গণিতে ভয় অার নয়

গণিতে ভয় অার নয়

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

ছোটবেলা থেকেই গণিতের প্রতি ভালোবাসা ফজলে রাব্বির। ক্লাসের অন্য বইগুলোর চেয়ে কেন জানি গণিত বইটিই তাঁকে বেশি টানত। ফলে অবসর কাটত কোনো অঙ্ক কষে। আস্তে আস্তে এই ভালোবাসাটি আরো বেড়ে গেল। গণিত অলিম্পিয়াডেও অংশ নিতে শুরু করলেন। ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাতটি গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছেন তিনি। সেখানেও ভালো করেছেন। এই টান থেকেই খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন তিনি। তিনি পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র।

ক্যাম্পাসে আসার পর পুরনো গণিতপ্রেম তাঁর আরো বেড়ে গেল। তবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, গণিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান বিষয় হলেও এখানে কোনো ক্লাব নেই, যেখানে আগ্রহীরা গণিতের চর্চা করতে পারেন; এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হতে পারে। সেই থেকে একটি ক্লাব গড়ে তোলার বাসনা হলো তাঁর। পাশে পেলেন তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের অতনু মুখার্জিকে। তিনি তাঁর বন্ধু, তাঁরই মতো গণিতের পোকা। প্রথমে বিভাগের বন্ধুদের জানালেন তাঁরা। সাড়া তেমন একটা পেলেন না। তার পরও হাল ছাড়লেন না দুজন। এরপর জানতে পারলেন, ২০১০ সালে যন্ত্র কৌশলের পলক আর তড়িৎ প্রকৌশলের ফরহাদ ভাইয়েরা মিলে একটি ম্যাথ ক্লাব করেছিলেন। তবে সেটি তেমন কোনো কাজ করতে পারেনি। সেই ক্লাবটিকেই নতুন করে গড়ে তোলার কাজে নামলেন দুজন।

সেখানে যোগ দিলেন ১৩ ব্যাচের ফৌজিয়া তুষি, নূর, আসাদসহ আট সদস্য। সবার মধ্যেই খুব উৎসাহ। আর ইলেকট্রনিক অ্যান্ড কমিউনিকেশনের লুবনা আপু ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাহির ভাই যোগ দেওয়ার পর তাঁদের শক্তিটা আরো বেড়ে গেল। তাঁরা দুজনই ‘বিজ্ঞানচর্চা কেন্দ্র’ নামে একটি ক্লাব করতেন। ফলে কিভাবে একটি ইভেন্টের আয়োজন করতে হয়, কিভাবে শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় বরাদ্দটি নিয়ে আসতে হয় তাঁদের জানা আছে। সেটিই ঘটল পরে। ২০১৩ সালে কুয়েট ম্যাথ ক্লাব শুরুর পর ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের দপ্তর থেকে নানা ধরনের সহযোগিতা পেয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া গণিত বিভাগের আরিফুজ্জামান স্যার ও ভিসি মোহাম্মদ আলমগীরের বিভিন্ন সহযোগিতা পেয়েছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে বলতে গিয়ে রাব্বি বললেন, ‘আরিফ স্যার বন্ধুর মতো আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আর ভিসি স্যার তো গণিতে ফেল করা ছেলেমেয়েদের জন্য আলাদা করে ক্লাসের ব্যবস্থাই করে দিয়েছেন।’ এরপর তিনি বললেন, ‘এই ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার পুরোটা গণিতনির্ভর হলেও এখানকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে অন্য যেকোনো বিষয়ের চেয়ে গণিতে ভয় সবচেয়ে বেশি এবং গণিতেই তারা সবচেয়ে বেশি ফেল করে।’

আর এই ভয় কাটাতে ও গণিতে দক্ষ করে তোলার জন্য কাজ করে চলেছে ক্লাবটি। নিয়মিত গণিত আড্ডার আয়োজন করা হয়, প্রতি সপ্তাহে গণিত কুইজ হয়। কুইজের প্রশ্নগুলো ছেলেদের ছয়টি ও মেয়েদের একটি হলের নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়া হয়। সবার আগে যে সবচেয়ে বেশি প্রশ্নের সঠিক ক্লাবের ফেসবুক পেজে জানিয়ে দেন, তিনিই বিজয়ী হন। তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় ‘জিরো টু ইনফিনিটি’ নামের ম্যাগাজিন।

এই কাজের ফলে এখন যেকোনো হলের নোটিশ বোর্ডের সামনে গেলে দেখা যায়, কোনো না কোনো আগ্রহী ছাত্র বা ছাত্রী মনোযোগ দিয়ে কোনো কুইজের সমাধান করছেন। তাঁদেরই একজন পুরকৌশল ১৩ ব্যাচের নিশাত আনজুম বলেন, ‘হঠাৎ একদিন রোকেয়া হলের ভেতরে যাওয়ার সময় নোটিশ বোর্ডে গণিত কুইজের নোটিশ চোখে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং সমাধান করে ফেললাম। পরে সেগুলো ফেসবুকে পোস্ট করার পর ম্যাগাজিন পুরস্কার পেলাম। পরেরবার আবারও অংশ নিয়েছি আমি।’ এসব আয়োজনের বাইরে ম্যাথ ক্লাব আরো অনেকগুলো আয়োজন করেছে। সর্বশেষ ২১ মে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা ‘ম্যাথ ট্রেজার হান্ট’ বা ‘গাণিতিক গুপ্তধন আবিষ্কার’ প্রতিযোগিতা করেছেন। এখানে গাণিতিক সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে গুপ্তধন খুঁজে বের করেছেন প্রতিযোগীরা।

১১ জন নিয়মিত সদস্যের এই ক্লাব প্রতি শুক্রবার সাপ্তাহিক মিটিং করে। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তড়িৎ কৌশল বিভাগের সেমিনার রুমটি তাঁদের জন্য খুলে দেয়। এই ক্লাবের সভাপতি অতনু, সাধারণ সম্পাদক রাব্বি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফৌজিয়া, কোষাধ্যক্ষ লুবনা, উপদেষ্টা মাহির। বাকিরা সবাই নির্বাহী পরিষদ সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। এখন তাঁরা গাণিতিক সমস্যা ও সেগুলোর সমাধান নিয়ে ভিডিও টিউটরিয়াল তৈরি করছেন। এরপর সেগুলো ইউটিউবে আপলোড করা হবে। পরে অন্য ধরনের আরো আয়োজন ও প্রতিযোগিতা করবেন বলে জানালেন সাধারণ সম্পাদক রাব্বি।

সূত্র: কালের কণ্ঠfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment