চাকরি দেয়াই চাকরি

চাকরি দেয়াই চাকরি

  • ক্যারিয়ার ডেস্ক

মাত্র তিন বছরেই পেয়েছেন ব্যাপক পরিচিতি। দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানে চাহিদা সম্পন্ন কর্মী নিয়োগে সহায়তা করে, ট্যালেন্ট হান্টার হিসেবে নিজের স্থান করে নিয়েছেন প্রথম সারিতে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় বিশাল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নির্বাচন করে এফডিবি পৌঁছে গেছে অন্য এক উচ্চতায়। দেশ-বিদেশে কাজের অভিজ্ঞতা ও বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ট্যালেন্ট সার্চ করতে গিয়ে প্রাপ্ত জ্ঞান দিয়ে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কথা বলেছেন এফডিবির প্রধান কর্তা আরিফ ইফতেখার। এ সময় উপস্থিত থেকে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানের অন্য কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা।


: কি উদ্দেশ্যে, কীভাবে এবং কেন শুরু করলেন চাকরি দেয়ার মতো চ্যালেঞ্জিং বিষয়ের সঙ্গে যাত্রা?

আরিফ ইফতেখার : চ্যালেঞ্জ নেয়াটাই আমার পছন্দ। আর তাই যখন দেখলাম আমাদের দেশে ভালো মানের ছেলে-মেয়ে থাকার পরও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে তেমন একটা উঠে আসছে না; তাই এই কাজটির মাধ্যমে যোগ্যদের একটু হলেও এগিয়ে নিতে সাহায্য করা, আর কি!

অন্যদিকে, বড় মানের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার ফলে-যেমন তাদের মানবসম্পদ বাবস্থাপনা গঠন দেখেছি; তেমনি বাংলাদেশে কর্মরত প্রতিটি দেশীয়-আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে সঠিক লোক কীভাবে নির্বাচন করা যায়, সে ভাবনা থেকেই এফডিবি প্রতিষ্ঠা। এছাড়াও আমাদের দেশে দেখা যায় বিভিন্ন কারণে সঠিক লোকটি সঠিক জায়গায় যেতে পারেন না। তাই ওই সব জটিলতা থেকে যোগ্য লোকদের দূরে রাখতে এটা একটা সামাজিক কার্যক্রমও বলতে পারেন।

: আপনার পড়াশোনা ও চাকরির শুরুটা কোথায় এবং কাজের অভিজ্ঞতা-

আরিফ ইফতেখার : আমার পড়াশোনাটা বিদেশে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমি বিবিএ শেষ করেছি। আর ইএমবিএ করেছি নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে। বিদেশেই ১৯৯৫ সালে রথম্যান নামে টোব্যাকো কোম্পানিতে প্রথম কাজ শুরু করি। ১৯৯৭ সালে তারা বাংলাদেশে কাজ শুরু করলে, দেশেই চলি আসি রথম্যানের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে। ১৯৯৯ সালে রথম্যান ও বিএটি একসঙ্গে ব্যবসা শুরু করলে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোতে চলে আসি। এমন করেই টোব্যাকো লাইনে কেটে গেল দুই দশক।

: আপনি দেশের বাইরেও কাজ করেছেন; সেখানকার বনাম আমাদের দেশের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার মধ্যে গুণগত কি তফাৎ দেখতে পান?

আরিফ ইফতেখার : আমি বিদেশের মধ্যে ৪টি দেশে সরাসরি কাজ করেছি। আর ঘুরতে ও প্রশিক্ষণের কাজে ১৮টি দেশে গিয়েছি। আসলে ওদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা অবস্থাতেই জব রিলেটেড কোর্স ও বিশ্ববিদ্যলয় থেকেই প্রাকটিক্যাল নলেজ অর্জনের সুযোগ পায়। যা আমাদের দেশে নেই। আপনি জেনে থাকবেন দেশে অনার্স বা মাস্টার্স শেষ বর্ষে ইন্টার্নশিপ করানো হয়; তাও খুব বেশি সময় হয় না। যাও হয় তা নামমাত্র। যার কারণে আমাদের দেশের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা আর বাইরের দেশের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় আকাশ-পাতাল পার্থক্য। এমনকি আমাদের দেশে প্রশিক্ষণ দেয়া-নেয়াকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হয় না; অথচ বিদেশে প্রশিক্ষণকে অনেক মূল্য দেয়া হয়।

: আপনি তো মাত্র পড়ালেখা শেষ করে চাকরিতে ঢুকেছেন আর এখন বিভিন্ন অফিসের চাহিদা মতো ট্যালেন্ট সার্চে অংশ নিচ্ছেন; একজন এইচ-আর-এর স্টুডেন্ট হিসেবে আপনার ভাবনা-

উম্মে ফাতেমা : আমাদের দেশের পড়ালেখায় আরও পরিবর্তন আনতে হবে। কেননা পড়ালেখাটা হওয়া উচিত প্রাকটিক্যাল ওরিয়েন্টেট। বিশেষ করে অন্ততপক্ষে বিবিএ বা এমবিএতে কর্পোরেট বা অফিস কালচার পড়ানো উচিত। এসব বিষয়ে কোর্স টিচার হিসেবে নামি-দামি মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেটদের নিয়ে আসতে হবে; তখন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা আরও আধুনিক হবে।

: একজন তরুণ কর্মী হিসেবে আপনি কীভাবে আমাদের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনাকে বর্ণনা করবেন?

উম্মে ফাতেমা : এইচআর বিভাগ তার প্রতিটা কর্মীকে প্রতিষ্ঠানের সম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে এমনটাই হওয়া উচত; কিন্তু আমাদের দেশে এখনও অনেকেই এইচআর এবং অ্যাডমিন কাজকে একসঙ্গে করে ফেলে। যার ফলে এইচআর প্রাকটিস পারফেক্টভাবে করা হয় না। অন্যদিকে, এইচআর বিভাগ যদি কেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই বেশি ব্যস্ত থাকে; তবে প্রতিষ্ঠানের কাক্সিক্ষত সফলতা অর্জনে কর্মীরা ব্যর্থ হয়।

: এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য-

আরিফ ইফতেখার : ‘এইচআর ডিপার্টমেন্টের মূল কাজ শুধু নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত থাকা’, এমন চিন্তা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। বিভাগটিকে আরও কর্মীবান্ধব করতে হবে। যেমন- আপনি অনেক লোক নিয়োগ দিলেন কিন্তু দেখা গেল তারা সঠিকভাবে নিজেদের তুলে ধরতে পারছেন না। সে ক্ষেত্রে এসব লোকদের সঠিকভাবে ব্যবহারের দায়িত্ব কিন্তু এইচআরের।

: এফডিবি মানবসম্পদ নিয়োগে একটি প্রতিষ্ঠানের এইচআরকে কীভাবে সহযোগিতা করে?

উম্মে ফাতেমা : আমরা প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মতো এন্ট্রি, মিড, কখনও সিনিয়র এবং হায়ার লেভেলের ট্যালেন্ট হান্ট করে দেই।

: এফডিবি কোন প্রক্রিয়ায় এ কাজটি সম্পন্ন করে?

উম্মে ফাতেমা : মূলত চাকরিদাতা ও প্রত্যাশীদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে কাজ করে থাকে এফডিবি। আমরা যখন একটা সিভি দেখে প্রাথমিক কাজ শুরু করি তখন কিছু জিনিস আমাদের খেয়াল করতে হয়; যেমন- কোনো প্রত্যাশী যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত সে প্রতিষ্ঠানের গ্রোথ, এইচআর বিভাগ কতটা তৎপর এবং তাদের সাম্প্রতিক কাজের ধরনের সঙ্গে প্রস্তাবিত পদের কতটুকু সামঞ্জস্যতা আছে। একসঙ্গে চাকরি জীবনের প্রাপ্ত অর্জনগুলো আমরা বিবেচনায় নেই। আর এসব বিষয় ততটাই পজিটিভ হবে যতটা পজিটিভ হবে তার আগের প্রতিষ্ঠানের এইচআর বিভাগ।

: ‘টোব্যাকো ইন্টাস্ট্রিতে অভিজ্ঞদের মানবসম্পদ তৈরির মেশিন বলা হয়’- তারই প্রমাণ হিসেবে কি আপনি জব ছেড়ে নিজেই প্রতিষ্ঠান দিলেন?

আরিফ ইফতেখার : এরা আসলে একশ’-দেড়শ’ বছরের পুরনো ইন্ডাস্ট্রি। তারা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের অ্যাসেট মনে করে। কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও রিওয়ার্ড দিয়ে সবোর্চ্চ ব্যবহারের চেষ্টা করে।

: দেখা যায়- চাকরির বিজ্ঞাপন মানেই অভিজ্ঞতা প্রয়োজন, তাহলে ফ্রেশ গ্রাজুয়েটদের কী হবে?

উম্মে ফাতেমা : এজন্যই আমরা বলছি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবস্থায় ইন্টার্নশিপ, প্রাকটিক্যাল ওয়ার্ক, বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার কর্মকাণ্ডে নজর দিতে হবে। তাতে প্রত্যেকেই অনার্স বা মাস্টার্স শেষ হওয়া মাত্রই নিজেদের হিউম্যান স্কিল ডেভেলপ করতে পারে। সেই সঙ্গে সিভি, রেসিউমে ও বায়োডাটার পার্থক্য জানতে হবে। একই সঙ্গে মানসম্পন্ন প্রোফাইল করতে হবে।

: নিয়োগের এ কাজটি করতে গেলে আউট সোর্সার হিসেবে ঝামেলা ও চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?

আরিফ ইফতেখার : আমাদের সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্চ হল- পারফেক্ট প্রোফাইল খুঁজে বের করা। কারণ আমাদের দেশে সংখ্যার দিক থেকে অনেক প্রোফাইল পাওয়া যায়, কিন্তু তাদের মধ্য থেকে মানসম্মত প্রোফাইল খুঁজে বের করা একটা চ্যালেঞ্চ। এছাড়াও প্রত্যাশিতদের কাছ থেকে মানসম্মত সিভি পাওয়া যায় না; কেননা বেশিরভাগই নিজেদের একাডেমিক ও চাকরিগত যোগ্যতা-দক্ষতাগুলো উপস্থাপন করে না, অথচ সাম্প্রতিক সময়ে এটা খুবই প্রয়োজন।

: একটা প্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের মূল কাজ বলতে আপনি কী মনে করেন?

আরিফ ইফতেখার : শুরুতেই বলে নেই আমাদের দেশে মানবসম্পদ বিভাগকে শুধু নিয়োগ বিজ্ঞাপন, কর্মী বাছাই আর ভাতা নির্ণয়ের কাজে লাগানো হয়। কিন্তু বিষয়টা মোটেও তা নয়। এইচআর ডিপার্টমেন্টের কাজ হল ‘লিডার তৈরি করা’।

: আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে লিডারশিপ ডেভেলপ করে?

আরিফ ইফতেখার : নিয়োগ দেয়ার পরপরই পারটিকুলার ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠানের অ্যাসেট বা সম্পদ হিসেবে তৈরি করতে ট্রেনিং এবং অন্যান্য বিষয়ে নজর দেন। নেতৃত্বের জ্ঞান অর্জনে বিভিন্নভাবে কর্মীকে নিয়ে গবেষণা করেন এইচআর কর্মীরা।

: একজন এইচআর ম্যানেজারকে সফল হতে হলে যেসব গুণ অর্জন জরুরি-

আরিফ ইফতেখার : অবশ্যই চ্যালেঞ্জ নেয়ার ক্ষমতা। ক্রিকেটে যেমন বিচারক শক্ত হাতে নতুন ক্রিকেটারকে ম্যাচে পরিচয় করিয়ে দেন; এ ক্ষেত্রে দেখা যায় প্লেয়ারটি ভালো করলে ওই প্লেয়ারের নিজস্ব সফলতা; আর ভালো করতে না পারলে ওই ব্যর্থতা কেবল বিচারকের। এইচআর ম্যারেনজারকেও এমন চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। বহুজন থেকে একজন নির্বাচন করার সাহস থাকতে হবে এবং নির্বাচিত সদস্যকে প্রতিষ্ঠানের পরিবেশে বড় করে তোলার দায়িত্ব নেয়ারও মানসিকতাও থাকতে হবে।

সূত্র: যুগান্তরfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment