সালমানের স্বপ্ন

সালমানের স্বপ্ন

  • ক্যাম্পাস ডেস্কঃ

সিনিয়র ব্যাচের ভাইয়াদের ইন্টার্নশিপ প্রায় শেষ। কয়েক দিন বাদেই ক্যাম্পাস ছাড়বেন তাঁরা। বিদায়ের সময়ে কীভাবে তাঁদের সঙ্গে একটু মজা করা যায়? ভাবতে ভাবতে একটা মজার পরিকল্পনা এঁটে ফেলেন দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র, সালমান মাহী রুহুল কাওসার। বন্ধু ইশরাক আর তিনি-দুজনেই নিলেন ফকিরের সাজ। কাঁধে বস্তা নিয়ে হাজির হতে শুরু করলেন বড় ভাইদের ঘরে। শোপিস, সুগন্ধি, কলমদানি, সাবান থেকে শুরু করে টয়লেটের টিসুর বাক্স…যার কাছে যা পেলেন, তা-ই ভরলেন বস্তায়। আনন্দ হলো। আবার সিনিয়রদের স্মৃতি হিসেবে জুটল এই ‘জোরপূর্বক আদায়কৃত গিফট’! ছোট ভাইটিকে বড়রাও তো আর খালি হাতে ফেরাতে পারেন না। কলেজ ক্যাম্পাসে সবার কাছেই যে ‘সালমান’ একটা পরিচিত নাম!
ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় প্রথম আলোতে খ্যাতনামা কার্ডিয়াক সার্জন দেবী প্রসাদ শেঠিকে নিয়ে লেখা একটি প্রতিবেদন পড়ে মনে খুব দাগ কেটেছিল সালমানের। সেই থেকেই সার্জন হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু। সেই স্বপ্নের প্রথম ধাপটা পূরণ হয় দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে। তবে ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি সবকিছুতেই ছিল তাঁর সরব উপস্থিতি। মেডিকেলের প্রথম বর্ষ থেকেই জড়িয়ে পড়েন সন্ধানীর সঙ্গে। বাংলাদেশের কোনো মানুষ যেন রক্তের অভাবে মারা না যায়, সেই লক্ষ্য নিয়ে এ সংগঠনটি কাজ করছে। বর্তমানে সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদের উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন সালমান। শুধু স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজেই নয়, যুক্ত রয়েছেন দিনাজপুর মেডিকেলের সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংগঠন ‘ঐকতান’ এর সঙ্গে। তবে সালমান সবচেয়ে বেশি পরিচিত একজন সফল উপস্থাপক হিসেবে। বাকিটা চলুন শুনি সালমানের মুখেই—‘স্কুল-কলেজে আমি ডিবেটিং ক্লাবের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আন্তস্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আমার দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। মেডিকেল কলেজে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গেয়েছি, অভিনয় করেছি, নেচেছিও। তবে স্কুল জীবন থেকেই অনুষ্ঠান উপস্থাপনাটাকে আমি সবচেয়ে উপভোগ করি। নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। কলেজের রজতজয়ন্তী উৎসব, সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশ, সোসাইটি অব পেডিয়াট্রিক সার্জনস, সোসাইটি অব ল্যাপারস্কপিক সার্জনসহ অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠান উপস্থাপনার সুযোগ পেয়েছি।’
সালমানের বেড়ে ওঠা ঢাকায়। স্কুল আর কলেজের পাট চুকিয়েছেন গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল ও ঢাকা সিটি কলেজ থেকে। তাঁর বাবার নাম মো. নুরুল আমিন, মা কামরুনন্নেসা হাসিনা। বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, মা গৃহিণী। সালমান তাঁর সব অর্জনের কৃতিত্ব মা-বাবাকে দিয়ে বলেন, ‘মা-বাবা কখনো কিছু নিয়ে চাপ দেননি। সব সময় বলেছেন, তোমার যেটা ভালো লাগে সেটাই কোরো। কিন্তু যাই করো, চেষ্টা করবে সেরা হওয়ার, আর কাজটা মন থেকে করার।’
মেডিকেলের পড়ার চাপ থেকে একটু মুক্তি মিললেই ঘুরতে বের হন সালমান। তাঁর প্রিয় কাজের মধ্যে আরেকটি গাছ লাগানো। বলছিলেন, ‘ক্যাম্পাসে প্রথম বর্ষে শখ করে কয়েকটা গাছ লাগিয়েছিলাম। অনেকে বলেছিল গাছগুলো হয়তো বাঁচবে না। অথচ আজ এগুলো ফল দিয়ে যাচ্ছে। একদিন এই ক্যাম্পাস ছেড়ে যাব। কিন্তু গাছগুলো রয়ে যাবে।’
সালমান আদর্শ হিসেবে মানেন ডা. দেবী শেঠি, অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত স্যারকে। তাঁর ভাষায়, ‘এই মানুষগুলো কাজের মাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছেন কোটি মানুষের হৃদয়ে। তাঁদের মতো হওয়ারই স্বপ্ন দেখি।

সূত্রঃ প্রথম আলো favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment