আইআইটিতে বাংলাদেশ বিস্ময়

আইআইটিতে বাংলাদেশ বিস্ময়

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

গত ২৬ মার্চ, বাংলাদেশ সময় বেলা একটা। ভারতের আইআইটি কানপুরে তখন চলছিল ‘টেককৃতি ২০১৭’-এর পুরস্কার বিতরণী পর্ব। তিন দিন ধরে চলেছে এই আয়োজন। আইআইটি ক্যাম্পাসের ভেতরের বিশাল মাঠ, আয়োজকেরা যাকে বলছিলেন ‘ফেস্টিভ্যাল গ্রাউন্ড’, সেখানেই প্রায় ১২টি দেশের হাজারখানেক শিক্ষার্থী এক হয়েছিলেন। বাংলাদেশ থেকেও ছিল বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া গোটা দশেক দল। স্বাধীনতা দিবসের এই দিনে হতাশ করেনি বাংলাদেশের দলগুলো। চারটি দল, পাঁচটি ভিন্ন প্রতিযোগিতায় মোট ছয়টি পুরস্কার নিয়ে তবেই ফিরেছে।

এই দল চারটি হলো নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যৌথ দল ‘টিম স্পার্ক’, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দল ‘মাস্টারমাইন্ড’, নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘জিরো ইরর’ ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির দল ‘বিআরসি ব্রাভো’। এর মধ্যে ‘টিম স্পার্ক’ একাই জিতেছে মোট তিনটি পুরস্কার। আর বাকি তিনটি দল একটি করে।

কথা হচ্ছিল ‘টিম স্পার্ক’ দলের সদস্য ফাতিন হাসনাত চৌধুরীর সঙ্গে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতক শেষ করা ফাতিনের দলের অন্য সদস্যরা হলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তাকি উদ্দীন ও সিফাত রেজওয়ান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর দাস ও সাদ আহমেদ আকাশ। প্রতিযোগিতার আদ্যোপান্ত জানালেন ফাতিন—‘আমরা মোট তিনটি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পাই। “ইন্টারন্যাশনাল রোবটস গট ট্যালেন্ট” (আইআরজিটি) নামক প্রতিযোগিতায় অনেক দেশ থেকে রোবট আসে। যার রোবট যত অভিনব, তার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। এখানে আমরা দ্বিতীয় হয়েছি।’ তাকি জানালেন, ‘এবারের আসরের অন্যতম আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতা ছিল “এলিভেটর পিচ”। উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের ব্যবসায়িক আইডিয়া জানিয়ে এক মিনিটের একটা বক্তব্য দিতে হয়েছিল। সেখানে আমাদের আইডিয়াই হলো প্রথম! আরেকটি প্রতিযোগিতা ছিল অটোমেশন-বিষয়ক প্রতিযোগিতা “এমবেডেড”। সেখানে আমরা ১০০-তে ১০০ পেয়ে প্রথম হই।’

তবে তিন-তিনটি পুরস্কার পাওয়ার থেকেও বড় অন্য আরেকটি অর্জনের কথা শোনালেন ফাতিন। যে পুরস্কারে তাঁরা নিজেরাই চমকে গেছেন। ফাতিনের মুখেই শোনা যাক—‘পিচ এলিভেটর প্রতিযোগিতায় আমাদের প্রেজেন্টেশন শেষ হওয়ার পর জানতে পারলাম, বাংলাদেশ থেকে যে ছেলেগুলো প্রেজেন্টেশন দিয়েছে, জুরিবোর্ড তাদের খুঁজছে। দলের হয়ে আমি ভয়ে ভয়ে সামনে গেলাম। ভাবছিলাম, ভুলটুল কিছু বলে ফেলিনি তো! ভুল ভাঙল যখন জুরিবোর্ডের একজন বিচারক হেসে হেসে আমাকে বললেন, “তোমার আইডিয়া খুবই ভালো লেগেছে। যদি তোমার দেশে এটা নিয়ে কাজ করার সুযোগ কম থাকে, তবে তুমি আমার কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতে পারো।” শুধু তা-ই নয়, তিনি তাঁর ভিজিটিং কার্ড দিয়ে পরে যোগাযোগ করতেও বললেন।’

এ তো গেল প্রতিযোগিতার সময়ের ঘটনা। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছিল কীভাবে? জানতে চাইলে সিফাত রেজওয়ান বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইসাব) একটা আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বাংলাদেশে। এই পর্বে টিকলে ভারতের আইআইটি কানপুরে যাওয়ার সুযোগ পায় দলগুলো। এবারের আসরে বাংলাদেশ থেকে মোট ১০টি দল মূল পর্বে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়।’

বাকি পুরস্কারগুলোর মধ্যে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ‘মাস্টারমাইন্ড’ দলটি আইআরজিটি রাউন্ডে তৃতীয় স্থান অর্জন করে। এই দলের সদস্যরা হলেন নাজিব আহমেদ, অমিত ঘোষ, মীর রাসেল ও জুনায়েদ জাহিন। ওদিকে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির দল ‘বিআরসি ব্রাভো’ ইন্টারন্যাশনাল অটোনমাস রোবটিকস চ্যালেঞ্জ (আইএআরসি) রাউন্ডে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। দলে ছিলেন সালসেং মরং, রাকিব রায়হান, শাহাদাত হোসেন, মহসিন সরকার ও আরিফুল ইসলাম। নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ‘জিরো ইরর’ চ্যাম্পিয়ন হয় ‘টেকনিক্যাল ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ’ (টিআইসি) শীর্ষক প্রতিযোগিতাটিতে। পল্লব জেইন, মাজহারুল ইসলাম ও ইমরান হোসেন ছিলেন এই দলের সদস্য।

‘টেকনোলজির’ সঙ্গে সংস্কৃতির মিশেলে এই প্রতিযোগিতার নাম টেককৃতি। প্রতিবছরই আইআইটির কানপুর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বিশাল এই মহাযজ্ঞের আয়োজন করে থাকে। এবারের আসরে প্রতিযোগিতা ছাড়াও ১৬টি কর্মশালা এবং বিশ্বের ১০ জন নামকরা বিজ্ঞানীর সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল।

সূত্র: প্রথম আলোfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment