সাধারণ নয় সাধারণ জ্ঞান!
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
আমাদের দেশের সরকারি-বেসরকারি চাকরির পরীক্ষায় অনেকের জন্যই খুব মুশকিলের একটি অংশ হলো সাধারণ জ্ঞান। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংক, বিসিএস পরীক্ষাসহ পাবলিক সার্ভিসের যেকোনো স্তরের পরীক্ষাতেই সাধারণ জ্ঞান বড় একটি জায়গা দখল করে রাখে। বেশিরভাগ চাকরির পরীক্ষাতেই দেখা যায় ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক প্রশ্ন থাকে। ফলে সাধারণ জ্ঞান আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে চাকরিপ্রার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
কী থাকে সাধারণ জ্ঞানে
সাধারণ জ্ঞান শব্দটি প্রকৃতপক্ষে বিস্তৃত এক পরিসরকে ধারণ করে থাকে। ইতিহাস, সভ্যতা, চলমান ঘটনাবলী, খেলাধুলা প্রভৃতি সব বিষয়ই সাধারণ জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। আমাদের দেশের চাকরির পরীক্ষায় সাধারণ বিজ্ঞানের বিষয়গুলোও সাধারণ জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত হিসেবেই গণ্য করা হয়। সরকারি চাকরির পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞানকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো—বাংলাদেশ বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিষয়ক সাধারণ জ্ঞানের অংশের মধ্যে রয়েছে প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে সম-সাময়িক কালের ইতিহাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি; বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান ও ভূ-প্রকৃতি; বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস; ভাষা আন্দোলন; বাংলাদেশের কৃষিজ ও খনিজ সম্পদ; বাংলাদেশের জনসংখ্যা, আদমশুমারি, জাতি-গোষ্ঠী-উপজাতি; বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিল্প ও বাণিজ্য; বাংলাদেশের সংবিধান ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা; বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা; বাংলাদেশের জাতীয় অর্জন, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাসমূহ, জাতীয় পুরস্কার, খেলাধুলা, চলচ্চিত্র, গণমাধ্যম প্রভৃতি। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান অংশে রয়েছে বৈশ্বিক ইতিহাস, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, ভূ-রাজনীতি; আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সম্পর্ক; বিশ্বের সাম্প্রতিক ও চলমান ঘটনাপ্রবাহ; আন্তর্জাতিক পরিবেশগত ইস্যু ও কূটনীতি; আন্তর্জাতিক সংগঠনসমূহ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানাদি প্রভৃতি। এ ছাড়া ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি বিষয়ও রয়েছে সাধারণ জ্ঞানের মধ্যে। কাজেই সাধারণ জ্ঞানের পরিধি আসলে অনেক বড়।
সাধারণ জ্ঞানে চাই দীর্ঘমেয়াদি চর্চা
সাধারণ জ্ঞানের বিস্তৃত পরিসরের বিষয়াবলিকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আয়ত্ত্বে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে নিরন্তর চর্চা। সাধারণ জ্ঞানের অনেক বিষয়ের সাথেই আমাদের নিম্নমাধ্যমিক বা মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ালেখার সুযোগ থাকে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পর স্নাতক পর্যায়ে পড়ালেখা করতে গেলে তখন আর সাধারণত নিজের নির্দিষ্ট বিষয়টির বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ থাকে না। আর আমাদের এখানে তো স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ালেখা করতে গেলে ৬/৭ বছর বা কখনও কখনও তার চেয়েও বেশি সময় লেগে যায়। ফলে সাধারণ জ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে কমবেশি সকলেরই বড় ধরনের এক দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। এরপর চাকরির জন্য পরীক্ষা দিতে গেলে তখন আবারও নতুন করে সাধারণ জ্ঞানের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে নিতে হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন সম্পর্ক না থাকার কারণে বিষয়গুলো আয়ত্ত্ব করা তখন অনেকটা দুরূহ হয়ে পড়ে। কাজেই চাকরির পরীক্ষার কথা মাথায় রেখে আসলে স্নাতক পর্যায়েও নিজের পড়ালেখার বিষয়গুলোর সাথে সাথে খুব অল্প অল্প হলেও সাধারণ জ্ঞানের চর্চা করা জরুরি।
যেভাবে হবে প্রস্তুতি
সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতির জন্য বাজারে আলাদা আলাদা চাকরির পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা গাইড বই পাওয়া যায়। আবার সমন্বিত সাধারণ জ্ঞানের গাইড বইয়েরও অভাব নেই। এসব গাইড বই থেকে আপনি চাকরির পরীক্ষার উপযোগী আদলেই পাবেন প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ। পাশাপাশি চলমান ঘটনাবলী ও সংশ্লিষ্ট সাধারণ জ্ঞানের বিষয় নিয়ে প্রতিমাসেই প্রকাশিত হয় প্রস্তুতিমূলক পত্রিকা। কারেন্ট নিউজ বা কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স-গোত্রীয় এসব মাসিক পত্রিকা আপনার প্রস্তুতিকে ঝালিয়ে নিতে সাহায্য করবে। তবে একেবারেই প্রশ্নোত্তর-নির্ভর এসব গাইড বই কিংবা মাসিক পত্রিকা থেকে প্রস্তুতি নেওয়াকে অনেকের কাছেই খুব একঘেয়ে পদ্ধতি মনে হয়। শুধু বিচ্ছিন্ন আকারের এসব তথ্য মনে রাখাও কঠিন বলে মন্তব্য অনেকের। সেক্ষেত্রে সাধারণ জ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তথ্যসমৃদ্ধ প্রবন্ধের বই কিংবা বিভিন্ন ধরনের সংকলন হতে পারে প্রস্তুতির ভালো একটি মাধ্যম। আর এক্ষেত্রে বড় ধরনের সহায় হতে পারে মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক। সেক্ষেত্রে অষ্টম শ্রেণীর সাধারণ বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান, নবম-দশম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূ-গোল, অর্থনীতি প্রভৃতি পাঠ্যপুস্তক আপনাকে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোকে সহজে আত্মীকরণ করার সুযোগ দেবে। কিশোর বয়সীদের উপযোগী করে লেখা এসব বই পড়াটা এই বয়সে এসে অনেকটাই সহজ মনে হয়।
সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হলো সংবাদপত্র। দৈনিক সংবাদপত্র নিয়মিত পাঠ করলে সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতির অনেকটাই আপনি সম্পন্ন করে ফেলতে পারবেন সহজে। তবে আধুনিক এই যুগে এসে ইন্টারনেটও হতে পারে আপনার প্রস্তুতির হাতিয়ার। এখন চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার উপযোগী অনেক ওয়েবসাইটই তৈরি হয়েছে, যেগুলো থেকে আপনার প্রস্তুতি অনেকটাই ভালো হতে পারে। ওয়েবসাইটের বাইরে ফেসবুকেও রয়েছে সাধারণ জ্ঞানের চর্চার অনেক পেজ বা গ্রুপ। আর উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া কিংবা আরও অনেক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি সঠিক তথ্যটি সহজেই খুঁজে বের করতে পারবেন ইন্টারনেট থেকে। সেক্ষেত্রে তথ্যের নির্ভুলতার জন্য ভরসা হোক ইন্টারনেট। আবার স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট পিসির মতো ডিভাইসের জন্যও রয়েছে এই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন। এভাবে ডিজিটাল যুগে আপনি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করেও নিতে পারেন সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতি।