পরীক্ষা এক আতঙ্কের নাম
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
‘পরীক্ষা, আসলে এক আতঙ্কের নাম’—এমনটাই ভাবে সাফায়ার হোসেন। ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। তার ভাষায়, ‘পরীক্ষা এলেই তো হাত-পা কাঁপা শুরু হয়। প্রশ্ন সহজ হোক বা পরীক্ষার প্রস্তুতি দারুণ হোক—এই আতঙ্ক থেকে বের হওয়ার সম্ভবত কোনো উপায় নেই।’ আসলেই কি পরীক্ষা মানে আতঙ্ক? পরীক্ষার নামে ভয়ে কাঁপে কেন শিক্ষার্থীরা?
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব বিজনেস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স-এর ২০১১ সংখ্যার একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে, পরীক্ষাভীতির কারণে একজন শিক্ষার্থী ৪৪ থেকে ৫৫ শতাংশ কম নম্বর পেয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা ৪৬ শতাংশের কম হলেও স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই হার বেশি। ২০১০ সালের হিসাবে ৬৮ শতাংশ স্কুলশিক্ষার্থী পরীক্ষাকে ভয় পায়। ১০ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বেশি থাকে বলে মনে করেন গবেষকেরা।
অভিভাবক আর শিক্ষকদের চাপকেই ব্রিটিশ সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির গবেষকেরা পরীক্ষাভীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ মনে করেন। যুক্তরাজ্যের এজ হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের মনোবিদ ডেভ পুটওয়াইন স্কুলের পরীক্ষাভীতির জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিন রকম প্রভাবের কথা তাঁর গবেষণা-নিবন্ধে লিখেছেন। পরীক্ষা যতই সামনে আসে, শিক্ষার্থীদের আচরণগত পরিবর্তন (যেমন মেজাজ রুক্ষ আর খিটখিটে হয়ে যাওয়া), তেমনি মানসিকভাবেও তারা দুর্বল আর ভয়ের মধ্যে থাকে। এ কারণে এসব শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও পরীক্ষা দিতে ভয় পায়, অনেকটা আজীবনের জন্যই এই ভয়টা মনের মধ্যে থেকে যায়।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকো সোশ্যাল কাউন্সেলর ও শিক্ষক অ্যানি আন্তনিয়া বাড়ৌ মনে করেন, শিক্ষার্থীদের মনে একবার পরীক্ষাভীতি ঢুকলে এ থেকে মুক্তি পাওয়াটা বেশ কঠিন। অভিভাবক আর শিক্ষকদের এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা উচিত। তিনি বলেন, যতই পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের চাপ দেওয়া হবে, ততই তাদের মনের ওপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
আতঙ্ক কাটানোর উপায়
* শিক্ষার্থীর কোন কোন বিষয়ে ভয় লাগে, তা নিয়ে শিক্ষক আর অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কথা না বললে আতঙ্ক আরও বাড়বেই।
* পরীক্ষার আগের কয়েক সপ্তাহ নিজেকে পরীক্ষা নিয়ে উৎসাহমূলক কথা বলে অনেক সময় ভয় কাটানো যায়। নিজেকেও বোঝাতে হবে যে পরীক্ষা আসলে ভীতিকর কিছু নয়।
* পরীক্ষা সামনে, তাই অনেকে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেয়। এমনটা কখনোই করা উচিত নয়। পড়ার জন্য সময় বেশি দিলেও একটু হলেও খেলাধুলা-ব্যায়াম আর পুষ্টিকর খাবার-দাবার খাওয়ার দিকে মন দিতে হবে।
* পরীক্ষার সময় মা-বাবা সারাক্ষণ পড়ার টেবিলে সন্তানকে দেখতে পছন্দ করেন। জোর করে শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে না বসিয়ে একটু অবসর সময় কাটানোর সুযোগ দিন।
* কোন বিষয় কখন শেষ করতে হবে, কোন পড়া কখন পড়তে হবে, তার একটি দৈনন্দিন রুটিন করে ফেললে পরীক্ষার পড়া নিয়ে আতঙ্ক কেটে যায়।
* পরীক্ষা দেওয়ার পরে অযথা পরীক্ষা খারাপ কিংবা ভালো হয়েছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার করার অভ্যাস ছাড়তে হবে।
* পরীক্ষা শেষে বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কোথাও ঘুরতে যাওয়া কিংবা রেস্তোরাঁ-হোটেলে খেতে গেলে নিজেকে উজ্জীবিত করা যায়।
* পরীক্ষার পরে ফলাফল নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তা না করে পরের পরীক্ষাগুলো যেন ভালো হয়, তার জন্য পড়াশোনার চেষ্টা করতে হবে।