‘গোল্ডেন বয়’ আল আমিন

‘গোল্ডেন বয়’ আল আমিন

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

খুপরি ঘরের জীবনে তিন বেলা ভরপেট আহার জোটে না। দিনমজুর পরিবারে প্রায় রাতেই কেরোসিনের অভাবে কুপিবাতি জ্বলে না। তাই রাতে লেখাপড়ার সুযোগটুকু মেলে না। দিনমজুর পরিবারের সন্তান আল আমিন তাতে দমে যায়নি। অদম্য ইচ্ছার জোরে সে লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ ৫ অর্জনের পর মেধাবী আল আমিনের এলাকায় পরিচিতি মেলে ‘গোল্ডেন বয়’ নামে। এবার পিরোজপুরের কাউখালী সরকারি কেজি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ অর্জন করেছে।

পিরোজপুরের কাউখালী সয়না রঘুনাথপুর ইউনিয়নের হোগলা বেতকা গ্রামের দিনমজুর দম্পতি ইমাম হোসেন ও শাহীনুর বেগমের আঁধার ঘরে আজ সুখের আলো আল আমিন। সন্তানের এমন সাফল্যে দরিদ্র মা-বাবার পাশাপাশি পাড়া-প্রতিবেশীরা খুব খুশি। আল আমিনের গ্রামের বাড়ি উপজেলার বেতকা গ্রামে হলেও তার দরিদ্র পরিবার কাউখালী শহরের দক্ষিণ বন্দর হাসপাতাল এলাকায় একটি খুপরি ঘরে ভাড়া থাকে।

ছেলের সাফল্যে আনন্দে আত্মহারা শাহীনুর বেগম বলেন, ‘পোলারে ঠিকমতো খাওন-পরন দিতে পারি নাই। অনেক দিন না খাইয়া স্কুলে গেছে। হেরপরও পোলায় লেহাপড়া করছে। স্কুল কামাই দেয় নাই। আমার এমন পোলার পরীক্ষার ভালো ফল শুনে মনে আর কোনো দুঃখ নাই। আপনেরা আমার পোলারে দোয়া কইরেন, যাতে ও ভালো একটা কলেজে পড়তে পারে। তয় পোলারে উপর ক্লাসে পড়ানোর কোনো ব্যবস্থা আমাগো নাই। ’

জানা গেছে, আল আমিন ২০১১ সালে কাউখালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছিল। দারিদ্র্যের কারণে সে নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যদের বাসায় গিয়ে ছোটদের প্রাইভেট পড়িয়েছে।

আল আমিন বলে, ‘আমার স্কুলের শিক্ষক, স্থানীয় শিক্ষানুরাগী খসরু চাচা ও পল্টন চাচা প্রাইমারি থেকে এ পর্যন্ত আমাকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। ভবিষ্যতে একজন দক্ষ চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন আমার। সংসারের অভাব দূর করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সেবা করতে চাই। ’

জানা গেছে, আল আমিনের বড় বোন সুমি পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষের বোটানি বিষয়ের ছাত্রী। সেজ ভাই শামিম হোসেন কাউখালী মহাবিদ্যালয়ে বাণিজ্য বিভাগে পড়ছেন। আর তিন সন্তান লেখাপড়ায় খুবই মনোযোগী হওয়ায় তাদের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে দিনমজুর মা ও বাবা উদয়াস্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

ইমাম হোসেন বলেন, ‘অনটনের মধ্যে তিন সন্তানের লেখাপড়া চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। এমন অবস্থায় আল আমিনের ভবিষ্যৎ লেখাপড়া কিভাবে হবে ভেবে পাচ্ছি না। ’

এ বিষয়ে কাউখালী কেজি ইউনিয়ন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাবর তালুকদার বলেন, ‘আল আমিন একজন অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী। শত কষ্টের মধ্যেও এক দিনের জন্যও সে স্কুল ফাঁকি দেয়নি। পড়ালেখায় খুবই মনোযোগী। ওর এমন সাফল্যে আমরা সবাই খুব খুশি। ওর সমৃদ্ধ জীবন কামনা করছি। ’favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment