মেডিকেলের লেখাপড়া
- ক্যারিয়ার ডেস্ক
স্বপ্ন ডাক্তার হব। পথটা বড্ড এবড়োখেবড়ো। সামাল দিতে হবে পড়াশোনার অতিকায় ঝক্কি। ডাক্তার হওয়ার রুটিন সম্পর্কে ধারণা থাকলো আপনার জন্য…
বিষয়
প্রথম পর্যায় : দেড় বছর, প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষ
পাঠ্য বিষয় : তিনটি—অ্যানাটমি, ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রি।
দ্বিতীয় পর্যায় : দুই বছর। তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষ।
পাঠ্য বিষয় : পাঁচটি—ফার্মাকোলজি, প্যাথোলজি, ফরেনসিক মেডিসিন অ্যান্ড টক্সিকোলজি, কমিউনিটি মেডিসিন, মাইক্রো বায়োলজি।
তৃতীয় পর্যায় : দেড় বছর (পঞ্চম বর্ষ)
পাঠ্য বিষয় : মেডিসিন, সার্জারি ও গাইনিকোলজি।
পরীক্ষা পদ্ধতি
আইটেম : এটি ১০ নম্বরের একটি মৌখিক পরীক্ষা। শিক্ষক তাঁর লেকচারের ওপর শ্রেণিকক্ষে এ পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। আইটেমকে মেডিক্যাল পাসের ‘মৌলিক কণা’ বললেও ভুল হবে না। প্রতিটি বিষয়কে ছোট ছোট আইটেমে ভাগ করে পড়ানো হয়। পাস নম্বর ছয়। না পেলে শিক্ষার্থীকে ওই আইটেমের পরীক্ষা আবার দিতে হবে। তাই প্রতিদিনের নিয়মিত মৌখিক পরীক্ষা হলেও এটাকে অবহেলা করা যায় না। যত দিন ক্লাস থাকবে তত দিন আইটেম থাকবে। এই নিয়ম চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত। শেষ পর্যায়ে আইটেমে কিছুটা শিথিল হয়।
নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে যে তাহলে আচমকা অসুস্থ হলে কিভাবে সেটা পুষিয়ে নেব? মেডিক্যাল জীবনে আপনাকে সব আইটেম শেষ করতেই হবে। এ বিষয়ে তেমন কিছু করার নেই। তবে জরুরি প্রয়োজনে যদি অনুপস্থিত থাকতেই হয়, তাহলে শিক্ষকের কাছ থেকে আইটেম শেষ করার জন্য সময় নিতে হবে। শিক্ষক তখন দিনক্ষণ ঠিক করে দেবেন। ঝুলে থাকা আইটেম তাড়া করবে পেশাদার পরীক্ষার আগ পর্যন্ত।
কার্ড : সময় ও গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে এই পরীক্ষা নেওয়া হয়। একটি কার্ডের অধীনে অনেক আইটেম থাকে, যা পাস না করলে কার্ড ফাইনালে বসা যায় না। কার্ড ফাইনাল পরীক্ষা হবে কি না এটা নির্ভর করে কার্ডের গুরুত্বের ওপর। যেমন এনাটমি বিষয়টিকে ছয়টি কার্ডে ভাগ করা হয়েছে। সব কয়টি কার্ডেই কার্ড ফাইনাল হয়। তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষে গেলে কার্ড পরীক্ষাটা জরুরি নয়। তবে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার মুখোমুখি হতেই হবে। এ পরীক্ষায় পাস করতে না পারলেই বিপদ। পেশাগত পরীক্ষায় বসা যাবে না। পিছিয়ে পড়তে হবে অনেকটা সময়।
টার্ম ফাইনাল : একটি টার্ম শেষ হলে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা। এতে পাস না করলে পেশাগত পরীক্ষা বা প্রফ-এ বসা যাবে না। টার্ম ফাইনালে বসতে হলেও সব কয়টি আইটেম শেষ করতে হবে।
পেশাগত পরীক্ষা : ডাক্তার হওয়ার মূল পরীক্ষা। তিনটি পেশাগত পরীক্ষা হয়। টার্ম শেষ না হলে পেশাগত পরীক্ষায় বসা যায় না।
কলেজ পর্যায়ের পাঁচ বছরকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। প্রথম পর্যায় দেড় বছর, দ্বিতীয় পর্যায় দুই বছর, তৃতীয় ও শেষ পর্যায় দেড় বছর। ১১টি বিষয়কে এই পর্যায়ে ভাগ করে পড়ানো হয়। প্রথম পর্যায়ে তিনটি বিষয়, দ্বিতীয় পর্যায়ে পাঁচটি ও তৃতীয় পর্যায়ে বাকি তিনটি বিষয় পড়ে স্নাতক ডিগ্রি নিতে হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের আটটি বিষয় মৌলিক বিষয়। তৃতীয় পর্যায়ের তিনটি বিষয় ‘ক্লিনিক্যাল’। প্রতিটি পর্যায় আবার কতগুলো টার্মে বিভক্ত। টার্মকে ভাগ করা হয় কতগুলো কার্ডে। আর কার্ডকে ভাগ করা হয় আইটেমে।
কলেজভিত্তিক পরীক্ষাগুলোয় ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পেশাগত পরীক্ষার জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। পাঁচ বছরে তিনটি ভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মেডিক্যাল স্নাতক পড়ুয়াদের একটি পরীক্ষা হয়। তাকেই বলে প্রফেশনাল পরীক্ষা বা প্রফ। প্রথম প্রফ, দ্বিতীয় প্রফ, তৃতীয় প্রফ—এই তিনটি পেশাগত পরীক্ষায় মেডিক্যাল স্নাতক হওয়ার প্রধান পরীক্ষা।
রোগ ও রোগীর সঙ্গে ভাবি ডাক্তারের পরিচয় হয় তৃতীয় বর্ষ থেকে। এ সময় নিয়মিত লেখাপড়ার সঙ্গে শিক্ষার্থীকে ওয়ার্ডে গিয়ে রোগী দেখতে হয়। রোগতত্ত্ব বা প্যাথলজি পড়ার জন্য রোগী ও রোগের সঙ্গে থাকতেই হবে। শিক্ষার্থীরা বইয়ের সঙ্গে বাস্তবের মিল দেখবে এ পর্যায়ে। অস্ত্রোপচারের সঙ্গে পরিচয় করানোর জন্য অপারেশন থিয়েটারেও নিয়ে যাওয়া হয়। এখানেও আছে উপস্থিতির বিষয়। ওয়ার্ড ও ক্লাসের উপস্থিতি ৭৫ শতাংশ না হলে পেশাদার পরীক্ষায় বসা যাবে না।
ডাক্তারি লেখাপড়ার বাইরে নৈতিকতার শিক্ষাও মেডিক্যালে শেখানো হয়। মাঠপর্যায়ে রোগীদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হবে এবং ডাক্তার হিসেবে সমাজের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য কী, সেসবও শেখানো হয় শ্রেণিকক্ষে।