসি নির্ধারণ করতে হবে। কাস্টমারের চাওয়া পাওয়া এবং সুযোগ সুবিধাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কাস্টমারকে পরিবারের সদস্য মনে করতে হবে। রহিম আফরোজের সফল হওয়ার পেছনে কাস্টমারের আস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে উল্লেখ করেন এই খ্যাতিমান ব্যবসায়ী। তিনি ২০০০ সালের একটি ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ভারতের একটি ব্যাটারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যাটারি উৎপাদন করতে এসেছিল। তারা নানাভাবে চেষ্টা করেছিল রহিম আফরোজের ডিলারদের কাছে নিজেদের ব্যাটারি বিক্রি করতে। কিন্তু কোনোভাবেই সফল হয়নি। শেষে দুই বছর পর তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। এখন রহিম আফরোজ ভারতসহ বিশ্বের ৬৬টি দেশে ব্যাটারি রপ্তানি করে। এটা সম্ভব হয়েছে রহিম আফরোজের প্রতি ডিলারদের আস্থার কারণে।
নবীন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে মো. সবুর খান বলেন, তোমরা যারা উদ্যোক্তা হতে চাও তাদের উচিত রহিম আফরোজের পারিবারিক বন্ধন ও ঐতিহ্যকে অনুসরণ করা। কারণ, বাংলাদেশে রহিম আফরোজ একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা প্রথম প্রজন্ম থেকে দ্বিতীয় প্রজন্মে সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে।
এ সময় মো. সবুর খান আরও বলেন, নিয়াজ রহিম ব্যবসায়ী হিসেবে সবার শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন সততা ও বিনয়ের মাধ্যমে কাজ করার জন্য। একটি আধুনিক ও সাবলম্বী বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের দেশে আরও অনেক নিয়াজ রহিম দরকার বলে মন্তব্য করেন মো. সবুর খান।
শঠতা, কারচুপি, দুর্নীতি ও অনিয়মের ধূর্ত পন্থা পরিহার করে কঠোর পরিশ্রম ও সততার মাধ্যমে যারা নিজেদেরকে তিল তিল করে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলেছেন, সেই সব উদ্যোক্তাদের মুখ থেকে তাদের পরিশ্রমী ও অধ্যবসায়ী জীবনের কথা শোনার ব্যবস্থা করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভার্সিটি (ডিআইইউ)। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার এ উপলক্ষ্যে দেশের শিল্পখাতের মোট ১২ জন উদ্যোক্তাকে নিয়ে ডিআইইউ আয়োজন করেছে ‘উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ক ডিআইইউ ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া বক্তৃতা মালা’। ১২ পর্বের লোকবক্তৃতামালার ৯ম পর্বের বক্তৃতায় আজ বক্তব্য রাখেন ‘রহিম আফরোজ (বাংলাদেশ) লিঃ এর গ্রুপ ডিরেক্টর নিয়াজ রহিম।
আমন্ত্রিত এই ১২ জন সফল উদ্যোক্তার বক্তৃতাসমূহ নিয়ে পরবর্তিতে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হবে, যা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ব্যবসা, অথনীতি ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের শিক্ষার্থীদের জন্য রেফারেন্স পুস্তক হিসাবে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করবে আশা করা যায়। এ পুস্তক শিক্ষার্থীদেরকে তাদের অধিত তাত্তি¡ক জ্ঞানকে বাস্তবতার আলোকে বুঝতে ও শিখতে সাহায্য করবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। উল্লিখিত ১২জন উদ্যোক্তার উপর ডিআইইউ থেকে ১২টি প্রামাণ্যচিত্রও নির্মণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভার্সিটি আশা করছে যে, এ লোকবক্তৃতামালা নতুন প্রজন্মের সৎ, শিক্ষিত ও মেধাবী উদ্যোক্তাদেরকে সাহস, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য ও অনুপ্রাণিত করবে। উদ্যোক্তা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার সম্ভাবনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ গতিতে এগুতে পারছে না বলে যে ধারণা চালু রয়েছে, এ লোকবক্তৃতামালা, সে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠতে অনেকখানি সাহায্য করবে আশা করা যায়।