আমরা শুধু সমস্যার কথা বলি, সমাধান খুঁজি না : ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ম সমাবর্তনে শিক্ষামন্ত্রী
- ক্যাম্পাস ডেস্ক
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৯ম সমাবর্তন আজ রবিবার (৯ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস আশুলিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, এমপি। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে ভিডিওবার্তা পাঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কামিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহিদুল্লাহ। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে অনলাইনে বক্তব্য রাখেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ভারতীয় সমাজসেবক কৈলাশ সত্যার্থী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান। অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম মাহবুব উল হক মজুমদার প্রমুখ।
এবারের সমাবর্তনে স্প্রিং-২০১৯ থেকে সামার-২০২১ পর্যন্ত সময়কালে ব্যাচেলর ও মাস্টার্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১০৩৪৩ জন স্নাতক ও ১৮২৫ জন স্নাতকোত্তরসহ মোট ১২১৬৮জন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জনকারী ১২ জন গ্র্যাজুয়েটকে স্বর্ণপদক প্রদান করেন। এবারের সমাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি দুটি নতুন স্বর্ণ পদক প্রবর্তন করেছে। পদক দুটি হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে স্বর্ণপদক এবং শেখ মুজিবুর রহমান স্বর্ণপদক। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী পদক পেয়েছেন ১জন এবং শেখ মুজিবুর রহমান স্বর্ণপদক পেয়েছেন ১জন শিক্ষার্থী।
সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আমরা শুধু সমস্যার কথা বলি, সমাধান খুঁজি না। টেলিভিশন খুললেই টক শোতে শুধু সমস্যার কথা শোনা যায়, কিন্তু সমাধানের কথা কেউ বলেন না। আমরা প্রচুর কথা বলি, কিন্তু যোগাযোগ তৈরি করতে পারি না। আমরা অনেক চিন্তা করি, কিন্তু কোনো সমস্যার গভীরে গিয়ে চিন্তা করতে পারি না। এসব সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী না হলে দেশ উন্নত হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পরীক্ষা নির্ভর এবং সনদনির্ভর হয়ে আছে। কিন্তু সনদই সব নয়। যদি তাই হতো তাহলে দেশে এত সনদধারী বেকার থাকত না। সময় এসেছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। একেবারে প্রাথমিক পর্যায় থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার কাজ চলছে।
সদ্য গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশে দীপু মনি আরও বলেন, আমাদের অন্তত তিনটি মা রয়েছে। জন্মদাত্রী মা, মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমি। যে মা আমাদেরকে জন্ম দিয়ে পৃথিবীতে এনেছেন তাকে যেন আমরা না ভুলি, যে ভাষায় আমরা কথা বলি সেই ভাষাকে যেন না ভুলে যাই, এবং যে দেশের আলো হওয়ায় বেঁচে আছি সেই দেশকে যেন ভুলে না যাই। জীবনে যে পর্যায়েই থাকি না কেন, এই তিন মাকে অন্তরে ধারণ করার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় তোমাদেরকে যে শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছে সেই শিক্ষা কাজে লাগিয়ে তোমরা দেশমাতৃকার সেবা করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণ কামনা করেন এবং ড্যাফেডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে ধনব্যাদ জানান এমন একটি সফল সমাবর্তন আয়োজন করার জন্য।
সবশেষে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা তোমাদের চলার পথে বাধা দিয়েছে তাদেরকে কখনো ভুলো না। বরং তাদেরকে ধন্যবাদ দাও। তাদের বাধার কারণেই তুমি বাধাকে অতিক্রম করতে শিখেছ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহিদুল্লাহ ভিডিওবার্তায় বলেন, পৃথিবী দ্রুত বদলে যাচ্ছে। এই বদলে যাওয়া পৃথিবীর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হলে প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। পৃথিবীর বাজার চাহিদা কী, সেদিকে লক্ষ্য রেখে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে সফল হওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইউজিসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, গুণগত শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। করোনা মহামারির মধ্যেও গত দুই বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন চেষ্টা করেছে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে। এসময় তিনি ড্যাফেডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশংসা করে বলেন, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় এই কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও অনলাইনে গুণগত শিক্ষা প্রদান করেছে।
সমাবর্তন বক্তা কৈলাশ সত্যার্থী অনলাইনের মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত হয়ে বলেন, বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার দেশ। এই দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শক্তি হচ্ছ তোমরা। অর্থাৎ দেশটির তরুণ ও যুব সমাজ। তোমাদের অপরিসীম মেধা, যোগ্যতা ও পরিশ্রমের উপর ভর করে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বিস্ময়কর উন্নতি করেছে। এসময় তিনি তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে চারটি পরামর্শ দেন।
কৈলাশ সত্যার্থী বলেন, চারটি অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করি তোমাদের সঙ্গে। প্রথম কথা, স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে চেষ্টা করো। এজন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে এবং হাল ছাড়া যাবে না। এরপর, যত ঝড় ঝাপ্টাই আসুক, কখনো আশা হারাবে না। তৃতীয়ত, বৈচিত্রকে গ্রহণ করো। পৃথিবীতে বৈচিত্র আছে বলেই পৃথিবী এত সুন্দর। সবশেষে বলি, মানুষের জন্য কিছু না কিছু করো। পৃথিবীতে এখনো অন্তত ১৬০ মিলিয়ন শিশু শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে। চেষ্টা করো, তাদের শিক্ষার দায়িত্ব নেওয়ার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান বলেন, সফট স্কিল ছাড়া বর্তমান বিশ্বে টিকে থাকা সম্ভব নয়। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় তোমাদেরকে শুধু সার্টিফিকেটই দেয়নি, বরং বিভিন্ন ধরনের সফট স্কিল সম্পর্কেও শিক্ষা দিয়েছে। আর্ট অব লিভিংয়ের মাধ্যমে তোমদেরকে মূল্যবোধ, ন্যায়নীতি ও আদর্শ শিক্ষা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আশা করে, তোমরা এসব শিক্ষা কাজে লাগিয়ে দেশ ও জাতির সেবা করবে।
ড. মো. সবুর খান আরও বলেন, সারা পৃথিবীতে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার অ্যালামনাই রয়েছে। তোমরা তাদের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে। তোমাদের মাধ্যমেই বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ।