মোবাইল বিল রিচার্জের ব্যবসা
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
বাংলাদেশে চলমান সময়ে স্বল্প বিনিয়োগে অধিক লাভজনক আত্মকর্মসংস্থানমূলক ব্যবসার নাম প্রিপেডি মোবাইল বিল রিচার্জের ব্যবসা। এই ব্যবসা দেশের অন্যান্য স্বল্প আয়ের ব্যবসা থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। একদিকে এই ব্যবসায় ঝুঁকি যেমন কম অন্যদিকে লাভও বেশি। এছাড়া গ্রাহকদের সুবিধার জন্য গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল মোবাইলের মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়। দেশের দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় মোবাইল কোম্পানী বাংলালিংকের মতিঝিল সেলস এন্ড কেয়ার সেন্টারের প্রধান নির্বাহীর তথ্য মতে, শুধু বাংলালিংকের দেশে আড়াই কোটি মোবাইল গ্রাহক রয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের সংখ্যাও। দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল কোম্পানী গ্রামীণফোনের ন্যায় বাংলালিংক, সিটিসেল, রবি, এয়ারটেল, টেলিটক প্রায় সকল মোবাইল কোম্পানীর থানা পর্যায়ে কাস্টমার কেয়ার সেন্টার রয়েছে।
এসব কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি গ্রামগঞ্জে মোবাইল রিচার্জের পোস্টপেইড বিল প্রদানের দোকান বাড়ছে। তবে সেটা চাহিদার চেয়েও অপ্রতুল। স্বল্প বিনিয়োগের ফলে আপনিও এই ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করে স্বাবলম্বী হতে পারে। শুরু করবেন কীভাবে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে ৬টি মোবাইল কোম্পানী রয়েছে। এসব কোম্পানীর দেশের প্রতিটি থানায় কাস্টমার কেয়ার সেন্টার রয়েছে। এসব কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের অধীনে তাদের নিয়োগকৃত এসআর রয়েছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করে স্বল্প বিনিয়োগে উৎসাহী ব্যবসায়ীরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, যশোর, সিলেট, বরিশাল প্রভৃতি বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অবস্থানরত বেকার যুবকদের মোবাইল বিল প্রি-পেইড রিচার্জের ব্যবসায় যোগদান করার সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে যাদের দোকান ভাড়া নেয়ার সামর্থ্য নেই তারা ছোট একটি চেয়ার এবং টেবিল নিয়ে কোন স্থানে বসে শুরু করতে পারেন। তবে থানা পর্যায়ে বেকার যুবকরা তাদের নিজ নিজ অঞ্চলে ছোট একটি দোকান ভাড়া নিয়ে মোবাইল বিল প্রি-পেইড রিচার্জের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
কত টাকা বিনিয়োগ করবেন দেশের ৬টি মোবাইল কোম্পানীর মধ্যে গ্রামীণফোন উপজেলা পর্যায়ে প্রথমে ১০ হাজার টাকা, বিভাগীয় শহরে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে সিম দিয়ে থাকে। ক্রমান্বয়ে বাংলালিংক ১০ হাজার টাকা, রবি ৫ হাজার টাকা, সিটিসেল ৫ হাজার টাকা, এয়ারটেল ৩ হাজার টাকা, টেলিটক ২ হাজার টাকার বিনিয়োগের মাধ্যমে মোবাইল বিল প্রি-পেইড রিচার্জের ব্যবসা শুরু করা যায়। দেখা যায় একজন স্বল্প পুঁজির বেকার তরুণ মাসে ৩০-০৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। মাসে কত টাকা লাভ পাওয়া যাবে একজন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ৩০-৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে মাসে ৮-১০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। দেশের মোবাইল কোম্পানীগুলোর মধ্যে গ্রামীণফোন এক হাজার টাকা লোড করলে ২৭ টাকা ৫০ পয়সা কমিশন দিয়ে থাকে। একইভাবে বাংলালিংক ২৭ টাকা ৫০ পয়সা, টেলিটক ৩০ টাকা, সিটিসেল ৩০ টাকা এয়ারটেল ২৮ টাকা রবি ২৭ টাকা ৫০ পয়সা কমিশন দিয়ে থাকে।
অন্যদিকে দেশের সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দূর করার জন্য গ্রামীণফোনের মাধ্যমে গ্যাসের বিল দেয়া যায়। সেক্ষেত্রে একজন মোবাইল বিল প্রি-পেইড রিচার্জ ব্যবসায়ী গ্যাসের গ্রাহকদের বিল ৪৫০ টাকা থেকে ১৪৯৯ টাকার জন্য ১০ টাকা কমিশন, ১৪৯৯ থেকে পাঁচ হাজার টাকা বিলের জন্যে ১৫ টাকা এবং পাঁচ হাজার টাকা ঊর্ধ্বে বিলের জন্য ২৫ টাকা হারে কমিশন পেয়ে থাকেন। তাতে দেখা যায়, প্রতিদিন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ১০-১২ হাজার টাকা লোড করতে পারলে ৪০০-৫০০ টাকা আয় করতে পারে। এই বিষযে কামরাঙ্গীরচরের নূর টেলিকমের রতন মিয়া জানান, তিনি প্রতিদিন ১২-১৫ হাজার টাকা লোড করে থাকেন এবং প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা আয় করেন। তার আহ্বান, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা মোবাইল বিল প্রি-পেইডের রিচার্জের ব্যবসায় জড়িয়ে নিজকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারেন।
অন্যদিকে মোবিাইল বিল প্রি-পেইডের কমিশন বাড়ানোর দাবি করে যাত্রাবাড়ী-দনিয়ার ব্যবসায়ী খন্দকার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মোবাইল কোম্পানীগুলো প্রতি হাজারে যে টাকা কমিশন দিচ্ছে তা নিতান্তই কম। অনেক সময় দেখা যা, কোন গ্রাহকের মোবাইলে ১০০ টাকা লোড করতে গিয়ে ভুলে অন্য মোবাইলে টাকা চলে যায় তখন যে ক্ষতির শিকার হয়, তা ঐ বিল প্রি-পেইড ব্যবসায়ীকে বহন করতে হয়। তার দাবি মোবাইল কোম্পানীগুলোকে হাজার ৫০-৬০ টাকা কমিশন দিলে এই ব্যবসায় দেশের নি¤œ-মধ্যবিত্ত অনেক বেকার যুবকের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই বিষয়ে গ্রামীণফোন মতিঝিল কাস্টমার কেয়ারের কর্তব্যরত কর্মকর্তার সাথে আলাপ করতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানীর বিষয় আমরা অন্য কিছু বলতে চাই না।