বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ লাইব্রেরি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে
- মো. সাইফুল ইসলাম খান
মনকে সতেজ ও প্রসারিত করে জীবনকে সুন্দররূপে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন জ্ঞান। নিজেকে জানা বা জ্ঞান অর্জন করার যত গুলো পন্থা আছে বই পড়া তার মধ্যে অন্যতম। শিক্ষার্থীদের পাঠের স্বাধীনতা ও স্বাধীন চিন্তার অবকাশ এর জন্য স্বাধীনভাবে বই পড়া একান্ত প্রয়োজন। যা পরবর্তীতে দেশ ও জাতি গঠনের জন্য কার্যত ভুমিকা পালন করে। আর স্বাধীনভাবে বইপড়ার জন্য প্রয়োজন লাইব্রেরি। পর্যালোচনা করলেই বোঝা যায় লাইব্রেরি হল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণ তথা জ্ঞানের ধারক ও বাহক। যে দেশের গ্রন্থাগার যত বেশি সমৃদ্ধ সে দেশ তত বেশি উন্নত। আর এই মর্ম বাক্য অনুধাবন করেই রাজধানী ঢাকার অদুরে ড্যাফোডিল স্মার্ট সিটি, আশুলিয়াতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এক লক্ষ দশ হাজার (১,১০,০০০) স্কয়ার ফিট আয়তনের ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরি। যেখানে একাডেমিক বইসহ বিশ্বের যাবতীয় জ্ঞান যেমন ইতিহাস, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, কৃষ্টি কালচার, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ের উপরে থরে থরে সাজানো আছে নতুন ও পুরনো সব বই। এই লাইব্রেরিতে বইয়ের কালেকশন খুব ভালো, সব মিলিয়ে রয়েছে প্রায় এক লক্ষ (১,০০,০০০) বই এর বিশাল সমাহার। ডি আই ইউ কমিউনিটির সবাই এই লাইব্রেরির মেম্বার হতে পারে। বসে বসে বই পড়ার ব্যবস্থাটাও বেশ চমৎকার, একসাথে ৭৫০ জন ব্যবহারকারী এই লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারে, মেম্বার হয়ে বই বাসায় নিয়ে পড়ার সুযোগ আছে।
সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে লাইব্রেরি সেবা প্রদানের জন্য এই লাইব্রেরিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি সেকশন যেমন সার্কুলেশন, ক্যাটালগিং এন্ড প্রসেসিং, মেইন স্ট্যাক, রেফারেন্স এন্ড রিজার্ভ, নিউজপেপার এন্ড পিরিওডিক্যাল, আর্কাইভস এন্ড অডিও ভিজুয়াল ম্যাটেরিয়ালস ।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর গৌরবময় অবদানকে কেবলই একটি জাতিকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে নয়, তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের কাজে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এখানে তৈরি হয়েছে বিশাল আয়তন ও সংগ্রহের সমন্বয়ে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। যা নতুন প্রজন্মের এবং বাংলাদেশের সত্যিকার ইতিহাসের মধ্যে ব্যবধান পূরণ করতে ভূমিকা পালন করবে।
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে প্রথাগত লাইব্রেরি সেবার পাশাপাশি বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ই-লাইব্রেরি সার্ভিস। রয়েছে ই-রিসোর্স ব্রাউজিং সেন্টার। এই ই-লাইব্রেরির মধ্যে রয়েছে ই-বুক, ই-জার্নাল, ই-ম্যাগাজিন, ইউ জি সি, ইউ ডি এল এবং বিভিন্ন ন্যাশনাল এন্ড ইন্টারন্যাশনাল কন্সোর্শিয়াম থেকে সাবস্ক্রাইব করা ই-রিসোর্স। সমসাময়িক লাইব্রেরি সফটওয়্যারগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে বর্তমানে এই করোনা পরিস্থতিতেও লাইব্রেরি সেবা থেমে নেই। Open Athens এর মাধ্যমে এই লাইব্রেরি ব্যবহারকারী বিশ্বের যে কোন জায়গা থেকে ই-রিসোর্স গুলোতে এক্সেস করতে পারে। VuFind এর মাধ্যমে একটি সার্চিং ব্যবস্থা আছে যার কারণে আর আলাদা আলাদা ডাটাবেজ এ সার্চ করার দরকার হয় না।। এছাড়া KOHA, DSpace তো আছেই।। শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের গবেষণা রিপোর্ট কতভাগ প্রকৃত তা যাচাই করার জন্য ব্যাবহার করা হয় Tunitin সফটওয়্যার।।
এই লাইব্রেরির বিভিন্ন স্থানে নিভৃতে বসে বই পড়ার সুযোগ যেমন আছে, তেমনি আবার আরেক কোণে গড়ে উঠেছে ‘ক্যাফে লাইব্রেরি’, যেখানে পড়ুয়ারা কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বা হালকা কিছু খেতে খেতেই বই পড়তে পারবেন, আবার চাইলে সমমনাদের সাথে নিয়ে বইয়ের গল্প আর আড্ডায়ও মেতে উঠতে পারবেন।এখানে পুরা লাইব্রেরিজুড়ে পাঠকদের জন্য রয়েছে ফ্রি WiFi ব্রাউজিংয়ের ব্যবস্থা, যা ড্যাফোডিল কমিউনিটির বইপ্রেমীদের জন্য হয়ে উঠেছে এক স্বপ্নের ভুবন ।
তরুণ প্রজন্ম ও যুবসমাজকে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ থেকে মুক্ত রাখার জন্য বই পড়া ও খেলাধুলার বিকল্প নেই। তাই লাইব্রেরিকে পাঠমুখর করার লক্ষ্যে পাঠকদের পাঠ অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, উপলব্ধি ও মত বিনিময়ের লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন গ্রুপ ‘পাঠ-আড্ডা’র আয়োজন করে। মানুষের মানসিক উৎকর্ষতা, কাজকর্মে সচ্ছতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা, উন্নত জীবনযাপন সর্বোপরি নিজেকে জানার জন্য চাই লাইব্রেরি।
মো. সাইফুল ইসলাম খান
উর্ধ্বতন জনসংযোগ কর্মকর্তা, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি