অনুপ্রেরণার দুই নাম

অনুপ্রেরণার দুই নাম

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্রী রায়হা ও  ফাইজা নৌশিন রহমানের অনুপ্রেরণা তাঁর মা বি এম মাকসুদা আকতার। বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সংসার, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা সামলেছেন সমানতালে। পড়াশোনার সঙ্গে নানা সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম একসঙ্গে চালানোর মন্ত্র ফাইজা পেয়েছেন সেখান থেকেই। মা সব সময়ই বলতেন, ‘শুধু পড়া নিয়ে থাকলে হবে না-সব ক্ষেত্রেই দক্ষ হতে হবে। ক্যাম্পাসে ভর্তির পর তাই নানা ধরনের কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ি।’ বললেন ফাইজা।

শুরুতেই যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবে। এরপর ক্লাবের অনুষ্ঠান আয়োজনে জড়িয়েছিলেন সক্রিয়ভাবে। ‘ক্লাবে কাজ করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছি। কর্মশালা, জব ফেয়ার থেকে নানা রকম অনুষ্ঠান হতো, কত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। নানা ধরনের পরিবেশে মানিয়ে নিতে হয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের অন্য বিভাগের বন্ধুও পেয়েছি। এখানে কাজ করার অভিজ্ঞতা চাকরিজীবনেও সাহায্য করবে।’ বললেন ফাইজা। ক্যারিয়ার ক্লাবের সভাপতির গুরুদায়িত্বও এখন তাঁর কাঁধে।

ক্যারিয়ার ক্লাবে কাজ করা ছাড়াও দেশ-বিদেশে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, তরুণ উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতায়ও সাফল্য পেয়েছেন ফাইজা। যার মধ্যে আছে ২০১২ সালে ইউনূস সেন্টার আয়োজিত সোশ্যাল বিজনেস অ্যাওয়ার্ড প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, ২০১৩ সালে বিল্ড বেটার বাংলাদেশ আয়োজিত ‘আওয়ার’ প্রতিযোগিতায় সেকেন্ড রানার্সআপ ও ২০১৪ সালে ইউনিলিভার আয়োজিত ফিউচার লিডার এবং রবি আয়োজিত ক্যাম্পাস এনভয় প্রোগ্রামের সেকেন্ড রানার্সআপ পুরস্কার।

আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও বৃত্তির মধ্যে আছে-এ বছর ডিউক অব এডিনবার্গ প্রোগ্রামে স্বর্ণপদক, ২০১৪ সালে পিটিএকে প্রাইজ ও ইন্টারন্যাশনাল সাপ্লাই চেইন এডুকেশন অ্যালায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত বাংলাদেশ পর্বে এক হাজার ডলারের বৃত্তি।

ফাইজার মতোই রায়হা নাওয়ালের ক্যাম্পাসজীবনও সাফল্যমণ্ডিত। ছোটবেলা থেকে বিতর্কের প্রতি ঝোঁক ছিল। পড়তেন ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। স্কুল থেকে সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাঁর উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হয় ম্যাপল লিফ কমিউনিটি সার্ভিস ক্লাব। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর ক্লাবের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করতে ঘুরে বেড়িয়েছেন উপকূল থেকে উপকূলে।

এসব কাজে ফাইজার মতো তিনিও পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর মা-বাবার একটাই কথা ছিল, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পড়ার জায়গা না। ক্লাস শেষে আড্ডা দেবে, কোনো অনুষ্ঠান থাকলে অংশ নেবে, তারপর বাড়ি ফিরবে।’ বাড়ি থেকে এমন ‘ফ্রি লাইসেন্স’ পাওয়ার পর রায়হাকে আর আটকায় কে?

স্কুলজীবনে পাওয়া বিতর্কের সাফল্য অব্যাহত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়েও। এ বছরের শুরুতে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি ডিবেট চ্যাম্পিয়নশিপে ইংলিশ ইজ সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ ক্যাটাগরিতে রানার্সআপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দলের সদস্য রায়হা। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়ায় ইউনাইটেড এশিয়ান ডেবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন, ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল সোশ্যাল অ্যান্টারপ্রেনারশিপ প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে উঠেছিলেন রায়হা। দেশে পাওয়া সাফল্যের মধ্যে আছে ২০১২ সালে ‘প্লেমেকার্স’ নামে বিজনেস কেস প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং ডিবেটিং কমপিটিশনে ২০১২ ও ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন, ২০১৩ সালে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হওয়া। বিতর্ক ছাড়াও রায়হা কাজ করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কমিউনিটি অ্যাকশন’ ও ‘ওয়ান ডিগ্রি ইনিশিয়েটিভ’-এর সঙ্গে। এখন দায়িত্ব পালন করছেন মার্কেটিং ডিবেট ক্লাবের সহসভাপতি ও টেলিকম সংস্থা এয়ারটেলের ইয়ং লিডার হিসেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সঙ্গে এসব সহশিক্ষা কার্যক্রমের জন্য ‘ইনস্পায়ারিং উইমেন অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন ফাইজা ও রায়হা। যে পুরস্কারকে দুজনই দেখছেন নিজেদের সেরা অর্জন হিসেবে। ‘এটা আমার কাজের স্বীকৃতি। ক্লাস, পরীক্ষার চাপ সামলে এসব করতে খুব কষ্ট হয়েছে। পরিবার থেকে শিক্ষক-সবারই অনেক সাহায্য পেয়েছি। সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’ রায়হা যোগ করলেন, ‘অনেক মেয়েই পরিবারের বাধার কারণে অনেক কিছু করতে পারে না। অনেক মা-বাবা মনে করেন, এতে হয়তো পড়ার ক্ষতি হবে। আমাদের কাজ তাঁদের জন্য বড় অনুপ্রেরণা হতে পারে। এখন সব ক্যাম্পাসেই ছাত্রছাত্রীদের প্রচুর সংগঠন। দেশ-বিদেশে নানা বিষয়ে প্রতিযোগিতা হয়। আমি নিশ্চিত, এসব কার্যক্রমে জড়ালে ছাত্রছাত্রীদের সামনে নতুন এক দিগন্ত খুলে যাবে। এ অভিজ্ঞতা চাকরিজীবনেও তাঁদের অন্যদের চেয়ে এগিয়ে দেবে।’

সূত্র : কালের কণ্ঠ favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment