চার তরুণের উড়ন্ত গাড়ি

চার তরুণের উড়ন্ত গাড়ি

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

এমআইএসটির চার ছাত্র বানিয়েছেন একটি উড়ন্ত কার। এটি দুর্গত স্থানে গিয়ে সাহায্য পৌঁছে দিতে পারবে। সেই কারের গল্প বলেছেন সেটির অন্যতম নির্মাতা মনজুর রহমান।


এর আগেও আমরা বেশ কয়েকটি প্রজেক্ট তৈরি করেছি। তবে সেগুলোর সবই নিজেদের আগ্রহে করা। যখন জানলাম, সিলেবাসের অংশ হিসেবে একটি প্রজেক্ট তৈরি করতে হবে, নড়েচড়ে বসলাম। যন্ত্রকৌশলের ছাত্র হিসেবে অটোমোবাইল নিয়েই আমাদের বেশি কাজ করতে হয়েছে। ফলে অন্য রকম কিছু বানাতে চাইছিলাম। বন্ধু ও সহপাঠী নাভিদ মোহাম্মদ সিয়ামের সঙ্গে ভাবনাটি পাড়তেই সে বলল, ‘চলো মাটি নয়, আকাশের কিছু একটি বানাই। ’ কথাটি মনে ধরল বেশ। গাড়ির প্রতি নেশা থেকে ভাবলাম, এমন কিছু বানাতে হবে, যেটি আকাশ-মাটি দুটিতেই চলে। সেই থেকে ফ্লাইং কারের শুরু। আমাদের দেশে আকাশে চলবে এমন একটি কার বানানো খুবই কঠিন। ফলে আমরা ভাবলাম, একটি মডেল বানিয়ে ফেলি। যদি সেটি সত্যি করতে পারি, তাহলে হয়তো একদিন আসল উড়ন্ত কারই বানিয়ে ফেলব। তবে এই কারের যন্ত্রপাতির জোগাড়যন্ত্রও খুব সহজ ছিল না। অন্তত ১৮ থেকে ২০ বার পাটুয়াটুলি, ধোলাইখাল, বংশাল আর মিরপুর-২ এর পুরনো যন্ত্রপাতির দোকানগুলোয় ঘুরতে হয়েছে। নিজেরা তো সেগুলো নিয়ে এসে কাজ করেছি, আমাদের ‘প্রজেক্ট’ কোর্সের কো-অর্ডিনেটর ও যন্ত্রকৌশলের সহকারী অধ্যাপক লে. কর্নেল শরীফ স্যারও অনেক সাহায্য করেছেন। যখনই মনে হয়েছে দূর আর কিছু হবে না, বাদ দিই, স্যার সাহস দিয়েছেন—‘না, তোমরা পারবে। ’ ও, আমাদের অন্য দুই সদস্যের নামই তো বলা হলো না। একজন হলো—শাহরিয়ার শাহ, অন্যজন নূর মোহাম্মদ। আমরা সবাই একসঙ্গে পড়ি। আমরা এমআইএসটির (মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি) চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।

চার তরুণের উড়ন্ত গাড়ি
চার তরুণের উড়ন্ত গাড়ি

এই কারের নাম দিয়েছি ‘মটোমিস্ট ফ্লাইং কার’। এটি বানাতে আমাদের তিনটি মাস টানা খাটতে হয়েছে। তবে সেই পরিশ্রমের ফসলও আমরা পেয়েছি। এমআইএসটির একমাত্র অটোমোবাইল কার আমাদের বানানো—এ কথাটি বলতে গিয়ে এখন গর্বে বুক ফুলে ওঠে। পরিকল্পনা কী ছিল, এবার সেটি বলি। আমরা চেয়েছি এমন একটি কার বানাব, যেটি এই যানজটের শহরে দ্রুত চলতে পারবে। এটি যেন দামে সস্তা হয়, সে জন্য উদ্ধারকারী জাহাজের কিছু যন্ত্রপাতি এতে যুক্ত করতে হয়েছে। ফলে আমাদের কার কোথাও আগুন লাগলে বা ভূমিকম্প হলে উড়ে গিয়ে সেখানকার প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে আসতে পারবে। সে জন্য এখানে আছে একাই অপারেট করতে পারে এমন একটি ক্যামেরা, জিপিএন, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সেন্সর। তবে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছি বলে এটি আগুন সহ্য করতে পারবে না। কিন্তু অনেকটা দূর থেকে সে প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে আসতে পারবে। কোথাও কোনো ভবন ধসে পড়লেও সেটি উড়ে গিয়ে সেখানে ঢুকে পড়তে পারবে।

মজার ব্যাপার হলো, আড়াই থেকে তিন কেজি ওজনের এই কারের চারটি চাকা আছে। ফলে মাটিতে চলবে, আবার পাখা আছে বলে আকাশেও উড়বে। আকাশে ওড়ার সময় একে আরসি রিমোটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। আর মাটিতে নিয়ন্ত্রিত হবে অ্যানড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে। এ ছাড়া এই কার তিন কেজি পর্যন্ত ওষুধ বা খাবার দুর্গত স্থানে পৌঁছে দিতে পারবে।

টাকা থাকলে বা পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরা আরো ভালো কিছু করতে পারতাম। পাখাগুলো ভাঁজ করা যায় না বলে এটি বেশি জায়গা দখল করে। অথচ টাকা থাকলে পাখাগুলো ভাঁজ করার ব্যবস্থা করতে পারতাম। তবে সে জন্য বিদেশের প্রযুক্তি লাগবে। তার পরও যা বানিয়েছি তাতেই সন্তুষ্ট সবাই। এই উড়ন্ত কার বানাতে আমাদের ২৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। একটি পূর্ণাঙ্গ উদ্ধারকারী কার বানাতে হাজার পঞ্চাশেক টাকা খরচ হতে পারে। সেটি কেউ চাইলে বানিয়ে দেব। দুই ফিট বাই দেড় ফিটের এই কার এখন আছে এমআইএসটির গবেষণাগারে।favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment