খুদে উদ্ভাবকদের মিলনমেলা

খুদে উদ্ভাবকদের মিলনমেলা

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

রাজধানীর ইউনাইটেড ইউনিভার্সিটিতে গত শুক্র ও শনিবার অনুষ্ঠিত হয় ৩৬ ঘণ্টার ‘স্পেস অ্যাপস নেক্সট জেন চ্যালেঞ্জ হ্যাকাথন’ শীর্ষক প্রতিযোগিতা। ইনোভেশন ফোরাম আয়োজিত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় খুদে উদ্ভাবকদের চারটি দল। তাদের মধ্যে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের খুদে উদ্ভাবকরা ‘সার্চ বোট’, উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের ফ্লোটিং সিটি, রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ‘অক্সোমাস্ক’ এবং ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলের ইকো ফ্রেন্ডলি সোর্স অব ইলেকট্রিসিটি এনার্জি প্রকল্প বিজয়ী হয়।

সার্চ বোট: আমান্তু খান, ফারহান তানভীর, রাহাত রেদোয়ান ও মুস্তাভি ইবনে মাসুম_ মহাকাশে প্রাণীর অস্তিত্ব শনাক্তে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির এই চার সহপাঠী উদ্ভাবন করেছে ‘সার্চ বোট’। তাদের এই বোটটি চলমান প্রাণী, এমনকি ইউএফওকেও অনুসরণ করতে পারে বলে জানাল দলনেতা আমান্তু। শব্দের ১০ গুণ বেগে চলতে পারে সার্চ বোট। যন্ত্রটিতে ব্যবহার করা হয়েছে এটি মেগা ৩২৮পি মাইক্রোকন্ট্রোলার। আমান্তু জানায়, আপাতত ব্লু-টুথ সংযোগ ব্যবহার করা হলেও নাসার সহায়তা পেলে এই প্রোটটাইপে তারা স্যাটেলাইট বা লং রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করবে। স্কুলে যাতায়াতের টাকা আর টিফিনের পয়সা দিয়ে তারা এই প্রোটটাইপের সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছে পাটুয়াটুলী থেকে।

ভাসমান নগর: বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা, সেইসঙ্গে সমুদ্রের উচ্চতা। এর ফলে হাতছানি দিচ্ছে পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা। তাই আগেভাগেই বসবাসের নিরাপদ আবাস হবে ভাসমান নগর। নদীর ওপর নির্দিষ্ট উচ্চতায় পিলারের মাধ্যমে তৈরি হবে ফ্লোটিং সিটি। এ নগরের পরিকল্পনা করেছে আমাদের উত্তর প্রজন্ম। আর এই স্বপ্নবাজরা হলো উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া তাবাস্সুম চৌধুরী, সাইয়্যেদ চৌধুরী জিসান ও হাসিবুল হক।

অক্সোমাস্ক: একদিন পানিতে পড়ে যায় সাঁতার না জানা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম। এরপরই তার মাথায় প্রশ্ন আসে, পানিতে অক্সিজেন থাকার পরও কেন পানিতে পড়ে গিয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হবে। এ সমস্যার সমাধান করতে তার সঙ্গী হয় সহপাঠী নিয়ামুল ইসলাম শিমুল, ইনাম রহমান মিম ও মিনহাজুল ইসলাম। উদ্ভাবন করে বিশেষ ধরনের মাস্ক অক্সোমাস্ক। এটি পরে ডুবুরিদের পানির নিচে ডাইভ করার সময় পিঠে ঢাউস আকারের সিলিন্ডার বহন করতে হবে না। ব্যাটারি ও রাসায়নিক সাহায্য ছাড়াই ব্যপন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন তৈরি করে তা মাস্কের মাধ্যমে সরবরাহ করে। এ জন্য তারা মাত্র ২০০ মিলি ট্যাঙ্কে ৪ শতাংশ নাইট্রোজেন ব্যবহার করে আর্টিফিশিয়াল গিল্সের মাধ্যমে অক্সিজেন উৎপাদন করেছে, যা দিয়ে পানির নিচে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারবেন ডুবুরিরা।

রাস্তায় তৈরি হবে বিদ্যুৎ: রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে যখন উত্তপ্ত রাজপথ, তখন স্পেস অ্যাপস নেক্সট জেন হ্যাকাথনে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুতের অভিনব উৎসের সন্ধান দিয়েছে ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলের দুই সহপাঠী আরাফাত জামিল ও তানভীর হাসান। তারা মহাসড়কের গতিনিরোধক, উঁচু-নিচু স্থান এবং সেতু সংযোগে ‘পায়াজো বাজার’ নামে বিশেষ ডিভাইস বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং তা সরবরাহের দারুণ একটি কৌশল বাতলে দিয়েছে। এ প্রযুক্তিতে গাড়ির চাপ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা পাশেই সংরক্ষণ করে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে চায় এই খুদে উদ্ভাবকরা।

বিজয়ীদের প্রকল্প বাস্তবায়নে আয়োজক বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আরিফুল হাসান অপু জানিয়েছেন, এরই মধ্যে আমরা বিজয়ী প্রকল্পগুলো নাসার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য পাঠিয়েছি। বিজয়ীদের স্কুলগুলোতে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে উচ্চমানের একটি করে ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিজয়ীদের চার লাখ টাকা করে পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এটা এখন কীভাবে তাদের উদ্ভাবনায় কাজে লাগানো যায়, তা ঠিক করা হচ্ছে।

সূত্র: সমকালfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment