এগিয়ে থাকা ডালিয়া
- সজীব হোসাইন
সদা হাস্যোজ্জ্বল আর বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার মেয়েটিকে ক্যাম্পাসে সবাই চেনে এক নামে। সব কিছুইতেই যেন তাঁর সরব উপস্থিতি। সেটা পড়াশোনা, বন্ধু আড্ডা বা স্বেচ্ছাসেবায়। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ক্লাব ছাড়াও যুক্ত আছেন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী একাধিক সংগঠনে। বলছিলাম বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ডালিয়া নওশীনের কথা। ‘সবাই দিনদিন নিজেকে স্বেচ্ছাসেবা থেকে সরিয়ে নিলেও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে কাজ করতে আমার দারুণ ভালো লাগে।’ বলেন ডালিয়া।
এছাড়াও তিনি যুক্ত আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিভিন্ন সংগঠনে। বর্তমানে কোন কোন সংগঠনের সাথে কাজ করছেন জানতে চাইলে মৃদু হেসে বললেন, যেহেতু বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে তাই প্রথমত দুর্যোগ এবং মানব কল্যাণ্যের কথাটাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। ফলে প্রথমবর্ষ থেকেই যুক্ত হই রেড ক্রিসেন্ট সোসায়ইটি মতো বেশ কয়েকটি মানবকল্যাণমূলক সংগঠনের সঙ্গে। ডালিয়া জানান, রেড ক্রিসেণ্ট সোসায়ইটি থেকে ইতোমধ্যে সম্পন্ন করছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিং।যা আমেরিকান রেড ক্রস এবং এন সেট নেপালের যৌথ উদ্যোগ বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট এর কিছু সৌভাগ্যবান সদস্যদের দেয়া হয়েছিল। আর এভাবেই শুরু হয় বিভিন্ন সংগঠনের সাথে পথ চলা।
বর্তমানে একটি জাতীয় দৈনিকের পাঠক সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ডালিয়া। এছাড়াও যুক্ত আছেন রক্ত দাতাদের সংগঠন বাঁধনের সাথেও । ‘এ পর্যন্ত ছয়বার রক্ত দিয়েছি।’ সামনে আরো দেয়ার ইচ্ছে আছে বলেও জানান ডালিয়া। ‘আসলে আমি মনে করি সেবাই মানুষের পরম ধর্ম হওয়া উচিত। নিজের কাজ গুলোর প্রাধান্য অবশ্যই সবকিছুর উপরে। তবে মানুষের উপকারে যদি না আসতে পারি। তাহলে সে জীবন কখনোই স্বার্থক বলে মনে করি না।’ বলছিলেন তিনি।
‘স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইউনাইটেড নেশনস ইয়ুথ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বেরোবি’র প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এবং গ্রিন সিটি রংপুরের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে কাজ করছি। এছাড়া ভলেন্টিয়ার ফর বাংলাদেশের রংপুরের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১৪ সালে। পথশিশুদের সহযোগিতামূলক কাজ গুলো আমার অসাধারন লাগে তাই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্পৃহা সাথেও কাজ করছি দীর্ঘদিন।’ ডালিয়া জানান, এসব সংগঠনে কাজ করার প্রধান কারণ পথশিশুদের মুখে একটু হাসি ফোটানোর চেষ্টা।
এছাড়াও বাংলাদেশ ইয়ুথ ইনভাইরনমেন্টাল ইনিসিয়েটিভের বর্তমান রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর হিসেবেও কাজ করছেন। বর্তমানে কিছু গবেষণা মুলক কাজের সাথেও যুক্ত আছেন বলেও জানান।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আশা করি দেশের জন্য ভালো কোনো বার্তা নিয়ে আসতে পারবো চিকিৎসা খাতে। তবে এটা অবশ্যই আমার একার দ্বারা সম্ভব নয়। সারা বাংলাদেশে আমিসহ কয়েকজন এর পিছনে কাজ করছি।’
ডালিয়া বর্তমানে ‘পরিবর্তন চাই’ নামের সংগঠনটির রংপুর রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সমাজ ও মানবকল্যাণমূলক কাজের প্রতি রয়েছে আলাদা রকমের ভালো লাগা।
শীতার্তদের শীত বস্ত্র , পথশিশুদের নতুন জামা, শীতের কাপড় অথবা পথশিশুদের মুখে হাসি ফোটাবার চেষ্টা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান কিংবা আর্থ অলেম্পিয়াড-সবকিছুতেই যেন সমানভাবে পদচারণ রয়েছে তার।
তার ব্যক্তিগত সার্টিফেটের সংখ্যাও বয়সের তুলনায় কম নয়। বিভিন্ন দেশী-বিদেশী লিডারশিপ ট্রেনিং বা ক্যাম্পও অংশ নিয়েছেন তিনি। জানালেন, একটি ক্যাম্পে যোগ দিতে শ্রীলংকাতে যাওয়ার কথা ছিল গত মাসে কিন্তু বিভাগে পরীক্ষার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
ডালিয়া জানান, তার বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত হওয়াতে প্রবল আগ্রহ রয়েছে। আর এ ব্যাপারে পরিবার থেকেও রয়েছে অবাধ স্বাধীনতা।
সৈয়দপুরে জন্মগ্রহণ করলেও ডালিয়ার শৈশব-কৈশোর কেটেছে রংপুরেই। পড়াশোনায়ও মেধাবী তিনি। রংপুরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক দুটো পরীক্ষাতেই অর্জন করেছেন জিপিএ ৫।
ডালিয়া পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে স্বপ্ন দেখেন সমাজের অধিকারবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার প্রসারে কাজ কাজ করতে। স্বপ্ন দেখেন সামাজিক অসংগতি এবং দারিদ্রতা মুক্ত সোনার বাংলাদেশের। দারিদ্রতা দূরীকরণ নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে, ভবিষ্যতে অনাথ শিশুদের জন্য সম্ভব হলে কিছু করে যাবার ইচ্ছে আছে।