বুয়েটে ভর্তি পরামর্শ
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
আর কিছুদিন পরেই শুরু হতে যাচ্ছে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেই প্রকৌশলী হওয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাচ্ছেন গত সেশনে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকারী শোয়াইব আহমেদ এবং অর্নব
এইচএসসি পাস করার পর প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে দেশসেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। মেধাবীদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বুয়েটে চান্স পেতে হলে শিক্ষার্থীরা অন্যরকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার ধরন সম্পূর্ণ আলাদা। যে কারণে শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে কলেজের পড়াশোনা শেষে অ্যাডমিশনের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে হয়। তাই বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফল করার পূর্বশর্ত হচ্ছে কঠোর অধ্যবসায় আর পরিশ্রম। বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রতিটি রচনামূলক প্রশ্নের জন্য গড়ে প্রায় ৩ মিনিট সময় পাওয়া যায়। অতি অল্প সময়ের মধ্যে সব প্রশ্নের উত্তর করা প্রায় অসম্ভব। তাই যেসব প্রশ্নের সমাধান জানা আছে অথবা সমাধান করতে পারা যাবে বলে মনে হয় সেগুলোর আগে উত্তর করা উচিত।
বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ ভাগ উত্তর করে আসা অনেকটা কঠিন। ৬০০ নম্বরের মধ্যে ৪০-৫০ নম্বরের উত্তর না করেও বুয়েটে চান্স পাওয়া সম্ভব। তাই সব প্রশ্নের উত্তর করে আসব- এই টার্গেট নিয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া এক ধরনের বোকামি। বরং এই টার্গেট রাখা উচিত, আমি যা পারি তা সঠিকভাবে দিয়ে আসব। এই সময়ের সঠিক প্রস্তুতি আর দিকনির্দেশনাই বয়ে আনতে পারে কাঙ্ক্ষিত ফল। না বুঝে অযথা দিন-রাত প্রচুর পড়াশোনা হয়তো অনেকেই করে, কিন্তু দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে আশানুরূপ ফল আসে না।
ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিত এই তিনটি বিষয়ের ওপরই প্রশ্ন করা হয়। এর মধ্যে পদার্থ আর গণিতের প্রশ্নগুলো তুলনামূলক কঠিন হয়। এই বছর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিত প্রতিটি বিষয়ে ২০০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। মনে রাখতে হবে কোনো ধরনের এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে না।
পদার্থবিজ্ঞান :পদার্থবিজ্ঞানের প্রস্তুতির জন্য অন্তত দু’জন লেখকের বইয়ের সব গাণিতিক সমস্যার সমাধান করা উচিত। কোন লেখকের বই পড়বে সেটা মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে শাজাহান-তপন স্যারের বইয়ের সব গাণিতিক সমস্যার সমাধান করা যায়। আবু ইসহাক-তোফাজ্জল হোসেন স্যারের বইটাও গুরুত্বপূর্ণ। পদার্থবিজ্ঞানের প্রথমপত্রে গতিবিদ্যাসহ প্রতিটি অধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ। আর দ্বিতীয় পত্রে চুম্বক, তড়িৎশক্তি, আলো- এসব অধ্যায় থেকে প্রায় প্রতি বছরই রচনামূলক প্রশ্ন থাকে। বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের খুঁটিনাটি বিষয় মনোযোগ সহকারে এবং অবশ্যই বুঝে পড়তে হবে। থিওরিগুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। তাহলে সহজেই মনে থাকবে।
গণিত :গণিতের অনেক প্রশ্নই টেক্সট বই থেকে সরাসরি তুলে দেওয়া হয়। আবার এমনও দেখা যায়, কিছু প্রশ্ন একটু ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। সুতরাং মূল বই ভালোভাবে পড়া থাকলে গণিতে খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কোন লেখকের বই পড়ব, এটা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় ভোগে। ভালোভাবে বুঝে পড়লে যে কারও বই পড়লেই চলবে। তবে গণিতের জন্য আফসার উজ্জামান, হারুনুর রশীদ কিংবা এসইউ আহমদের বইটা কাজে দেবে। বলবিদ্যার অঙ্কগুলো বুঝে করতে হবে, পাশাপাশি ক্যালকুলাসের সূত্রগুলো মনে রাখতে হবে। গণিতে ভালো করার জন্য বেশি বেশি অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই।
রসায়ন :রসায়নের প্রশ্ন যদিও গণিত বা পদার্থবিজ্ঞানের মতো এতটা কঠিন হয় না, তবুও এ বিষয়টাতে অনেক সময় দিতে হবে, বিশেষ করে জৈব রসায়নে। রসায়ন যত বেশি চর্চা করবে, তত ভালো করা সম্ভব। বিক্রিয়াগুলো বারবার লিখে চর্চা করতে হবে এবং ভালো করে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় সব বিক্রিয়া, সংকেত আলাদা খাতায় লিখে নোট করে রাখলে।
তাহলে পরীক্ষার দুএকদিন আগে সেগুলো একপলক চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাবে। রসায়নের জন্য হাজারী স্যারের বইটা দেখা যায়। বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় রসায়ন দ্বিতীয় পত্র থেকে রচনামূলক প্রশ্ন তেমন একটা আসে না। তবে দ্বিতীয় পত্রে প্রচুর বিক্রিয়া, পরীক্ষাগার প্রস্তুতি, শিল্পোৎপাদন, সংকেত, রূপান্তর পড়তে হবে।
লক্ষ্য করে দেখা গেছে, বেশিরভাগ প্রশ্নই করা হয় প্রথম পত্রের প্রথম দিককার অধ্যায়গুলো থেকে। তাই এসব অধ্যায় গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করতে হবে। এতে যেমন পরীক্ষার প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়, তেমনি আত্মবিশ্বাস বাড়ে। বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে মডেল টেস্ট দেওয়া যেতে পারে। এতে নিজেকে যাচাই করে নেওয়া যায়। তবে কোচিংয়ে না গিয়েও নিজেকে যাচাই করা সম্ভব। সাজেশনভিত্তিক পড়াশোনা করা যাবে না। অনেকেই বিভিন্ন গাইড বইয়ের ওপর নির্ভর করে প্রস্তুতি নেয়। এটা আদতে কোনো সুফলই বয়ে আনবে বলে মনে হয় না। মূল বইয়ের কোনো বিকল্প নেই- এ কথাটি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
একটা বিষয় মাথায় রাখা জরুরি, বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় অনেকের খারাপ করার প্রধান কারণ বেশি দুশ্চিন্তা বা আতঙ্কে থাকা। অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন যা পড়েছে তার বেশিরভাগই পরীক্ষার হলে গিয়ে ভুলে যায় এবং কঠিন বিষয়গুলো নিয়ে খুব বেশি সময় নষ্ট করে ফেলে। ফলে সহজ প্রশ্নগুলো সমাধান করে আসতে পারে না। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।কোনোভাবেই পরীক্ষার হলে হতাশ হওয়া যাবে না। সব কিছুতে নিজের ওপর আস্থা থাকা চাই। তাহলেই বুয়েটে চান্স পাওয়া সহজ।