সময়কে হ্যাঁ বলুন
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলা সহজ কোনো কাজ নয়। চাইলেই সবাই সময়কে নিয়ন্ত্রণ করে চলতে পারে না। তবে একটা বিষয়ে সারা পৃথিবীর সকলেই একমত, সময়কে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে সাফল্য লাভ করা কঠিন। কাজেই সময়কে বাগে আনতে হবে। সময়কে বাগে নিয়ে আসতেই এই লেখায় কিছু পরামর্শ প্রদান করা হলো। এগুলো মেনে চললে সময়কে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে বলে আশা করতেই পারেন। কাজেই মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিন পরামর্শগুলো, প্রস্তুতি নিন এখনই।
১. প্রথমেই ঠিক করে নিন আগামীদিন আপনার কাজের নির্দিষ্ট কোন বিষয়গুলো সম্পন্ন হওয়া সবচেয়ে জরুরী। সেই কাজটিকে পরবর্তী দিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলুন। এছাড়াও সঙ্গী অন্যান্য কাজকেও অবহেলা করলে চলবে না। বরং সময়কে আরো বেশি যত্ন নিয়ে আদর দিয়ে এই কাজগুলোর জন্যও সময় করে নিতে হবে।
২. জীবনের নানা মুহূর্তে অলস সময় ঘুরে ফিরে আসে। দিনের প্রতিটি সময়ে এই অলস সময় আপনার কাছে এসে ধরা দিতে পারে। তাকে প্রশ্রয় দেয়া আপনার কাজ নয়। অর্থাত্ অলস সময়ের দৈর্ঘ্যকে দীর্ঘায়িত করা আর তাকে নিজের আপন সঙ্গী ভেবে নেয়া একই কথা। যারা এ বিষয়টিকে প্রশ্রয় দেন তারাই মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন আজকের কাজ কালকে হলেও করা সম্ভব। কিন্তু কালকের কাজ যে কালকে করা সম্ভব নাও হতে পারে এটি অলস সময় অনেক সময়ই ভাবতে দেয় না।
৩. তারুণ্যের মূল অস্ত্র হওয়া উচিত গতি। নিজেকে বেগবান করে তুলতে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে হবে আপনাকেও। আরেকজন সময়কে ব্যবহার করতে পারলে আপনারও তা করতে পারার ক্ষমতা থাকা উচিত। অনেকেই নিজের অক্ষমতাকে ঢাকতে বারবার সময়কে দোষারোপ করেন। মনে রাখতে হবে সময় শিকারী কুকুরের মতো প্রভূ ভক্ত হয়। তাই তাকে শাসন করাই সাজে সবসময় আদর করা নয়। যে সময় আপনার কথা শুনে না তার যথাযোগ্য নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব আপনারই। নিজের মনোবিশ্লেষণে জেনে নিন সময় কেন শুধু আপনার প্রতিই বেরহম হয়।
৪. এক্ষেত্রে প্রথমেই জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে নেয়া উচিত। বয়সের যে মুহূর্তেই আপনি থাকেন না কেন আপনি ভবিষ্যতে কি হতে চান কিংবা ভবিষ্যতে আপনার অবস্থান কোথায় হবে তা আপনাকেই ভেবে নিতে হবে। নিজের নির্দিষ্ট প্ল্যান থাকলে ভাল, না থাকলে এখনই ঠিক করে নেয়া উচিত। ক্যারিয়ার গ্রাফ চিন্তা করেই জীবন যাপনের ধারা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। এক্ষেত্রে মা-বাবার পরামর্শ গ্রহণ করার পাশাপাশি আপনার যদি বাড়তি কোনো ইচ্ছে থাকে তবে তাও যথার্থ সময়ে সবার সামনে প্রকাশ করতে হবে। যদি ক্রিকেটার বা নৃত্যশিল্পী হতে চান তবে নিয়মিত একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি খেলা বা নাচ এবং নিজের শারীরিক ফিটনেসের উপরও জোর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে ভাবনার পাখিরা ইচ্ছে করলেই ডানা মেলতে পারে। তাই বলে নিজের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। আপনার সক্ষমতা আপনার স্বপ্নকে যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তবে বেশির ভাগ সময়ই স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন কিংবা আক্ষেপের বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। কখনো যদি মনে হয় স্বপ্ন থেকে অনেক দূরে বাস্তবতা তবে মনকে কষ্ট দিয়ে হলেও সেই দূরহ পথ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারলে সময় আপনাকে বাহাবা দিবে।
৫. আপনার জীবনধারায় যেই সময়টাই আসুক না কেন গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানোর কোনো প্রয়োজন নেই। বরং নিজেকে জানার আর নিজের চেষ্টাকে সমর্থন দেয়াই আসল কাজ। আপনি যদি অংকে দূর্বল হন আর আপনার ধ্যানজ্ঞান হয়ে থাকে বড় বিজ্ঞানী হয়ে উঠার তবে জীবনের অংকই অনেকটা উল্টে যাবে। অন্যদিকে সাহিত্যে আপনার চরম দখল। অথচ মনের ভেতর কিংবা অভিভাবকের সিদ্ধান্তে আপনি নিজেকে খুঁজে নেন কমার্সের কোনো বিষয়ে তবে আপনার ভবিষ্যত সময়কে সহায়তা করবে না এতটুকু। চেষ্টা করতে হবে অবারল ফলাফলটা যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। নিজের দূর্বলতা বা শক্তির জায়গা সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়া গেলে সময়কে মানিয়ে নেয়া আপনার হয়ে উঠবে না।
৬. সপ্তাহের শুরুতে কিংবা প্রতিদিন নিজের জন্য একটি প্ল্যান রাখা উচিত। হতে পারে তা ডায়রিতে লিখে কিংবা মোবাইল টুডু লিস্টে তা লিপিবদ্ধ করে। শুধু প্ল্যান নয় চেষ্টা করতে হবে এই লিখে নেয়া জীবন প্রণালীকে যথাসম্ভব ফলো করা। প্রথম দিকে রুটিন মাফিক কাজ করা অসুবিধে হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তীতে সময়কে শাসন করতে তাই মূল অস্ত্র হয়।
৭. শুধু পড়াশোনা নয় কিংবা সারাক্ষণ ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা নয় একজন নির্ভেজাল তরুণের প্রতিদিনের রুটিনে থাকা উচিত খানিকটা খেলাধূলা, খানিকটা আড্ডা কিংবা একটু নেটে দুনিয়াটা দেখে নেয়া ইত্যাদি নানা রুটিনও। মনে রাখতে হবে বন্ধুদের সঙ্গে মজা করে খেতে গেলেও অনেককিছু আবিষ্কার করা যায় যা জীবনের কাজে লাগতে পারে।
৮. শুধু অফিসের সময় কিংবা স্কুল কলেজে পরীক্ষার সময় সময়কে গুরুত্বপূর্ণ ভাবলে জীবনে অনেক ব্যর্থতা দেখা দেবে। সময়কে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অনেকেই বোহেমিয়ান হয়ে উঠে। কিন্তু যারা নিয়ম মেনে চলে তারা অনেক ভাল থাকে। আগামীর শক্তি তাদের জন্যই অপেক্ষা করে।
৯. মনে রাখতে হবে জীবনের সময় যেমন কম তেমনি সেকেন্ডের হিসেবে সময়কে হিসেব করাও অগুণিত। তাই সময় নষ্ট করবেন না। প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান, হিসেব কষে আর জীবনের চাওয়া পাওয়ার বিন্যাসেই সময়কে খরচ করা উচিত। যারা এই জ্ঞানগুলো এতক্ষণ সময় নষ্ট করে গ্রহণ করলেন তাদের ভবিষ্যতে নষ্ট হওয়া সময়ের পরিমাণ কমবে সবচেয়ে বেশি।